ওষুধে অসুখ

অপরাধ অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনাকালে ও যৌন উত্তেজক, রুচিবর্ধক, ভিটামিন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপের মহামারী

 

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : ঢাকাসহ দেশের ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ঔষধ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এবং ঔষধ প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে নকল, ভেজাল ও নিম্মমানের ঔষধের রমরমা বাণিজ্য চলছে। নকল, ভেজাল ও নিম্মমানের যৌন উত্তেজক, রুচিবর্ধক এবং ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্য্যপসুল সেবনে মানষিক বিকারগ্রস্থ বিকৃত রোগীতে পরিনত হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ধাপে দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যখন করোনা সংক্রামণের প্রতিকার ও প্রতিরোধে ব্যাস্ত ঠিক তখনই অবৈধ, নকল, ভেজাল, ও নিম্নমানের ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি ৩৭ টি বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করার পরেও থেমে নেই নকল ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ প্রস্তুত ও বাজারজাত।
বিশেষ করে বলবর্ধক, শক্তিকারক, রুচিবর্ধক, ও যৌনশক্তি বর্ধক, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপ সেবনে ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
এধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হওয়ার কারণ স্বরুপ জানা যায়, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ঔষধ প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ কাঁচা টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে ভিটামিন ওষুধে ডেক্সামেথাসন, সিপ্রোহেপ্টাডিন, থিয় ভিট ও ষ্টোরয়েড জাতীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করছে।
যৌন উত্তেজক সিরাপ,ট্যাবলেট ও ক্যাপস্যুলে সিলডেনাফিন সাইট্রেট, ট্রাডালাফিন সাইট্রেড, মাত্রারিক্ত কেফেইন, অপিয়াম উদবুদ্ধ অপিয়েট (আফিম) নামক মাদক দ্রব্য ব্যবহার করার কারণে মানবদেহের লিভার, কিডনি ও হার্টের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ফলে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের আপমর জনগণ।

আর এই জন্য দায়ী ড্রাগ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ঔষধ কোম্পানির নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত কতিপয় দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা। ফলে তিমিরেই থেকে যাচ্ছে জাতীয় ও জনস্বার্থে নেওয়া মহাপরিচালকের জনহিতকর পদক্ষেপ।
কোন কোম্পানির যৌন উত্তেজক ঔষধ সামগ্রীতে সিলড্রেনাফিন সাইট্রেট, ট্রাডালাফিন সাইট্রেড, কেফেইন বা অন্যকোন কেমিক্যাল সনাক্ত হলে ওই কোম্পানিকে নাম-মাত্র শাস্তি দেয় ওষুধ প্রশাসন।
এই শাস্তিকে উর্ধতন মহল বা স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের আইওয়াস বলা চলে। তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও করে, আবার গোপন সমঝোতায় বাতিল আদেশ প্রত্যাহার ও হয়। বিতর্কিত বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট হলে সাবেক মহাপরিচালক জনস্বার্থে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নমুনা কপি সংযুক্ত করে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ওই সকল কোম্পানির উল্লেখিত ওষুধ বাজার থেকে সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষার জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ দেন।
এ আদেশের পর জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এবং চিহ্নিত নকল ভেজাল ঔষধ কোম্পানির মালিকদের সাথে যোগসাজশে বাজার থেকে ওষুধ এর নমুনা সংগ্রহ না করে কোম্পানী মালিকের নিকট থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিতর্কিত কোম্পানী থেকে নমুনা নিয়ে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে প্রেরণ করেন। ফলে জাতীয় ও জনস্বার্থে গৃহীত সাবেক মহাপরিচালকের পদক্ষেপ ভেস্তে যায়।
মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান যোগদান করার পর থেকে অদ্যবধি তিনি ও জাতীয় এবং জনস্বার্থে মহোতি সব পদক্ষেপ গ্রহন করছেন যা ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও পত্র পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা বেশ কিছু ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে লিখিত নির্দেশ প্রদান করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে প্রাপ্ত হয়ে বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জেলা পর্যায়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বাজার থেকে ঐ সকল কোম্পানির নমুনা সংগ্রহ ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবে গুণগত মান যাচাইয়ের নির্দেশ দেন।মহাপরিচালকের নির্দেশে ঢাকা সহ জেলা পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ সামগ্রী ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরিক্ষার জন্য জমা দেন। নমুনা পরিক্ষার রিপোর্টে অনেক ঔষধ নিম্নমানের বিবেচিত হওয়ায় ৩৭ টি ঔষধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন মহাপরিচালক।
তবে সান ড্রাগ ইউনানী, মাইসান ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, রোজমার্ক ইউনানী, ঢাকা অর্গানিক ফার্মা ইউনানী, জেবিএল ড্রাগ ইউনানী, আল সাফা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, নাফিউ ফার্মা ইউনানী, রবিন ফার্মাসিটিক্যাল (আয়ু),, আধুনিক ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, সিকো আয়ুর্বেদিক, বিসমিল্লাহ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী, জিএম ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, ওষুধী ল্যাবরেটরিজ (আয়ু), সুরমা ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, র‌্যাম ফার্মাসিটিক্যাল ইউনানী, সেইফকো ফার্মাসিটিক্যালস ইউনানী, এমী ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), প্রিভেন্টিজ বাংলাদেশ ইউনানি, নেপলস ল্যাবরেটরীজ ইউনানি, ম্যান হার্ট ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, জেন ফার্মা ইউনানী, জে-এন্ড-টি ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, বি এন ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, জেনেসিস ফার্মাসিটিক্যালস (আয়ু), দিহান ফার্মাসিটিক্যালস (আয়ু), অনিরবান মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজ আয়ুর্বেদিক, ইউনিটি ফার্মাসিটিক্যালস ইউনানী, এস এস ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, এ ডি ল্যাবরেটারীজ আয়ুর্বেদিক, এস বি ল্যাবরেটারীজ আয়ুর্বেদিক, এস বি হারবাল এন্ড নিউট্রিসিক্যাল, রয়েল ল্যাবরেটারীজ আয়ুর্বেদিক, রয়েল ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইগোফার্মা ইউনানী, ইউনিক ল্যাব ইউনানী, মিষ্টিক ফার্মা ইউনানী, একটিভ ইউনানী, জীনি ইউনানীক, নিকো আয়ুর্বেদিক, আর কে ইউনানী, শ্রীপুর দাওয়া খানা, শেড ফার্মাসিউটিক্যাল আয়ুর্বেদিক, ফেম আয়ুর্বেদিক, গুড হেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, পেট্রোন ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি ও লিমিট ল্যাবরেটরীজ ইউনানী এসব বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির এখনো ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ সামগ্রীর উতপাদন ও বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে।

মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ : এই সকল বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত কর্মকান্ডে দেশের জনস্বাস্থ্য আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। অপরদিকে ধধংস হচ্ছে দেশীয় ট্রেডিশনাল মেডিসিনের চিকিৎসা পদ্ধতি। ধধংস হতে চলেছে ইউনানি-আয়ুর্বেদিক ঔষধ শিল্প।