সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

সাধারণ বেডও সোনার হরিণ
আগামী দুই সপ্তাহ সংকটময়
আরও ৮০০ বেড বাড়ানোর চেষ্টা

 

এমএ স্বপন : মহামারি করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইসিহাসে সর্বোচ্চ ৭৪ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৫২১ জনে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৮৫৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৩৯১ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জন। এর আগে বুধবার দেশে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৬৩ জন।
করোনার প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে মরিয়া স্বজনরা। এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছোটাছুটির পর সুযোগ হচ্ছে ভর্তির। গুরুতর অসুস্থদের জন্য আইসিইউর পাশাপাশি এখন সাধারণ বেড পেতেও ঘাম ছুটে যাচ্ছে স্বজনদের।
অন্যদিকে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে রাজধানীর তুলনায় বিভাগ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কম।
এই অবস্থায় করোনা উপসর্গ থাকলেও অসুস্থতার মাত্রা কম থাকলে হাসপাতালে না এসে বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নেয়ার কথা বলছেন খোদ চিকিৎসকরা।
প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হচ্ছে দেশে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না অনেকে। বুধবারের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ বেডের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের ৮৯ শতাংশ সাধারণ বেডে ও ৯১ শতাংশ আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। একইভাবে বেসরকারি হাসপাতালের ৮৮ শতাংশ সাধারণ বেডে এবং ৯৩ শতাংশ আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনার জন্য নির্ধারিত ঢাকার ১০ হাসপাতালে ২ হাজার ৭৩৬ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২ হাজার ৪৪১ জন। ফাঁকা আছে মাত্র ২৯৫টি। অবশ্য বুধবার পর্যিন্ত ২৭২ জন অতিরিক্ত রোগী আছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আছে ৫ জন অতিরিক্ত রোগী।
এ দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরও ৭০০ থেকে ৮০০ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব এ কথা জানান। গত ৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নতুন সচিব নিয়োগ পান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমার আজকে মাত্র তৃতীয় দিন। গতকাল সারাদিন আমাদের মিটিং ছিল। সেদিন উত্তর সিটি করপোরেশনে এক হাজার ২৫০ বেডের হাসপাতাল হচ্ছে, সেখানে প্রায় আড়াইশ’ আইসিইউ থাকবে। এটা অচিরেই উদ্বোধন হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলাম। সেখানে আরও ২০০ বেডের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে বক্ষব্যধি হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থানে ৭০০ থেকে ৮০০ বেড বৃদ্ধি করার চেষ্টা করব। ’
সচিব বলেন, ‘আপনারা সীমাবদ্ধতার কথা জানেন, সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করবেন মন্ত্রী মহোদয় ও ডিজি হেলথ।’
টিকার বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছেন কি-না প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সব চলছে, সব প্রচেষ্টা চলতেছে, ইনশাআল্লাহ।’ এসময় তিনি সবাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে এসব হাসপাতালে ১৩২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১১টি। আর বেসরকারি হাসপাতালে ৩০৫টি আইসিইউ শয্যার রোগী ভর্তি রয়েছে ২৮৫টিতে। আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে মাত্র ২০টি।
তথ্যমতে, ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য জায়গায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৯১৮টি সাধারণ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৭৭৫টিতে। খালি আছে ৫ হাজার ১৪৩টি। আর ৬০২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪৩৩টিতে রোগী আছে। ফাঁকা আছে ১৬৯টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় প্রতিদিন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিহ্নিত হলেও সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ গুণ বেড়েছে। গত চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ সময় প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ৬০ জনের বেশি। প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেড ও আইসিইউতে ভর্তি প্রয়োজন এমন রোগীর চাপ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ করোনা স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে না চললে সামনে কঠিন বিপদ। যেভাবে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে তার কয়েক শতাংশ রোগীকে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে হাসপাতালগুলো বেডের অভাবে রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। বেড ফাঁকা না থাকলে টাকা খরচ করেও চিকিৎসা পাওয়া যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বেড সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোলের পরামর্শ কোভিডে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ে আক্রান্ত উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসা বাসাতেই করতে হবে।
তিনি বলেন, সামান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ায় সিটগুলোর অপচয় হচ্ছে। পরে মারাত্মক রোগীরা জায়গা পাচ্ছেন না। মৃদু উপসর্গের রোগীরা বাসায় চিকিৎসা নিলে কিছু সিট খালি হবে।
দেখা গেছে, রাজধানীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে কোনো আইসিইউ খালি নেই।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চারটি, ছয়টির সবগুলোতে, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে একটি, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে চারটিতে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের একটি এবং বিএসএমএমইউতে একটি আইসিইউ বেড খালি আছে।
আর ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল, আসগর আলী হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইমপালস হাসপাতাল, এএমজেড হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সবগুলো বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে।
এছাড়া স্কয়ার হাসপাতালের ১৯টির ১৬টিতে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ১৫টির ১১টিতে এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের ২১টির ১৯টিতে আইসিইউতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
আইসিইউর যখন এমন অবস্থা তখন সাধারণ বেডের জন্য অনেকটা যুদ্ধ করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ১৬৯টি বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১১টি। ৫০০শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ২৭৫ বেডের জায়গায় রোগী আছে ৪১১ জন।
এ ছাড়া ১৩৬ জন করোনা রোগীকে বিকল্প ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ঢাকা ১৪০ বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ৫টি। ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৯৪ বেডের মধ্যে ২৫টি খালি আছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটের ৮৮৩টি বেডের মধ্যে খালি আছে ১৮৯টি। ৫০০শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১০টি বেডের মধ্যে খালি আছে ৬টি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১৯০টি বেডের মধ্যে খালি আছে মাত্র ১৫টি।
অন্যদিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। করোনা ইউনিটের ৪৮৫ বেডের মধ্যে ১৭৬টি খালি আছে। মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০ বেডে মধ্যে ৯টি খালি আছে। এখানে আইসিইউ বেড নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটে ১৮০ বেডের মধ্যে খালি আছে রোগী ভর্তি আছেন ১৮৫ জন। ৫ জনকে বিকল্প ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ৯৬টি বেডের মধ্যে সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। আসগর আলী হাসপাতালের ৬৪টি বেডের মধ্যেও রোগীতে ভরা। স্কয়ার হাসপাতালের ৬৫টির মধ্যে ৬টি খালি আছে। ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬৭টির মধ্যে ফাঁকা আছে ১টি মাত্র সিট। ইউনাইটেড হাসপাতালের ৮০টির মধ্যে খালি আছে ১৩টি।
এভার কেয়ার হাসপাতালের ২৮টির মধ্যে ২টি বেড খালি আছে। ইম্পালস হাসপাতালের ২৫০ বেডের মধ্যে খালি আছে ১০৬টি। এ এম জেড হাসপাতালের ৯০টি বেডের মধ্যে খালি আছে ৫টি। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৭৪টি বেডের মধ্যে একটিও খালি নেই।
আগামী দুই সপ্তাহ সংকটময় : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েকদিনে যেভাবে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাতে গতবারের পিকের (জুন-জুলাই) চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হবার আশঙ্কা রয়েছে। গত সোমবার থেকে থেকে দেওয়া লকডাউনেও গণপরিবহন, অফিস ও দোকান খোলা দেখা গেছে। লকডাউনের আগের দু’দিনে ঢাকা ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ, ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষাও। আর এ সবের ফলাফল দেখা যাবে দুই-তিন সপ্তাহ পর। তখন সংক্রমণের পাশাপাশি বাড়বে মৃত্যুও।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দেশটির নাগরিকদের কোনও দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংক্রমণ বিবেচনায় চারটি স্তর নির্ধারণ করেছে। এই স্তরের চতুর্থ তালিকা হচ্ছে ‘সংক্রমণ খুবই উচ্চ’। যে স্তরে আছে বাংলাদেশও।
দুই লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এমন অঞ্চল বা দেশে ২৮দিনের মোট আক্রান্তের হার যদি প্রতি লাখে ১০০ জনের বেশি হয়, তবে সেটি চতুর্থ স্তরে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করে সিডিসি।
সিডিসি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া সতর্কবার্তায় বলেছে, বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি এমন যে টিকা নেওয়া কোনও ব্যক্তিও সেখানে ভ্রমণ করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। যদি বাংলাদেশে ভ্রমণ করতেই হয়, ভ্রমণের আগে টিকার সব ডোজ নিতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৬ এপ্রিল মহাখালীর ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন মার্কেট হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা না মানলে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে। হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেড সংখ্যা যতোই বাড়ানো হোক না কেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কিছুতেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ৬ এপ্রিল এবং ৭ এপ্রিল তাদের ল্যাবে করোনার নমুনা শনাক্তের হার ছিল ২৭ এবং ২৬ শতাংশ। মার্চের শেষ দিকে একদিনে শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ছিল ৩৯ শতাংশ। মার্চের শেষ এবং এপ্রিলের শুরু থেকে কয়েকদিন ধরে দিনে শনাক্তের হার ৩১ থেকে ৩২ শতাংশ।
ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ২ এপ্রিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হলো। সেটার ফল আমরা এখনও দেখতে পাইনি। এক থেকে দুইদিনের মধ্যেই পাবো। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর সংক্রমণের নতুন মাত্রা দেখা যাবে। এই দুই সপ্তাহ বেশ সংকটময়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ১২১টি। পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৫৬০ জন। সংক্রমণের হার প্রায় ৫০ ভাগ।
২ এপ্রিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন করোনা ইউনিটেরই দায়িত্বরত চিকিৎসক, ল্যাবে দায়িত্বরত এবং টেকনোলজিস্টরা। আমরা যারা পরীক্ষা নিয়েছি, তারা এমনিতেই বেশি এক্সপোজারের শিকার হয়েছি। কারণ আমরা ভাইরাসের সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলাম। এমনটা জানান সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের থেকে আমরা সংক্রমিত হবো কিনা, তারচেয়ে বেশি চিন্তা আমাদের কাছ থেকে ওরা সংক্রমিত হলো কিনা তা নিয়ে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিউট (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনার লক্ষণ দেখা দিতেও ১৪-২১ দিন লাগে। এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সংক্রমিত হয়েছিলেন তিন সপ্তাহ আগে।
লকডাউনকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে প্রান্তিক মানুষের খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই সবদিক সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করে তাদের আইসোলেশনে নিতে হবে। তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও আরও জোর দিতে হবে।
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে নতুন ধরন : দক্ষিণ আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তার করা করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরনটি কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে ধরা পড়েছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর এই ধরনটি এখন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
সম্প্রতি আইসিডিডিআরবি এর করা একটি গবেষণায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে। ফলে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার সাম্প্রতিক হার বেশ চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
আইসিডিডিআরবি বলছে, দেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের সঙ্গে পুরোপুরি মিল আছে।
পয়লা জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৫১টি নমুনা পজেটিভ আসে। ৬ জানুয়ারি প্রথম ব্রিটেনের ধরনটি শনাক্ত হয় এবং মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ধরনটি বাংলাদেশে বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ১৮ থেকে ২৪মার্চের মধ্যে করোনা পজেটিভ রোগীদের ৫৭টি নমুনার জিনোমিক ক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে ৮০শতাংশের বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের সঙ্গে পুরোপুরি মিল আছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
অথচ মার্চের প্রথম সপ্তাহে (৫ থেকে ১১মার্চের মধ্যে) দেশের ১৩টি জেলা থেকে প্রায় ৩০টি নমুনার জিনোমিক ক্রম সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরণের কোন অস্তিত্বই ছিল না।
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে বুধবারও (৭ এপ্রিল) রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও অনেক বেড়েছে। সবশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৪৭ জনে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যু হয়। আর সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে।


বিজ্ঞাপন