চোখেমুখে খুশির ঝিলিক!

এইমাত্র জাতীয়

উন্নয়নের বিস্ময় বঙ্গবন্ধু টানেল
অনেকে বদলে ফেলেছেন ভাগ্য
মানুষের মধ্যে বাড়ছে কৌতূহল
চট্টগ্রাম হবে সাংহাইয়ের আদলে

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম কর্নফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই টানেল নির্মাণে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেইনের এ টানেল হবে দুই টিউব সম্বলিত। পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০মিটার এবং পূর্বে চার হাজার ৯৫২ মিটার অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে।
সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এ ধরণের পথ দেশের ইতিহাসে প্রথম। কিন্তু এই সুড়ঙ্গপথটি থেকে সবচেয়ে বেশি সুফল পেতে হলে একটি নতুন সড়ক তৈরি করতে হবে। এটা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পরিষ্কার, কোনো দ্বিমত আছে বলে জানা যায় না। কিন্তু সুড়ঙ্গপথের কাজ অর্ধেক শেষ হলেও সেই রাস্তাটির ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অত্যন্ত জনগুরুত্বসম্পন্ন এই সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে তা হবে দুঃখজনক।
জানা গেছে, পানির তলার সুড়ঙ্গপথটি কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পরই এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই বঙ্গবন্ধু টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু এর সবটারই সার্থকতা চূড়ান্ত অর্থে প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণের ওপর নির্ভর করবে।
তবে দেশের এই প্রথম টানেল নিয়ে দিন দিন কৌতূহল বাড়ছে মানুষের। বিশেষ করে দক্ষিণ পতেঙ্গা আর আনোয়ারা-কর্ণফুলী অংশের মানুষের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক।
পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষও উঁকিঝুঁকি মারছেন ‘টানেলের মুখ’ এলাকায়। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের টাকা, চাকরি পেয়ে, শ্রমিকদের ঘরভাড়া দিয়ে আর ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য করে অনেকে বদলে ফেলেছেন ভাগ্য।
পতেঙ্গার নিউ সি বার্ড দোকানের মালিক মো. ইমরান বললেন, আগে অজপাড়া গাঁয়ের মতো ছিল আমাদের এলাকাটি। এখন টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর আউটার রিং রোডের উসিলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। জমির দাম বেড়েছে। দক্ষিণ পতেঙ্গায় আগে ২-৩ লাখ টাকায় পাওয়া যেত ২০ গ- জমি। এখন সড়কের পাশে ১ গ-া জমি বিক্রি হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। ভেতরের দিকে হলে ১০ লাখ টাকা।
সাবের স্টোরের মালিক মো. আলম। ২০০০ সাল থেকে দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় দোকান দিয়েছেন তিনি। বললেন, এখন আউটার রিং রোড দিয়ে আধঘণ্টায় নিউমার্কেট যেতে পারি। আগে এটা ছিল অকল্পনীয়। টানেলের মুখ এলাকাটি ছিল জঙ্গলের মতো, ক্ষেতখামার ছিল। বদলে গেছে আমূল।
টানেলকে ঘিরে শুধু দক্ষিণ পতেঙ্গা নয়, বদলে যাচ্ছে কর্ণফুলী-আনোয়ারা এলাকাও। সেখানে টানেলের মুখ থেকে নির্মিত হচ্ছে চার লেনের নতুন একটি সংযোগ সড়ক। পুরোদমে চলছে সড়কে মাটি ভরাটের কাজ।
সিইউএফএল ও ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি এলাকায় তৈরি হচ্ছে ৭২৭ মিটারের ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে মাটি ভরাটের কাজ তদারকি করছেন ঠিকাদারের একজন প্রকৌশলী। তিনি জানান, টানেলের মুখ থেকে আনোয়ার ছাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত চার লেনের প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হচ্ছে। ফ্লাইওভারের পিলারের কাজ শেষ, গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। ‘কে-৬’, ‘কে-৭’ অংশে সড়কের মাটি ভরাটের কাজও প্রায় শেষ। এ সড়কে একটি আন্ডারপাসও থাকবে। সব মিলে পুরোদমে কাজ চলছে।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দুই টিউবের এই টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
ইতোমধ্যে টানেলের ৬১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ টানেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন এ টানেল দক্ষিণ এশিয়ার নদীর নিচে প্রথম টানেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহর চীনের সাংহাই নদীর মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেল গড়ে উঠবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, টানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই টিউব নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ২০২২ সালে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা প্রকল্পটির শেষ করতে পারবো।


বিজ্ঞাপন