গণপরিবহন : নারীরা মহাসংকটে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে বিশেষ সিদ্ধান্ত আসছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার থেকে গণপরিবহনে মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া বাধ্যতামূলক। ফলে ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে ৬০ ভাগ। এতে যাত্রীরা পড়েছেন মহা সংকটে। সময়মত অফিসে পৌঁছাতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তবুও ঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারছেন না। বিশেষ করে নারীদের অবস্থা আরো করুন। কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই, যে করে হোক বাস পেতে হবে। এ বিষয়ে গতকাল সকালে মহাখালিতে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা এক নারী ব্যাংকার বলেন, প্রায় ১ ঘন্টা দাড়িয়ে আছি। বাস আসলেও উঠতে পারছি না। এ দিকে অফিসের সময় খুব কাছাকাছি। এভাবে হলে হয়তো চাকরীই থাকবে না। আক্ষেপ করে এ নারী বলেন পুরুষরা সঙ্কটে থাকলেও আমরা (নারী) আছি মহাসংকটে।
এ নিয়ে গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেক মানুষকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কারো কারো বাসায় ফিরতে গভীর রাতও হয়ে যায়।
সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে বলে জানান পরিবহন মালিকেরা। এমনকি বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দেয়া হয়। যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে। পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে।
ঢাকার তেজগাঁয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন লিয়াকত হোসেন নামের এক সরকারি চাকরিজীবী। প্রায় ১ ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছিলেন না তিনি। কথা হয় নিয়াকতের সাথে। তিনি বলেন, এখন দুই সিটে একজন যাত্রী নেয়ায় বাসের সিট অর্ধেক হয়ে গেছে। ফলে বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান থেকেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়। এখন সব বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে। আর সিট যদি খালিও থাকে তাহলে অল্প দূরত্বের যাত্রী তার নিতে চায় না। ভাড়াও বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল স্টাফ কোয়ার্টার রুটে এখন জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা। আগে ছিলো ৫০ টাকা। আর করোনা আগে ছিলো ৪০ টাকা। ওই রুটের একটি বাসের সহকারি রশিদ মিয়া বলেন, আজ সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আবার সিট পূর্ণ হওয়ার পর যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছেন। আমরা গেট বন্ধ করে রাখলেও ট্রাফিক সিগন্যালে জোর করে উঠতে চায়। এনিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের তর্কাতর্কি ও ঝামেলা হচ্ছে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুপুরে বিভিন্ন রুটের যেসব বাস আসা যাওয়া করতে দেখা গেছে তার অধিকাংশেরই গেট ছিলো বন্ধ। ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলে তারা থামেনি। কারওয়ান বাজারে দুই নারী দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি। তারা জানান, দুই-একটি বাসে সিট থাকলেও নারীদের সিট নেই বলে তাদের উঠতে দেয়া হয়নি। কিন্তু বাস্তবে বাসে উঠে দেখা যায় বাসগুলো নারীদের জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না। তারা সিটিং বলে আগেই পুরুষ যাত্রী দিয়ে আসন পূর্ণ করে আসছে।
বাসের আরেক সহকারি আলআমিন জানান, তাদের ভাড়া হিসাব হয় ফার্মগেট থেকে বাংলা মটর। আগে কারওয়ান বাজার নামলেও একই ভাড়া। আরেকজন যাত্রী রাসেল আহমেদ জানান, এখন বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০টাকা। ১ কিলোমিটার গেলেও ১০টাকা, আধা কিলোমিটারও ১০ টাকা। ওই সহকারি এটা স্বীকার করে বলেন, বাসে উঠলেই ১০ টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন এ বিষয়ে বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হত। আর এখন তার ওপরে আরো ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়া তাদের জন্য চাপ হয়ে গেছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকার মধ্যে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা। এখন করোনার কারণে যাত্রী সিটের অর্ধেক নেয়ার কারণে ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালে প্রতি কিলোমিটার হয় ২ টাকা ৪৬ পয়সা। উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারের দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের চেয়ে কিছু কম। ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। কারণ তারা আগেই ভাড়া বাড়িয়েছে। এখন সেই বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, নিয়মের বাইরে ভাড়া না নেয়ার জন্য আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে।


বিজ্ঞাপন