শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলা কেন?

অন্যান্য

নিজস্ব প্রতিনিধি : মিরণজিল্লার হরিজন কলোনীর ৭১ সালে শহীদ হওয়া পরিবারগুলির কোন খোঁজ খবর কেউই রাখেনা রাখেনি, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললো অথচ এই শহীদদের সরকারী গেজেটে নাম ওঠেনি। কেউ কোন খোঁজ নেইনি কি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, না মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় না সরকার! মিরিনজিল্লার অনেকেই চেষ্টা করেছে অনেক দৌড়াদৌড়ি করে শুধু আশ্বাস পেয়েছে কিন্তু তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বা শহীদদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। যারা চেষ্টা করেছেন তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে।
যাদের দেশের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে তারাই আজ অবহেলিত উপেক্ষিত এর মুল কারণ হল এরা হল পরিচ্ছন্ন পেশায় ছিল এরা ছোটজাত?
ছোটজাতের মানুষ কখনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে?
মরতে পারে দেশের জন্য?
এই ভাবনা আছে সমাজের ভিতরে এবং রাষ্ট্রেরও। স্বাধীনতার পর থেকে কেউ শহীদ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি।
গরীব পরিবার তাদের স্বজন হারিয়েছে যে দেশের জন্য সেই স্বাধীন দেশে আজ তারা অবহেলিত ঘৃর্ণিত ।
কি অদ্ভুত এক রাষ্ট্র সমাজের চরিত্র?
যারা দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ দিল তাদের পরিবারের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই?
শহীদ পরিবারের জন্য কত রকম সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে অথচ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই শহীদ পরিবারগুলি।
এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ ১৯৭১ সালে জীবনবাজী রেখে লড়াই করেছিল যে সকলে মিলেমিশে ভাল থাকবে। কোন অত্যাচার শোষণ থাকবেনা কিন্তু স্বাধীনতার পরে কেউই খোঁজই রাখেনি। নতুন বাংলাদেশে নতুন করে অত্যচার শোষণ জারি হয়েছে। এটা খালি চোখে দেখা যাবেনা।
আজকে সারা বাংলাদেশে এই সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে পর করে দিয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র।
যে দেশের স্বাধীনতার জন্য জন্য লড়াই করে প্রাণ দিল শহীদ হল আজ সেই দেশে এই সকল সম্প্রদায়ের সন্তানদের ছোটজাতের নামে স্কুলে ভর্তি নেইনা?
হোটলে ঢুকে খেতে পারেনা?
তাহলে এই লড়াইয়ের মূল্য কোথায়?
এই জীবন দানের মূল্য কোথায়?
আজকে এই সকল সম্প্রদায়ের কলোনিগুলি যখন তখন উচ্ছেদ করা হচ্ছে পূর্ণবাসন না করেই। তাহলে এই সকল শহীদদের কি বড় অপরাধ করেছে দেশের জন্য জীবন দিয়ে?
এই সকল শহীদ পরিবারগুলি কখনও লোভ দেখায়নি যে তাদের সব সুবিধা দিতে হবে বলে কোন কর্মসূচী দেওয়া বা কোন মন্ত্রীর কাছে ধরণা দেওয়া। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ না হয়েও নানা সুবিধা কলাকৌশল হাতিয়ে নিয়েছে সখানে শহীদ পরিবারগুলি তা করতে যায়নি।
যে সম্প্রদায়ের মানুষেরা আজকে ঘৃর্ণিত চোখে দেখা হয় সেই সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। এই সকল সম্প্রদায়ের মুক্তিযুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণের ইতিহাস লেখা হয়নি। ইতিহাসে রাখতে চাইনা এই সকল সম্প্রদায়ের মুক্তিযুদ্ধের লড়াইয়ার ভূমিকাকে এই সমাজ রাষ্ট্র। ( মিরিনজিল্লায় এই শহীদদের নিয়ে অল্প আলোচনা করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি ঢাকা, একটি সংখ্যায়।)
আজকে এই সকল তরুণদের এই লড়াইয়ের ইতিহাস জানতে হবে। কিভাবে জান বাজী রেখে তার পূর্বসূরিরা লড়াই করেছিল। কত স্বাধীনতা দিবস এলে আর গেলো কেউ খোঁজ নিলনা মিরণজিল্লার সেই শহীদ হওয়া পরিবারগুলির। আমাদেরকেই রাষ্ট্রের কাছে জোর দাবী জানাতে হবে শহীদ পরিবারগুলির জন্য। যথাযথাভাবে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবারগুলিকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিতে হবে
মিরিনজিল্লার বিশিষ্ট সমাজকর্মী যাদের ২২ নভেম্বরে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিল যারা আর স্বাধীনতার পর স্বজনদের কাছে ফিরে আসেনি নিচে ১০ জন শহীদদের নামের তালিকা দিলাম
শহীদ মহাবীর লাল সামুন্দ।
শহীদ নান্দু লাল
শহীদ আনোয়ার লাল
শহীদ ঈশ্বর লাল
শহীদ খালবিল লাল
শহীদ ঘাসিটা দাস
শহীদ শংকর লাল
শহীদ দলালু দাস
শহীদ রামচরন
এছাড়াও আছে নারায়ণগঞ্জের কালু ডোম। নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে অনেকেই শহীদ হয়েছে। এই সকল নিপীড়িত অপমানিত হওয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস লেখা হয়নি কৌশলে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
যে সকল নিপীড়িত অপমানিত করে রাখা সম্প্রদায়ের মানুষের রক্তে গড়া বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ তাদেরকে অস্পৃশ্য করে রেখেছে? সেই বাংলাদেশ তাদের পরাধীন করে রেখেছে? সেই বাংলাদেশ তাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে শোষণ আর ঘৃণা।
এই স্বাধীনতা কার স্বাধীনতা? আজকে স্বাধীনভাবে হোটলে ঢুকতে পারেনা? সেলুনে চুল কাটতে পারেনা, পুকুরে গোসল করতে দেয়না।
এমন বাংলাদেশের জন্য আমাদের স্বজনরা যুদ্ধ করেনি।
আজকে তাদের রক্ত ছুঁয়ে আমাদের শপথ নিতে বৈষম্যহীন বর্ণবাদহীন একটি রাষ্ট্রের। সেই লড়াইকে সামনে রেখে তরুণদের লড়াইয়ে নামতে হবে।
রাষ্ট্রের আজকের ইতিহাসে তাদের গৌরবমণ্ডিত লড়াই আত্মদানের কথা না থাকলেও সাক্ষী আছে এদেশের মাটি আকাশ নদনদী।
আমরা তাদেরই উত্তরসূরি আমাদের অনেক দায়িত্ব শহীদদের প্রতি রাষ্ট্র যে অবহেলা করেছে সেটা বর্ণবাদী চিন্তা থেকেই করা হয়েছে। তাই আজকে রাষ্ট্র সমাজের চরিত্র বর্ণবাদী।
একে ভাঙ্গতে হলে নতুন করে লড়াই করা ছাড়া আমাদের সামনে পথ খোলা নেই।এই সকল শহীদ পরিবারের কোন খোঁজ খবর কেউই রাখেনা রাখেনি, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললো অথচ এই শহীদদের সরকারী গেজেটে নাম ওঠেনি। কেউ কোন খোঁজ নেইনি কি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, না মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় না সরকার! যারা দেশের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে তারাই আজ অবহেলিত উপেক্ষিত এর মুল কারণ হল এরা হল পরিচ্ছন্ন পেশায় ছিল এরা ছোটজাত? ছোটজাতের মানুষ কখনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? মরতে পারে দেশের জন্য? এই ভাবনা আছে সমাজের ভিতরে এবং রাষ্ট্রেরও। স্বাধীনতার পর থেকে কেউ শহীদ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি। গরীব পরিবার তাদের স্বজন হারিয়েছে যে দেশের জন্য সেই স্বাধীন দেশে আজ তারা অবহেলিত ঘৃর্ণিত । কি অদ্ভুত এক রাষ্ট্র সমাজের চরিত্র? যারা দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ দিল তাদের পরিবারের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই? শহীদ পরিবারের জন্য কত রকম সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে অথচ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই শহীদ পরিবারগুলি। এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ ১৯৭১ সালে জীবন বাজী রেখে লড়াই করেছিল যে সকলে মিলেমিশে ভাল থাকবে। কোন অত্যাচার শোষণ থাকবেনা কিন্তু স্বাধীনতার পরে কেউই খোঁজই রাখেন


বিজ্ঞাপন