রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

*এত রোগী আগে দেখেনি বাংলাদেশ
*করোনা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ
* কুর্মিটোলার বারান্দা রূপ নিয়েছে ওয়ার্ডে

 

এমএ স্বপন : দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আবারো রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও অনেক বেড়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৪৭ জনে। এর আগে গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যু হয়।আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেও না। বুধবার সকালে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, অনেকেই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কারণ রোগীর চাপ বাড়ছে। এতে মা ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সকলে মিলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি মোকাবিলা করতে হবে। করোনারোধ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। টিকা সব দেশের জন্যই প্রাপ্তি নিশ্চিত করা উচিত। শুধুমাত্র উন্নত দেশকে টিকা দিয়ে এই সমস্যা সমাধান হবে না।
করোনাভাইরাস নিয়ে বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আবারো রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও অনেক বেড়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ঘণ্টায় মারা গেছেন দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ জন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার ৬৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ০২ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ২৫৬ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জন।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দেশে আরও ৭ হাজার ২১৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৬৬ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার ৭৭৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ৯০ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ২৬০ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩১ লাখ ৬ হাজার ৫৮ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ২৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ লাখ ৪১ হাজার ৩০৮ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৭ হাজার ২৭৩ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ১ হাজার ১০৬ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, ইতালি সপ্তম, তুরস্ক অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
কুর্মিটোলার বারান্দা রূপ নিয়েছে ওয়ার্ডে : একটি সিটের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাসপাতালের বারান্দাই যেন ওয়ার্ডে রূপ নিয়েছে কুর্মিটোলায়। সেখানেই চলছে চিকিৎসা। আর বাড়তি এই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করায় ভোগান্তি কমেছে করোনা পরীক্ষায়।
নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি লড়ছেন করোনার সঙ্গে। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে ঘণ্টা কয়েক ধরে অপেক্ষা একটি সিটের জন্য। অক্সিজেন লেভেল নেমেছে ৯০-এর নিচে তাই কুর্মিটোলা হাসপাতলের বারান্দাতেই চলছে অক্সিজেন দেয়া।
এমন অপেক্ষায় আছেন আরো কয়েকজন। সময় যত গড়ায় বাড়তে থাকে রোগী। বুধবার ১১টা নাগাদ হাসপাতলের বারান্দাই যেন একটি ওয়ার্ডে পরিণত হয়। সাতজন রোগীর চলে অক্সিজেন দেয়া।
বহির্বিভাগের পাশাপাশি অপেক্ষায় থাকা রোগী সামলাতেও বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
তবে অনলাইন কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করায় ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে করোনা টেস্টে বলে জানায় তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দেশে করোনায় মৃত্যর সংখ্যা ৫০ জনের বেশি।
এদিকে যে কোনো মূল্যে করোনা সংক্রমণ রোধ করা না গেলে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়িয়েও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন