দায়মুক্তির হাস্যকর সংস্কৃতি

সাহিত্য

মোস্তাফিজুর রহমান : শুধুমাত্র রুটিরুজি ও জীবন বাচানোর প্রশ্নে নিরুপায় হয়ে বা উপোস পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু মলিনতা দূর করার প্রয়াসে নিন্ম ও অনিশ্চিত আয়ের ভাগ্যবিড়ম্বিত কিছু মানুষ অনেকে ক্ষেত্রে ছোটখাট লোভে পড়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকে, যা পরিস্থিতি বিবেচনায় গুরুতর অপরাধ হিসেবে গন্য না হলেও আমরা এটাকে আকাশচুম্বী অন্যায় হিসেবে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সঠিক আইনের প্রয়োগ করার জন্য উঠেপড়ে লাগি কিন্তু যারা স্বাবলম্বী ও টাকার বিছানায় ঘুমিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করার পরও বিভিন্নক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম সংঘটিত করে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করছে, ব্যক্তির স্বার্থ ছিনিয়ে নিয়ে বিভিন্নভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করছে, অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করছে তাদের অপরাধের মাত্রা আকাশচুম্বী হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়ার আওয়াজটা তুলনামূলক কম। সমজাতীয় অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের বিবেকের এই ডুয়েল এক্টিং জঘন্য নয় কি! এটাও ম্যাসিভ অফেন্স।


বিজ্ঞাপন

আমরা সকলেই জানি নিরাপত্তার প্রশ্নে বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিবাদের ভাষাটা চাপিয়ে রাখে কিন্তু ঘাপটি মেরে বসে থাকা সেই ব্যক্তিরাই দুর্বল ও অসহায় মানুষের ক্ষুদ্র অপরাধের বিচার করার জন্য দাপটশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দুর্বলের প্রতি যাচ্ছেতাই ইনজাস্টিস করে বিবেকের দায়মুক্তি হিসেবে চালিয়ে দেয়। মনে প্রশ্ন জাগে, তারা কারা! যারা বিবেকের দায়মুক্তি নিতে একই পেয়ালায় এলকোহল ও কাচাপাতির চায়ের অনুভূতি নিচ্ছে! বাহ আমাদের বিবেক আর দায়মুক্তির প্রক্রিয়া চমৎকারতো! চরম ঘৃনা প্রদর্শন করেই শেষ।

সহায়সম্বলহীন ও ক্ষমতাহীন একজন মানুষের ক্ষুদ্র অপরাধের সঠিক বিচার করে মনে হয় আমরা সিন্ধু বিজয় করে ফেলেছি। অথচ ক্ষমতাধর ও বিত্তশালী অনেকের মাত্রাতিরিক্ত অপরাধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের চরম ক্ষতিসাধন হলেও উপযুক্ত বিচারব্যবস্থার সংস্কৃতি তুলনামূলক এতটা গতিশীল নয়, যতটা দুর্বলের ক্ষেত্রে তড়িৎ গতিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করলেও প্রক্রিয়ার মারপ্যাচে ও অপরাধীদের মুক্ত করার জন্য অনেক বিজ্ঞ ও ক্ষমতাধর মানুষ বিবেকের দায়বদ্ধতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে অপরাধীদের বাচানোর জন্য নোংরা সংস্কৃতির সাথে আলিঙ্গন করে পরবর্তী অপরাধ সংঘটিত করার জন্য তারাই অনুপ্রেরণার যোগানদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখে।

ম্যাসিভ অফেন্সেকে যারা সমর্থন করে অপরাধীকে বাচানোর প্রক্রিয়ায় সরব হয়, তারাই অপরাধ ও অনিয়মের সুতিকাগার বলেই প্রতীয়মান। এরাই রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বনাশ করে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন ব্যবস্থাকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়না, প্রশ্রয় দিচ্ছে কিছু অন্ধ বিবেকসম্পন্ন মানুষ, যারা স্বার্থের বিনিময়ে অন্যায় করার প্রবণতাকে স্থায়ী সংস্কৃতি হিসেবে রূপায়ণের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। এরা না চায় দেশের উন্নয়ন, না চায় শুদ্ধাচার। এরাই দেশের প্রকৃত শত্রু হিসেবে বিবেচিত।

তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অপরাধের বিরুদ্ধে শুদ্ধাচারের যতটুকু সংস্কৃতি এখনও চলমান আছে, সেটাকে সমস্ত পর্যায়ে আরও বেগবান ও নিরপেক্ষতা দৃশ্যমাণ করার লক্ষ্যে সামাজিক সোচ্চারতা প্রয়োজন। তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র সকল ক্ষেত্রে সুবিধাজনকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। গুরুতর অপরাধীকে বাচানোর ক্ষেত্রে যারা অগ্রণী ভূমিকায় দৃশ্যমাণ হবে, তাদের বিরুদ্ধেও সম আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করলে ক্রমান্বয়ে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। সকলক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকাই কেবল বিবেকের দায়মুক্তি দেয়, ডিসক্রিমিনেশন কেবল বিবেককে রুগ্ন করে তোলে।

ফটো ক্রেডিট : বন্ধু আলী ইমাম।
লোকেশন : ব্যারাইন্না লেক, কাপ্তাই।