ওষুধের অভাবে বাড়ছে মাতৃমৃত্যু হার

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রক্তক্ষরণ ও খিচুনি বন্ধের ওষুধ সরবরাহ অনিয়মিত হওয়ায় বাড়ছে মাতৃমৃত্যু হার। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ দুটিতে মুনাফা কম হওয়ায় মাত্র একটি কোম্পানি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠন ওজিএসবির।
নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে মাতৃমৃত্যুর হার আরো বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এক্ষেত্রে অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
অ্যানেসথেসিওলজিস্ট বদলি হওয়ায় ১৮ সালের মার্চ থেকে সিজারিয়ান বন্ধ সাভারের ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে প্রসব বেদনা নিয়ে আসা সব জটিল রোগিরা সাভারের প্রাইভেট হাসপাতাল বা ঢাকায় ছুটতে বাধ্য হন। ১৮ সালে ধামরাই উপজেলা হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ২২৬, পক্ষান্তরে বেসরকারিতে এই উপজেলাতেই সিজারিয়ানের সংখ্যা ২ হাজার ৬শ ৫৬ আর স্বাভাবিক প্রসব মাত্র ৩৮৫ জন।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, এখানে অনেকদিন ধরে কোনো অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই। আর্গোমেট্রিল ও মেক্সাল নামের দুটি ওষুধও আমরা অনেকদিন ধরে পাচ্ছি না। দেশে মাতৃমৃত্যুর ৫৪ শতাংশই ঘটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও খিচুনিতে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বন্ধে দুটি জরুরি ইনজেকশন দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকার কথা। অথচ মাতৃমৃত্যুর সবশেষ জরিপ বলছে, প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে নেই অক্সিটসিন ও তিন চতুর্থাংশ কেন্দ্রে নেই ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ইনজেকশনের সরবরাহ।
ওজিএসবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশে শুধুমাত্র একটা কোম্পানি মেক্সাল তৈরি করছে। কিন্তু আটটা কোম্পানির এই ওষুধ তৈরি করার কথা ছিল। হয়তো মুনাফার জন্য তারা করছে না। এই দায়িত্ব সরকারের।
তবে এই অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতের আশ্বাস ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলব। এটার সরবরাহ কেন কম না হয় সে বিষয়ে আমরা তাদের বলব।
এ বিষয়ে যুগ্মসচিব (ঔষধ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি বলেন, আমাদের সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের কোন অভাব নাই। তবে ডিস্ট্রিবিউশনের সময় যদি কোন যায়গাতে ওষুধের সমস্যা হয়ে থাকে সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
নতুন করে বাড়তে থাকা মাতৃমৃত্যু বন্ধে নাগালের মধ্যে স্বাভাবিক প্রসবের সুযোগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীদের পদায়নের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা বেগম বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য গর্ভবতীকে সব রকমের সুবিধা দিতে হবে।
ওজিএসবি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, আমাদের আরও অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ধাত্রী দরকার। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
গবেষণা বলছে, প্রসব করতে যেয়ে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ১৫ জন নারীর। নানা পদক্ষেপের পরও এখনও ৪৫ ভাগ মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *