ক্রস ফায়ারে মৃত্যু বই দোকানীর!

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ২১ জানুয়ারি ২০২১ এ রাজধানীর হাজারীবাগ থানার অধীনে সনাতনগড় জামে মসজিদ এলাকায় ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছেন র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) এর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নীলক্ষেত এর বইয়ের দোকানের কর্মচারী মীর আলতাফ উদ্দিন ওরফে চান মিয়া। র‌্যাব বলছে, নিহত মীর আলতাফ উদ্দিন বংশাল থানায় দ্বায়েরকৃত একটি চাদাঁবাজির মামলার আসামী এবং তাকে নিয়ে হাজারীবাগে অভিযান চালনার সময় তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে তিনি নিহত হন। অপরদিকে পরিবারের দ্বাবী, আলতাফ উদ্দিনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো এবং মুক্তিপণের ১০ লক্ষ টাকা না দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার কলি জানান, গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে, র‌্যাব-০২ এর একটি দল মীর আলতাফ উদ্দিনকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় কারণ জানতে চাইলে, র‌্যাবের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সুজাত আলী মন্ডল নিহত এবং তার স্ত্রী কে জানান, মীর আলতাফ উদ্দিন এবং তার চাচাতো ভাই মীর মেসবাহ উদ্দিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আবু সাঈদ ওরফে তারেক এর বংশাল থানায় দ্বায়েরকৃত চাদাঁবাজি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বংশাল থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মীর আলতাফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো এবং র‌্যাবের অভিযানের সময় তিনি পালানোর চেষ্টা করলে ক্রস ফায়ারে মারা পড়েন। বংশাল থানার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে র‌্যাব কেনো অভিযান পরিচালনা করলো এবং ক্রস ফায়ারে মারা যাবার পরেও কেনো হত্যা মামলা নেয়া হলো না, এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ‘ওপর মহলের নির্দেশ ছিলো’ মন্তব্য করে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে মীর আলতাফ উদ্দিন এর র‌্যাবের হাতে গেপ্তার হওয়া এবং ক্রস ফায়ারে নিহত হবার ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকার বই ব্যবসায়ীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক ব্যবসায়ী জানান, ‘আলতাফ খুবই ভালো মানুষ ছিলেন, তার কারও সাথে কোনো বিবাদ ছিলো না। শুনেছি তার এক ভাই কানাডা থাকেন, যে বেশ কয়েক বছর আগে কাউন্সিলর তারেক এর হাতে অপহৃত হন, পরবর্তীতে মুক্তিপণ দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। ওই ভাই, তার পরিবার আর আলতাফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে নাকি তারেক চাদাঁবাজির মামলা করেছিলেন। র‌্যাব ওই মামলাতেই তাকে তুলে নিয়ে ক্রস ফায়ারে দিয়ে দিসে।’

অপর এক ব্যবসায়ী নিহত মীর আলতাফ উদ্দিন সম্পর্কে বলেন, ‘আলতাফ এক দোকানে ১১ বছর ধরে কাজ করছেন, হাসিখুশি সাধারণ মানুষ ছিলেন, কখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শুনি নাই, যে মানুষ প্রতিদিন বাসা থেকে হেটে নীলক্ষেত এসে দোকানদারি করতো সে কিভাবে কাউন্সিলর তারেক এর মতো সন্ত্রাসীর কাছে চাদাঁ চাইতে পারে? মিথ্যা মামলা দিয়ে একটা ভালো মানুষকে তুলে নিয়ে মেরে ফেললো’।

গ্রেপ্তারের ৪ দিনেও কেনো আলতাফ উদ্দিনকে কোর্টে হাজির করা হয়নি, এ ব্যাপারে র‌্যাব – ২ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সুজাত আলী মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোর্টে নেয়ার আগে অনেক কিছু জানার ছিলো’, বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

এর আগে গত ডিসেম্বরের ১০, ২০২০ এ র‌্যাব ০২ এর হেফাজতে থাকা অবস্থায় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী বজলুর রহমান একই ভাবে ক্রস ফায়ারে নিহত হন। উল্লেখ্য, যে চাদাঁবাজি মামলায় বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিলো, বংশাল থানায় দ্বায়েরকৃত ওই মামলার বাদীও ছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এর ৩৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ আবু সাঈদ ওরফে তারেক।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর তারেকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত মীর আলতাফ উদ্দিনের প্রতি সম্মান জানাতে নিলক্ষেত বই ব্যবসায়ী সমিতি আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০২১ অর্ধেক বেলা বই মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।