মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী স্বাস্থ্য

২২ দিন পর সড়কে গণপরিবহন
বাসের ভেতর সেই একই চিত্র

 

বিশেষ প্রতিবেদক : যেই লাউ সেই কদু। যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে উঠছেন বাসে। কোনও সিট খালি রাখা হচ্ছে না। দাঁড়িয়েও যাচ্ছে লোকজন। কারও কারও মুখে নেই মাস্ক।
২২ দিন বন্ধ থাকার পর সড়কে ফের চলতে শুরু করেছে গণপরিবহন। অর্ধেক যাত্রী আর বর্ধিত ভাড়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শুধুমাত্র জেলার গাড়ি জেলাতে চলাচল করতে পারবে। আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন ও নৌযান চলাচল।
গণপরিবহন চালু হলেও চলাচলের ক্ষেত্রে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সেগুলো হলো-আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখা, কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের (৫০শতাংশ) বেশি যাত্রী বহন না করা, সমন্বয়কৃত ভাড়ার (বিদ্যমান ভাড়ার ৬০শতাংশ বৃদ্ধি) অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, ট্রিপের শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করা এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালক, অন্যান্য শ্রমিক কর্মচারী ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত লকডাউনের আদলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার শুরু দিন থেকেই বন্ধ ছিল গণপরিবহন।
বৃহস্পতিবার গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে চিরাচরিত চিত্রই চোখে পড়ে। সকালের দিকে বাসগুলো কিছুটা ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাসগুলোতে একই অবস্থা দেখা গেছে।
বেশ কয়েকটি রুট ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ভেতরে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না অনেকাংশেই। চলছে দাঁড় করিয়ে যাত্রী পরিবহন। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। ডাবল সিটে নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। বেশিরভাগ বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় চোখে পড়েনি কোনও জীবাণুনাশক স্প্রে’র। তবে দুই একটি বাসে স্প্রে ছিটিয়ে যাত্রীদের বাসে ওঠানো হচ্ছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি গাড়িতে সিট ভর্তি করে ওঠানো হয়েছে যাত্রী। এসব তদারকিরও যেন কেউ নেই।
বাসের হেলপার কিংবা চালকদের অনেকেরই ছিল না মাস্ক। এছাড়া অনেক যাত্রীকেও বাসে মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। আর অনেকের কাছে মাস্ক থাকলেও ছিল থুতনিতে কিংবা হাতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, আসাদগেট, শ্যামলী এলাকা ঘুরে এ ধরণের চিত্র চোখে পড়ে।
যাত্রীরা বলছেন, যদিও বাস চালু হওয়ায় সুবিধা হয়েছে, তবে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর বাস পেয়েছি। গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন হওয়ায় হয়তো রাস্তায় বাস কম। বাসে ওঠার পর দেখতে পেয়েছি কোনও সিট নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমরা পাশাপাশি সিটে যাচ্ছি। এই সুযোগটি নিচ্ছে বাসের হেলপারা।
টেকনিক্যাল মোড়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুরগামী প্রজাপতি পরিবহন, পরিস্থান পরিবহন, সাভার পরিবহন, বৈশাখী পরিবহন, লাব্বাইক পরিবহন ছাড়াও অনেকগুলো বাসে সব সিটে লোক বসানোর পর দাঁড় করিয়েও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনেকে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। লাব্বাইক পরিবহনের চালক ইসরাফিল বলেন, আমাদের মালিকরা কোনও জীবাণুনাশক স্প্রে আমাদের দেয়নি। যারা একই পরিবারের সদস্য তারা দুই সিটে পাশাপাশি বসেছে। তবে যাত্রীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা একে অপরের পরিচিত নন।
মতিঝিলগামী যাত্রী সোহাগ বলেন, যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ মনিটরিং করলে আমরা এর সুফল পাবো। এছাড়া তারা ইচ্ছেমতো যাত্রী পরিবহন করবেই।
কাওরান বাজারগামী যাত্রী কাওসার আহমেদ বলেন, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেয়েছি। এছাড়া যাত্রীও কম দেখছি। আমাদের অফিস খোলা এতদিন সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করে অফিসে যেতাম। আজ গণপরিবহন চালু হওয়ায় অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন।


বিজ্ঞাপন