আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে চিরভাস্বর এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ষোষিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সেদিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতি বর্হিভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার।
নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাজনৈতিক সংগঠন সমূহ কর্মসূচি সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ধানমন্ডি বত্রিশস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। মুজিবনগরে সকাল ১০:০০ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর পক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপি’র নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।


বিজ্ঞাপন