লকডাউনে লাগামহীন বাজার

অর্থনীতি জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউনের মধ্যে সবজি, মাছ-মাংসের বাজার এবং মুদি দোকানসহ সবখানেই ক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে। ফলে দোকানিরা দম ফেলারও ফুসরত পাচ্ছেন না। এই চাপের সুযোগ নিয়ে সরবরাহ সঙ্কট দেখিয়ে কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি রমজানকে সামনে রেখে তেলসহ অনেক পণ্যের লাগাম টানা যাচ্ছে না। তবে গত প্রায় দুই মাস ধরে চলা মুরগির বাজারের অস্বস্তি কিছুটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।


বিজ্ঞাপন

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও মুড়িসহ ছয় নিত্যপণ্যের দাম খুচরা বাজারে বেড়েছে। একই অবস্থা সবজির বাজারেও। তবে বিপরীতে কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে।

এদিকে আগামী বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে রমজান। প্রতি বছর রোজার মাসে কয়েকটি পণ্যের বেশি চাহিদা থাকে। এই সময় পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ বছরও দাম বেড়েছে। তবে রমজানে জনমনে স্বস্তি দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে রমজানে যে ছয়টি পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। এই ছয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে তেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। আর দোকানগুলোতেও পণ্যের ঘাটতি নেই। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ করছেন, অনেক পণ্যের দাম তাদের কাছে বেশি রাখা হচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা বাজারের অন্যতম ব্যস্ত চালের দোকান মরিয়ম স্টোর। বাজারের কী অবস্থা- জানতে চাইলে দোকানের মালিক ইসহাক বলেন, চালের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে চিকন চালের দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে বাজার কিছুটা গরম।

বাজার পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে দক্ষিণ মুগদা বাজারের মেসার্স রিয়াজ অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা কামরুল বলেন, গত কয়েক দিন আগেও ভালো মানের কাটারিভোগ চালের ২০ কেজির প্যাকেট এক হাজার ৩৭০ টাকায় বিক্রি করা গেছে। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি চাল ৬৮ থেকে ৬৯ টাকা পড়ত। এখন সেই প্যাকেট এক হাজার ৪৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সে হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৭২ টাকা। আর রাবেয়া ব্র্যান্ডের নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৬৪ টাকায় বিক্রি করা গেলেও এখন ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে যে চাল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা ছিল। গতকাল সেই চাল বিক্রি ৪৬ থেকে ৫২ টাকায় হয়েছে। আর চিকন চালের দাম এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে এবং মাঝারি মানের চালের দাম দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।

গত সপ্তাহের এই সময় ১১৯ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১২১ থেকে ১২৫ টাকা। রোজা সামনে রেখে অন্যতম চাহিদার পণ্য মুড়ির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজির দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। তবে মাস-দুয়েক অস্বস্তিতে থাকা মুরগির দাম কমেছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালির কেজি ৫০ টাকা কমেছে। পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।

সপ্তাহব্যাপী চলমান লকডাউনের চতুর্থ দিনেও স্বাভাবিক রাজধানীর পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। চাহিদা অনুপাতে মজুত ও জোগান রয়েছে কাঁচা বাজারেও। তবে বাজারে লম্বা বেগুন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ থেকে ৫৫, উচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫, করলা ৩৫ থেকে ৪০, ঢেঁড়স ৩৮ থেকে ৪০, শিম ৪০ থেকে ৪৫, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা ৩২ থেকে ৩৫, শসা ৩৮ থেকে ৪০, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫, পটল ৪০ থেকে ৪৫, ঝিঙ্গা ও ধুন্দল ৫৫ থেকে ৬০ এবং প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

সবজি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে রসুনের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিনি ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুগডাল ১৪০ টাকা এবং মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বিশ্বজুড়ে মহামারির রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৮৫৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এসময়ের মধ্যে ৭৪ জন মারা গেছে। ইতিমধ্যে সরকার ভাইরাস বিস্তাররোধে ৭ দিনের লকডাউন দিয়েছে। এরপরও নগরীর বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায়ের কোনো নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সেখানেও শত মানুষ জটলা বেঁধে মাছ-সবজি কিনছে। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা; বরং ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে যেন জমজমাট চারপাশ।