শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার কারণে এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এখন তা খুলবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানান।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
এদিকে সোমবার পূর্বনির্ধারিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাকালে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করবেন। সোমবার দুপুর ২টায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে গাইডলাইন প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। এ গাইডলাইন অনুসরণ করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। স্কুল-কলেজগুলোতে ৩৯ পাতার গাইডলাইন পাঠিয়ে বলা হয়, ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুলগুলো প্রস্তুত করে রাখতে, যাতে যে কোনো মুহূর্তে সেগুলো খুলে দেয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্বকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এই প্রতিকূল স্রোতের মুখোমুখি বাংলাদেশও। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মতো বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা খাত। প্রায় ১২ মাস ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে কার্যক্রম চলমান। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অটো প্রমোশন বা অটোপাস ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও। এবার করোনার ঢেউয়ের মুখে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
দেশে করোনা পরিস্থিতি বলা যায় আগের মতোই। প্রতিদিন মৃত্যু ও শনাক্তের শঙ্কা উঠা-নামা করছে। অন্যদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে এসএসসি’ ২১ ব্যাচের পরীক্ষার সময়। গত বছর এসএসসি ২০২০ ব্যাচের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারিতে। এ বছর ফেব্রুয়ারি চলছে। কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার বা দেওয়ার মতো কোনো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে করোনার ভয় রয়েছে। ফলে তড়িঘড়ি পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা।
কয়েকটি মতামত জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রস্তুতিতে পরীক্ষা দিতে চান না। ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত পরিচালিত মতামত জরিপে প্রশ্ন ছিল, ‘করোনার মধ্যে আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে নানা দাবি করছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আপনি কোন দাবিটি সমর্থন করেন?’ প্রশ্নের বিপরীতে তিনটি অপশন দেওয়া হয়; ১. অটোপাস ঘোষণা। ২. পরীক্ষা পেছানো। ৩. সিলেবাস কমানো।
২৫ ডিসেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত মতামত জরিপে মোট ৫৩ হাজার ৩৯৬ জন ভোট দেন। এর মধ্যে অটোপাসের পক্ষে মতামত দিয়েছেন ৫০ হাজার ৮১৩ জন বা ৯৫. ১৬ শতাংশ, পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে ৮৩২ জন বা ১.৫৬ শতাংশ ও সিলেবাস কমানোর পক্ষে ১ হাজার ৬৭৮ জন বা ৩.১৪ শতাংশ।
২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এসব শিক্ষার্থী বছরের প্রায় পুরোটাই ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ৯ মাস ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে থাকার পর ব্যাপকভাবে মানসিক চাপে ২০ লাখ কিশোর-কিশোরী।


বিজ্ঞাপন