বেশ্যা পতিতা রক্ষিতা!

অন্যান্য বিবিধ

হাসিনা আফরোজ হাসি : এই বিষয় গুলো দেখে চমকে উঠলেন না তো ! এই শব্দ গুলো নিয়ে সবার সামনে আমরা আলোচনা করতে সংকোচ বোধ করি। আমি না হয় একটু সাহস করেই আজ
এগুলো নিয়ে লিখতে বসলাম।


বিজ্ঞাপন

নারী, আমাদের মা, বোন কিংবা স্ত্রী। আমার আপনার মতো এই সমাজের সন্তান। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি বাচ্চা মেয়ের আত্মহত্যা এবং সেই ঘটনাকে ঘিরে নানা কথোপকথন আমাকে ভীষণ ভাবে আহত করেছে।আমি দেখলাম এরপর সবাই এক রকম খেলায় মেতে উঠলো। অন্যের উপর দোষ চাপানোর খেলা ।ইংরেজীতে যাকে বলে ব্লেম গেম ।

বেশ্যা শব্দটির উৎপত্তি বৈশ্য থেকে। বর্ণপ্রথার কালে হিন্দু ব্যাবসায়ী শ্রেনীকে বলা হতো বৈশ্য । কালের পরিক্রমায় ক্ষুধার দায়ে রুটির জন্য শরীর বিক্রি করা মেয়েদের উপাধি হয়েছে বেশ্যা।এটা একমুখী শব্দ। অর্থাৎ শব্দটির সমার্থক পুং বলে কিছু নেই। ব্যাপারটা নিদারুন! শুধু নারীর জন্য প্রযোজ্য। পুরুষের জন্য নয়!

পুরুষ প্রকৃতিগত ভাবেই বহুগামী- Poligamaous সিংহের পালে যেমন একটা সিংহ থাকে , বানরের দলে তেমনি থাকে একটা বানর, মোরগ যেমন অনেক গুলো মুরগী নিয়ে ঘোরে । কিন্ত তাতে কোন দোষ নেই। বরং সেখানে তার পৌরুষ এর অহংকার। এই মিথ্যা অহংকার কে আমরা বাহবা দিয়ে আসছি বহুযুগ ধরে।

শেক্সপিয়ার হ্যামলেটে ব্রিটিশ কালজয়ী লিখেছিলেন ’Frailty thy name is women ছলনাময়ী নারী তোমার অপর নাম”। আজ ইচ্ছে করে শেক্সপিয়ার কে ডেকে শুধাই, আপনি ছলনার কি দেখেছেন? আসুন বাংলাদেশে। পুরুষের ছলনা আর লালসা দেখে যান’।

এবার চলুন এর পরের শব্দে যাই, পতিতা, শব্দটা শুনলেই কেমন যেন থমকে যেতে হয়, তাৎক্ষনিক মনে হয় শব্দটা কি অশ্লীল ! সুযোগ সন্ধানী, লোলুপ পুরুষ, নারীকে নিগৃহীত করে, ছিড়ে-চুষে, নাম দেয় পতিতা। আর এই নিগ্রহ নিয়েই নারী বেঁচে থাকে । অন্ধকারে আর তাঁরাই পতিতা।

এবার তৃতীয় শব্দটিতে যাই।
রক্ষিতা…পুরুষ রক্ষক হয়ে যখন কোন মহিলাকে নিজের কুক্ষিগত করে রাখে, ইচ্ছেমতো ভোগ করে কিংবা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করে তাঁকে আমরা বলি রক্ষিতা। রক্ষিতা শব্দটিও বহু প্রাচীন ।

সভ্যতার ইতিহাস যেদিন থেকে লেখা শুরু হয়েছিল রক্ষিতা শব্দটির প্রচলনও সম্ভবতঃ সেদিন থেকেই। ধারনা করা হয় উপপত্নী গ্রহনের অনুশীলন
চীন থেকে শুরু হয়েছিলো। তবে তা একচেটিয়া নয় হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়া এবং ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় এর ভুরিভুরি প্রমান মেলে। শ্রীপান্থের লেখা হারেম গ্রন্থ টিতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের হেরেম যার অর্থ অন্তঃপুর, অন্দরমহল বা নিষিদ্ধ স্থান এর বিশদ বর্ণনা পাই। আর মুঘল সম্রাটদের অন্তঃপুর বাসিনীদের কথা কার ই বা অজানা।

সব যায়গাতেই আমি পুরুষের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখি। সেই সাথে দেখি কামনা আর সম্ভোগের এক কুৎসিত লালসাকে, নারী সেখানে পন্য ।

এতো কিছু লিখছি, কারণ আমি স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ। আমি মনুষ্যবাদী। আমি নারীকে অবমাননাকর সকল শব্দের বিলোপ চাই। নয়তো এর সমার্থ পুং শব্দ চাই। আজ যারা অর্থ বিত্তশালী তারাই এই নষ্ট সমাজের প্রভু।এদের পা চাটে যে দল তাদের বলা যায় পুরুষ রক্ষিতা” কি করবো বলুন, রক্ষিতার যে কোন পুংলিংগ নাই।

রেগের জনক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী বব মারলি কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আপনি কি ধনী? উত্তরে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ধনী বলতে আপনি কি বুঝাতে চান?
প্রশ্নকর্তা তখন বললেন, “ধরুন আপনার লক্ষ টাকা থাকলো, কিংবা অঢেল সম্পত্তি”।
তিনি উত্তরে বলেছিলেন “আমি ধনী তবে এসবের জন্য নয় -My richness is life forever”

ভারতের দিল্লীর বড় মসজিদের পাশের এক সাধারন হোটেল ব্যাবসায়ী, যে কিনা তাঁর প্রতিদিনের লাভের ষোল আনাই বিনে পয়সায় মানুষকে খাইয়ে দিয়ে খরচ করে, তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলো আপনি এমনটা কেন করেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ইতনা পয়সা লেকে কেয়া কারেঙ্গে কাফন কোঁ তো কোই পাকেট নেহি হ্যায়। এরা ই আসলে আসল ধনী, এরা তাই নমস্য আর আমরা অতি নগন্য।

পরিশেষে, শুধু এটুকুই বলবো নারী হলো , মা এর জাত । নারীকে অসম্মান করা মানে মা কে অসম্মান করা।
তাই আমাদের অভিধান থেকে চিরতরে নারীকে অসম্মানজনক সকল শব্দ বিলুপ্ত হয়ে যাক, আমাদের মননে, মস্তিস্কে, সমাজে, সংসারে সুন্দরের চর্চা হোক। আমাদের ব্যবহার হোক মার্জিত সুন্দর।