মৃত্যু ও শনাক্ত কমেছে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

টিকার ২য় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন সময় মতো তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় টিকার প্রাপ্যতা নিয়ে যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে তেমনি মজুতও দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।
ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। ক্রয় ও উপহার নিয়ে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে পেয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা যে সংখ্যক মানুষ নিয়েছেন তাতে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে সরকার গঠিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি উৎস ও সংগ্রহ সংক্রান্ত কোর কমিটির এক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে, টিকার বর্তমান মজুত আগামী ১৫ মের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এরমধ্যে ভারত থেকে টিকা আসবে কি না বা এলেও তার পরিমাণ কত হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের ৫ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৩ কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করবে। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাচ্ছে না। অথচ সিরাম ইনস্টিটিউট টিকার জন্য অগ্রিম দেড় কোটি ডোজ টিকার মূল্য বাবদ ৫১০ কোটি টাকা আগেই নিয়েছে।
চুক্তির পর গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত দুটি চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে। গত দুই মাসে টিকার কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ টিকার চালান আসতে পারে তাও কেউ বলতে পারছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টিকা চেয়ে ভারতের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই বেসরকারি কোম্পানিটি যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, আমরা টিকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এটা এখন ভারত সরকারের বিষয়। তাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুত আছে। ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পেলেই তারা আমাদের দিতে পারে। বাংলাদেশ সরকারও দেশের মানুষের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
এদিকে টিকার ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সরকার এখন নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি টিকা বিভিন্ন পরীক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত। দেশে এ টিকা আনার জন্য একটি কনসোর্টিয়াম কাজ করছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়া বলেছে, তাদের টেকনোলজি কাউকে দিতে পারবে না। বাংলাদেশের যেসব কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করবে তাদেরই শুধু দেবে। চীন ছয় দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন নিয়ে জোট করেছে। সেখানেও বাংলাদেশ আছে, ভারত নেই। চীন ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। এছাড়া যত টিকা লাগবে তারা দিতে প্রস্তুত। আমেরিকার একটি কোম্পানিও টিকা দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
টিকার বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে টিকা নিয়ে একটু ঝামেলা হবে। তবে জুন মাস থেকে কোনো সমস্যা হবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৩ কোটি ডোজ টিকা তাদের দেয়ার কথা। কিন্তু তারা টিকা দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে করোনার টিকা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে চেষ্টা করছেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চেষ্টা করা হচ্ছে। রাশিয়া, চীন ও আমেরিকার একটি কোম্পানি টিকা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মৃত্যু ও শনাক্ত কমেছে : বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৮৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮৬৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬২৯ জন। এতে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ২২৫ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪ জন।
এর আগে বৃহস্পতিবার করোনায় ৯৮ জন মারা যান ও নতুন করে ৪ হাজার ১৪ জন করোনা আক্রান্ত হন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৩৮৮ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৫ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৫৫৩ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ কোটি ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৫০৭ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ১২১ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ২২৬ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৬২ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৯ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৮৬ হাজার ৯২৮ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৭ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ লাখ ৮ হাজার ৬০৬ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ২ হাজার ১৬৪ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৭ হাজার ১০৩ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, ইতালি অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন