ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

অপরাধ অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে কোনো কোনো পরিবহন জরিমানার মুখোমুখী হলেও তারা থেমে নেই; ঢাকার পথে ফিরতি যাত্রীদের কাছে বাড়তি বাসভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর শুক্রবার বিকাল থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে ফেরা কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, হটলাইনে অনেকের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তারা কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছেন। তবে বাড়তি ভাড়ার নেওয়ার জন্য চাঁদাবাজদের দায়ী করে পরিবহন মালিকদের সমিতি বলছে, এর সঙ্গে বাসমালিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ঢাকায় আসতে শনিবার রাতে পটুয়াখালী থেকে সাকুরা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা রতন আলী। গত রোববার সকালে ঢাকা পৌঁছান তিনি। রতন বলেন, অন্য সময় এই পথের ভাড়া ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। কিন্তু শনিবার রাতে আমার কাছ থেকে ৭০০ টাকা নিয়েছে। অনেকের কাছ থেকে ৮০০ টাকাও নিয়েছে। কিন্তু গাড়ির সেবার মান ছিল খুবই খারাপ। রাস্তায় অনেক জায়গায় থেমেছে, পথে পথে দেরী করেছে। গত রোববার সোহাগ পরিবহনের বাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার কমলাপুরে আসা আনোয়ারুল হক অভিযোগ করেন, এই রুটের প্রতিটি পরিবহনেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রয়েল, সোহাগ ও তিশা পরিবহন প্রতিটি বাস ৫০ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। এই রুটে ভাড়া এমনিতে ভাড়া নেয় ২০০ টাকা। কিন্তু আজকে তারা ২৫০ টাকা করে নিয়েছে। ঈদ শেষে স্ত্রীকে নিয়ে বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছেন শাকিল আহমেদ নামে এক বেসরকারি চাকুরীজীবী। গত রোববার তিনি বলেন, ৩৫০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা দিয়ে এসেছেন তিনি। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বেশিরভাগ অভিযোগই সঠিক জানিয়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, রোববার গুলিস্তানে গেলে আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। যাত্রীরা অভিযোগ করছে, মাওয়াঘাট থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছিল। আমরা যাওয়ার পর বাসের হেল্পার-চালক তা অস্বীকার করে। পরে আমরা এখান থেকে মাওয়ায় পরিবহন কোম্পানিগুলোকে ফোন করে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেই। পরে তারা নির্ধারিত ভাড়া নেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করে। ঈদের আগের তুলনায় পরের অভিযোগের সংখ্যা কমেছে জানিয়ে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল আজিম জানান, গতকাল সোমবার তারা ভাড়া নিয়ে তিনটা অভিযোগ পেয়েছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সহকারী প্রকৌশলী বলেন, শেরপুরের এক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তার টাকা আমরা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এছাড়াও বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এ ধরনের ১৫টি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তিনি জানান। বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট শাখার উপপরিচালক আ স ম হাসান আল আমিন বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করা হচ্ছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ সঠিক হলে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, চাঁদাবাজরা যাত্রী ধরে এনে গাড়িতে উঠিয়ে দিচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা চালকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। আর বাকি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছে। মালিকরা কোনো পয়সা পাচ্ছে না। তবে ওই চাঁদাবাজদের নাম বলতে চাননি তিনি। বিআরটিএ জানিয়েছে, ঈদের আগে ৩১ মে থেকে শুরু হওয়া অভিযান চলে ৯ জুন পর্যন্ত। অতিরিক্ত ভাড়া বা যে কোনো হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে বিআরটিএ একটি হটলাইনও চালু করে। সেসময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বিভিন্ন পরিবহনকে জরিমানার পাশাপাশি যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ৪ জুন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় ৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৫৫টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিবহনকে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *