রাজধানীর ৫৯ এলাকার ওয়াসার পানি বেশি দূষিত

আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকার ৫৯টি এলাকার ওয়াসার পানি বেশি দূষিত বলে আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াসার দেয়া প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে ঢাকার ১০টি জোনে ৫৯ এলাকায় ওয়াসার পানি বেশি দূষিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১ নম্বর জোন: যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, ধোলাইরপার ও মাতুয়াইল।
২ নম্বর জোন : বাঘলপুর, লালবাগ, বকশিবাজার ও শহীদনগর।
৩ নম্বর জোন: জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতেরগলি ও মোহাম্মদপুর।
৪ নম্বর জোন : শেওরাপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর।
৫ নম্বর জোন : মহাখালী ও তেজগাঁও।
৬ নম্বর জোন : সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ ও পরিবাগ।
৭ নম্বর জোন : কদমতলী, দনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনির আখড়া, কোনাপাড়া ও মুসলিমনগর
৮ নম্বর জোন : বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ও ভাটারা।
৯ নম্বর জোন : উত্তরা, খিলক্ষেত, সায়েদাবাদ, মোল্লারটেক ও রানাগোলা।
১০ নম্বর জোন : কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর, কচুক্ষেত ও পল্লবী।
বুধবার (১৫ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীর ওয়াসার পানির ১০৬৫টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা দরকার। প্রতিবেদনটি আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু হাইকোর্টে দাখিল করবেন বলে জানানো হয়।
এর আগে গত সোমবার (১৩ মে) ঢাকা ওয়াসার কোন কোন এলাকার পানি সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ, তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বুধবারের (১৫ মে) মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
সোমবার ঢাকা ওয়াসার অনিরাপদ পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তখন আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার ১১টি পানির জোন রয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে দুই বোতল পানি নিয়েই তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু কোনো কথাই শুনছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে।
শুনানিকালে আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদের কাছে অনিরাপদ পানি-সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বেশকিছু প্রতিবেদন আদালতের কাছে তুলে ধরেন তিনি। ওইসব প্রতিবেদনে ঢাকার ১৬টি এলাকার ওয়াসার পানি ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী বলে তথ্য উঠে আসে।
এরপর পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে খরচ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সাত দিন সময় চাওয়া হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বুধবারের (১৫ মে) মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত বলেন, ‘বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে তলব করা হবে।’
এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *