স্বাধীনতা, সংবিধান, রাষ্ট্র ও জাতির জনক নো বডি ক্যান টাচ দেম

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বিসিএসের সব ক্যাডারদের-সরকারি কর্মকর্তা ফোরাম- এক সমাবেশের আয়োজন করে যাতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। সভায় পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদসহ বিসিএস এর সবগুলোর ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবসহ প্রায় সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা যোগ দেন।
আহমদ কায়কাউস তার বক্তব্যে বলেন, আমরা উনত্রিশটি ক্যাডার সার্ভিসের সবাই আজ অঙ্গীকার করছি যে জাতির পিতার অসম্মান আমরা হতে দিবোনা। বঙ্গবন্ধুকে ধর্মের সাথে মিলিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, জয় বাংলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান। আমরা সবাই কেন বক্তৃতার শেষে জয় বাংলা বলবোনা। আশা করি আজ থেকেই শুরু করবো এবং প্রয়োজনে সরকারের অনুমতি নিবো।
‘জাতির পিতার সম্মান, রাখবো মোরা অম্লান’ স্লোগান দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই সমাবেশ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এখনো এই মহান নেতাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। তারা হুংকার দিয়ে যাচ্ছে যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ওপর কোনো রকমের আঘাত, কোনো অপমান মেনে নেওয়া হবে না, সহ্য করা হবে না।
এদিকে সংবিধান ও রাষ্ট্রের ওপর আঘাত কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তার ওপর হামলা মানে সংবিধানের ওপর হামলা। স্বাধীনতা, সংবিধান, রাষ্ট্র ও জাতির জনক- নো বডি ক্যান টাচ দেম। আমরা তাদের মোকাবেলা করবো। বঙ্গবন্ধু দেশ, পতাকা, মানচিত্র দিয়েছেন। তার ওপর হামলা সংবিধানের ও রাষ্ট্রের ওপর হামলা। রাষ্ট্র অবশ্যই বিধিবিধান অনুযায়ী কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে।
বিসিএস অডিট ও অ্যাকাউন্টস এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম সারোয়ার ভুঁঁইয়া বলেন, “জাতির পিতাকে যারা অসম্মান করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করছি।
বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফজলে হায়াত কায়সার বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতোনা, আর বাংলাদেশ না হলে এত ক্যাডার সার্ভিস হতোনা। ভাস্কর্য যারা ভেঙ্গেছে তারা দেশবিরোধী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিসিএস শুষ্ক ও আবগারি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাস্টমস কমিশনার বলেন, এখনো এ দেশে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা করছেন। ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, অনেক মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে। আমরা কি তাহলে বেশি মুসলমান হয়ে গেছি। আসলে তারা স্বাধীনতার প্রতি আঘাত করতে চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু- এসব নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই।
বিসিএস তথ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা থাকবে তাদের বিপক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের কণ্ঠ সোচ্চার থাকবে। ভাস্কর্য মোটেও ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি শিল্পকর্মের অংশ। বাংলাদেশ এটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এতো কথা কেন। এটি হলো রাজনীতি। কর্মকর্তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে অবস্থান থাকতে হবে।
বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের পক্ষে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, যারা বাংলাদেশের চাকা পেছনে নিতে চায় সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে বেছে নিয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে। আমরা এটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারিনা।
এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের মতো জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে কোনও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং স্বাধীনতাবিরোধী ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাগণ বঙ্গবন্ধুর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পুনরায় শপথ নেন। বক্তারা বঙ্গবন্ধু ও দেশের বিরুদ্ধে অপচেষ্টাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।


বিজ্ঞাপন