“দূর্বলতায় স্যালাইন চিকিৎসা” -উপকারী? নাকি প্রানঘাতি?

স্বাস্থ্য

ড. মোঃ আজিজুল ইসলাম : বাংলাদেশের গ্রাম ও থানাতে বহুল প্রচলিত এই চিকিৎসা।
গ্রামের রোগীরা এসে প্রায়ই বলেন ” অনেক দূর্বল লাগে একটা স্যালাইন দিলে ভালো হয়না স্যার?”
সবার আগে দেখি স্যালাইনে কি থাকেঃ
স্যালাইন তৈরি করা হয়, বেশির ভাগ পানি,একটু চিনি ও লবণ দিয়ে, স্যালাইনের ধরনের উপর ভিত্তি করে লবণ ও চিনির পরিমানের পরিবর্তন হয়ে থাকে,এর বেশি কিছুই নেই। স্যালাইনের প্যাকেট কেটে, কিছু স্যালাইন গ্লাসে নিয়ে, খেয়ে দেখলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে।
স্যালাইনের সাথে যে বিভিন্ন রং এর ইঞ্জেকশন মেশায়, এগুলো কিঃ
-এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুমোদন বিহীন কোম্পানির ভিটামিন ও স্টেরয়েড যাতে উপকার থেকে অপকার করার সম্ভাবনা বেশি।
কেন টিকে আছে এই পদ্ধতিঃ
-দূর্বলতা দূর করতে দীর্ঘদিন ধরে চলে অাসা এই অপচিকিৎসা গ্রামের মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয়।
৪-৫ ঘন্টা ধরে চলা এই চিকিৎসার প্রতি গ্রামের মানুষের একটা নেশা তৈরি হয়েছে। গ্রামে যারা ঔষধ লেখে, তাদের কেউ ভিজিট দিতে চায়না, অথচ একটা স্যালাইন দিলে অনায়াসে ৫০০-৬০০ টাকা দিয়ে দেয়, খরচ হয় ১৫০-২০০টাকা, লাভ ৩০০-৪০০ টাকা।
স্টেরয়েড কারনে ৪-৫ রোগির শরীরে আরাম বোধ হয়, রোগীও খুশি, ঔষধ লেখা বা স্যালাইন পুষ করা লোকটাও খুশি, তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যাঃ
-প্রথমত এটা একটা অপ্রয়োজনীয় রক্তনালি ছিদ্র করা পদ্ধতি, যার থেকে অনেক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, স্টেরয়েড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়।
৪-৫বার প্রস্রাব করলেই এই পানি শেষ, চিনি কয়েক ঘন্টা থাকে, স্টেরয়েড কয়েকদিন থাকে, তারপর সব শেষ কিন্তু নেশা শুরু।
সবচেয়ে ভয়াবহ হল যে সব রোগীর হার্ট ফেইলর,হাঁপানি ও কিডনির কার্যক্ষমতা কম তাদের এই স্যালাইন পুষ করায় জীবন দিতে হচ্ছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামে ঔ ঔষধ লেখার ব্যাক্তির খবরই নেই যে তার রোগীর এই রোগ অাছে কিনা?


বিজ্ঞাপন

তার মানে দূর্বলতা দূর করতে স্যালাইন চিকিৎসা একটা মিথ্যা চিকিৎসা, বিজ্ঞান সম্মত নয়, অনেক সময় জীবনঘাতি।
বিভিন্ন সময়ে স্যালাইন যে যোগ্য চিকিৎসকরাও যে দেয়?
– যোগ্য চিকিৎসকরা দূর্বলতা চিকিৎসা করতে স্যালাইন দেন না,বরং দেন অপারেশন এর অাগে বা পরে, রোগী মুখে খেতে না পারলে বা বারন থাকলে, সাময়িক সময়ের জন্য পানি, লবন ও চিনি দেওয়ার জন্য। কারও অপচিকিৎসায়, ব্যাবসায় আঘাত করা আমার উদ্দেশ্যে নয়, মানুষের জীবনের প্রশ্নে লেখা, যদি কিছু জীবন রক্ষা পায়।
দুনিয়া ভালো -মন্দ, কাজ-কর্মের প্রকৃত ফলাফল পাওয়ার স্থান নয়, এটা হল কর্মস্থল। থাকি ভালোর সাথে, যতটুকু সামর্থ্যে।