ঝড়ে ডুবে গেল নৌযান, ৯৯৯ এ ফোন কলে জীবিত উদ্ধার ৪

সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি : শনিবার সাড়ে নয়টায় নিয়াজ (৪০) নামে একজন কলার ৯৯৯ এ ফোন করে জানান তারা চারজন শ্রমিক সিমেন্ট বোঝাই একটি নৌযান (বাল্কহেড) নিয়ে সকাল সাড়ে এগারোটায় মুন্সীগঞ্জ থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ছিলেন। দুপুর আড়াইটায় তারা চাঁদপুর পৌঁছান। চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার প্রায় দুইঘন্টা পর তারা ঝড়ের কবলে পড়েন। এরপর শুরু হয় তাদের জীবন মরন যুদ্ধ।


বিজ্ঞাপন

তীব্র স্রোত আর ঝড়ো হাওয়ায় তারা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তারা প্রাণপন চেষ্টা করেও নৌযান নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না। ঝড় আর নদীর উত্তাল স্রোত তাদের কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল তার কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে রাত নয়টার দিকে একটি ডুবো চরে আটকে তাদের নৌযানটি নিমজ্জিত হয়ে যায়। তবে নৌযানটির একটি অংশ, যেখান থেকে নৌযানটি পরিচালনা করা হয় তার কিছু অংশ তখনো পানির উপর ভেসে ছিল।

তারা চারজন শ্রমিক কোনোমতে সেখানে আশ্রয় নেন। এরপর তারা তাদের উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। তখন কেউ কেউ তাদেরকে ৯৯৯ এ ফোন করার পরামর্শ দিলে তারা ৯৯৯ কল করে সাহায্য চান। তবে ৯৯৯ এর জন্য অনেক বড় একটি চ্যলেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় কলারের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা ও তাদের উদ্বার করা। কারণ কলার তার অবস্থান সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন চাঁদপুর থেকে রওনা দেয়ার দুই আড়াইঘন্টা পর ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। সঠিক অবস্থান না জেনে বিশাল মেঘনা নদীতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

৯৯৯ প্রথমে চাঁদপুর নৌপুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানিয়ে কলারের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। কলারের বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদপুর থেকে জানানো হয় ঘটনাস্থল বরিশাল হিজলার কাছাকাছি মেঘনা নদীতে হতে পারে। তারপর ৯৯৯ বরিশাল নৌ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বিষয়টি জানায়। বরিশাল নৌ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে হিজলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কালিগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর হিজলা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও কালিগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ৯৯৯ কে জানায় কলার ও তার সঙ্গীরা তাদের এলাকায় নেই। পরে ৯৯৯ থেকে ভোর তিনটায় ভোলার পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে বিষয়টি জানানো হয় । সংবাদ পেয়ে ভোর চারটার একটু আগে পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির একটি উদ্ধারকারী দল রওনা দেয়।

তারা কলারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নৌপথ পর্যবেক্ষণ করে সামনে এগোতে থাকে। অবশেষে ১৪ মার্চ রবিবার ভোর ছয়টার দিকে পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উদ্ধারকারী দল কলার ও তার ৩ সঙ্গীকে খুঁজে পায় ও নিরাপদে উদ্বার করে ফাঁড়িতে নিয়ে তাদের প্রাথমিক শুশ্রূষা ও খাবারের ব্যবস্থা করেন।

পূর্ব ইলিশা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই শরিফুল ৯৯৯ কে জানান ঘটনাস্থল মেঘনা নদীর চর রামদাসপুর, তাদের ফাঁড়ি থেকে নৌপথে ৭/৮ কিমি দূরত্বে ছিল।

৯৯৯ এর হার না মানা প্রচেষ্টায় জীবিত উদ্ধার হলো চার শ্রমিক।