ইউনানীর নিয়োগ পরীক্ষা কেন বাতিল হবে না, জানতে চান হাইকোর্ট

আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) নিয়োগ পরীক্ষা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।


বিজ্ঞাপন

পদগুলো হলো- মেডিকেল অফিসার (ইউনানী, আয়ুর্বেদিক) সহকারী রেজিস্ট্রার (আয়ুর্বেদিক, ইউনানী), প্রভাষক (ইউনানী, আয়ুর্বেদিক) ইনডোর মেডিকেল অফিসার (ইউনানী, আয়ুর্বেদিক) ও ড্রাগ সুপারিন্টেনডেন্ট (আয়ুর্বেদিক)।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন ও তার সাথে ছিলেন মো. ফারুক আহমেদ।

এমসি শাখার আওতাধীন শূন্যপদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ৩১ অক্টোবর। ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায় গত ২ নভেম্বর। ওই পরীক্ষা ও ফলাফলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন প্রার্থীরা। এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

রিটকারী আইনজীবী ফারুক জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) শাখায় দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলমান থাকলেও সংস্থার পক্ষে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় পুরো শাখা এখন সিন্ডিকেট চক্রের কবলে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে চুক্তি প্রাপ্ত প্রার্থীদের উত্তীর্ণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবরে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, মেধাবী ও উপযুক্ত পরীক্ষার্থীরা মেধা যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সফলতার সাথে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে পারেন।

আইনজীবী ফারুক জানান, গত ১৪ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার এএমসি শাখায় মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এমসি শাখার আওতাধীন শূন্যপদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা গত ৩১ অক্টোবর হয়। আর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২ নভেম্বর। এর পর ওই পরীক্ষা ও ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে সিরাজগঞ্জের মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মশিরন বেগমসহ ১৯ জন প্রার্থী গত ১০ ডিসেম্বর রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।

প্রকাশিত ফলাফলের বিষয়ে রিটকারীদের দাবি, যারা মেধাবী এবং অভিজ্ঞ তারা অকৃতকার্য হয়েছেন। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে পায়, একটি সিন্ডিকেট চক্র কারসাজি ও কারচুপি করে পছন্দের প্রার্থীদের উত্তীর্ণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে স্থায়ীভাবে রেজিস্ট্র্রেশন করার নিয়ম থাকলেও রেজিস্ট্র্রেশনবিহীন পরীক্ষার্থীদের আবেদনপত্র গ্রহণ ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও যাচাই-বাছাইকরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তাদের দাবি, নিয়োগ পরীক্ষায় লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে পছন্দের পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে এবং মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার অধিকার থেকে কারসাজির মাধ্যমে বঞ্চিত করা হয়েছে, অথচ কর্মকমিশন বা অন্য নিয়োগ পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট সিলেবাস এবং মানবণ্টন থাকলেও ওই পরীক্ষায় কোনো মানবণ্টন ছিল না। এমনকি ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক বিষয়াদি পাশ কেটে বাহ্যিক বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করে পছন্দের পরীক্ষার্থীদের সরবরাহের মাধ্যমে মেধাবী ও যোগ্য পরীক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

রিটকারীদের দাবি, প্রশ্নপত্র ও মানবণ্টনে কারসাজি আর কারচুপি করে অর্থের বিনিময়ে চুক্তি প্রাপ্ত প্রার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে। বঞ্চিত ও মেধাবী প্রার্থীদের দাবি একটি চক্রের কারচুপির সমন্বয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রকাশিত ফল বাতিল করে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ কমিটির তত্ত্বাবধায়নে নির্দিষ্ট সিলেবাস যুক্ত প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হোক। যাতে মেধাবী ও উপযুক্ত পরীক্ষার্থীরা মেধা যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সফলতার সাথে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে পারেন।