এখন আর কেউ ঘর কেড়ে নিতে পারবে না

জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালে। সেই ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শোলমারী নদীর চরে বসতি স্থাপন করা জোসনা বেগম, সাহিদা বেগম, ফরিদা বেগমরা। নদীর চরে বসবাস করলেও কখন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারাতে হয়, তাদের মধ্যে সেই ভয় কাজ করেছে প্রতিনিয়িত। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাদেরকে।
কিন্তু তাদের সেই চিন্তা দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদেরকে দিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। যাদের জমি কেনা তো দূরের কথা, ঘর তোলার সামর্থ্য ছিল না, তারা হঠাৎই পেয়ে গেলেন মাথা গোঁজার আপন ঠিকানা। তাইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে একটুও কার্পণ্য করেননি তারা।
এমনই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করে দুই শতাংশ জমিসহ একটি নান্দনিক ঘর পাচ্ছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অসহায় হতদরিদ্র জোসনা বেগম, সাহিদা বেগম, ফরিদা বেগম, রেবেকা বেগমসহ ১৫০ জন। আইলার পর যাদের স্থান হয়েছিল নদীর চরে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প আশ্রয়ণ-২- এর আওতায় মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে বেজায় খুশি তারা।
স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া স্বামী পরিত্যক্তা সাহিদা বেগম বলেন, ‘আইলার পর সব হারিয়ে শোলমারী নদীর এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে দিন মজুরের কাজ করে কোনোরকমে দিন কাটছিল। নদীর চরে এই জায়গাটুকু হারানোর ভয়ও প্রতিনিয়ত কাজ করেছে মনে।’
তিনি জানান, এখন তিনি নিজেই জায়গার মালিক হয়েছেন। সেইসঙ্গে পেয়েছেন একটা ছোট ঘরও। যা আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। একই কথা বলেন, জুলফিকার আলী, সোহরাব, লাভলু, রেবেকারা। তারাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সারাদেশে একযোগে গৃহহীনদের জন্য প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত ৬৯ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন করবেন। প্রথম দফায় আম্বিয়ার মতো নানা প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন কাটানো খুলনার কয়রা উপজেলার ৫০টি আশ্রয়হীন পরিবার পেতে যাচ্ছে স্বপ্নের আশ্রয়স্থল। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলায় জমিসহ ঘর তৈরি করে দেয়া হবে ২০৩টি গৃহহীন পরিবারকে। স্থানীয় প্রশাসনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা আশ্রয়হীন মানুষের স্বপ্নের ঠিকানা এসব ঘর নির্মাণ কাজ শেষের পথে। গৃহহীনদের স্বপ্নের পূর্ণতা পাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
আরো জানা যায়, প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সে হিসাবে ঘর নির্মাণে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছেন তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। গুণগতমান শতভাগ বজায় রেখে দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঘরগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গুণগতমান বজায় রেখে গৃহহীনদের একটা মানসম্মত ও টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছেন তাদেরকে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। খুলনা জেলায় ৯২২টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গুণগতমান বজায় রেখে দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঘরগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে যারা উপকারভোগী আছেন তাদের সাথেও মতবিনিময় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গৃহহীনদের একটা মানসম্মত ও টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আমরা সবসময় তদারকি করছি।’


বিজ্ঞাপন