নিরব ঘাতক থ্যালাসেমিয়া

স্বাস্থ্য

ডা. ওয়াজেদ হোসেন : ৮ই মে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস। আসুন আমরা থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে একটু জেনে নেই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার ও লক্ষন।


বিজ্ঞাপন

থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রক্তের রোগ। রক্তের মধ্যে যে তিনটি কণিকা থাকে তার অন্যতম হচ্ছে লোহিত রক্তকণিকা যার মধ্যে থাকে হিমোগ্লোবিন, যা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে কোষগুলিকে সক্রিয় রাখে। এই হিমোগ্লোবিনের মধ্যে কিছু প্রোটিন চেইন থাকে। এই প্রোটিন চেইনে ক্রোমোসোম ত্রুটির কারনে প্রোটিন একেবারে তৈরি না হওয়া বা কম তৈরি হওয়ায় যে ত্রুটিযুক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় তাকে থ্যালাসেমিয়া বলে।

এ রোগে আক্রান্ত রোগীর দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণা উৎপাদন হয় না। একারণে তাদেরকে নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করে বেঁচে থাকতে হয়।

জেনে রাখা জরুরী-

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত/জন্মগত রোগ।
থ্যালাসেমিয়া কোন ছোঁয়াছে রোগ নয়।
এটা কোন ক্যান্সারও নয়। যদি বাবা -মা উভয়ের মধ্যেই এই ত্রুটিপূর্ণ জিন থেকে থাকে শুধু তাদের সন্তানই এই রোগে আক্রান্ত হবে।

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা তা বুঝার উপায়ঃ

♦ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
♦ দুর্বলতা
♦ ঘনঘন ইনফেকশন
♦ শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া
♦ জন্ডিস
♦ মুখমণ্ডলে বিকৃতি
♦ খিটখিটে মেজাজ প্রভৃতি

চিকিৎসাঃ

রক্ত স্বল্পতা পূরণ এর জন্য প্রতি মাসে
১—২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়
শরীর থেকে ক্ষতিকর আয়রন নিষ্কাশন এর জন্য আয়রন চিলেটিং ড্রাগ দিতে হয় অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন

প্রতিরোধের উপায়ঃ

স্বামী স্ত্রী দুইজনের একজন যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন আর অপরজন যদি সুস্থ হন তাহলে সন্তানের এই রোগ হবার সম্ভাবনা নাই ।
(তাই বিয়ের পূর্বে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তারা দুইজনই এই রোগের বাহক কিনা জেনে নেওয়া)

বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষায় দুইজনই এই রোগের বাহক হওয়ার পরও যদি তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ পরীক্ষা করে বাচ্চা নিতে হবে।
প্রথম সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকলে পরবর্তীতে প্রতিবার ভ্রুণ পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চা নিতে হবে।
(সাধারণত গর্ভধারণের ৮ – ১২ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করা যায়। বাংলাদেশে শিশু হাসপাতাল ও কিছু বেসরকারী ল্যাব এ এই পরীক্ষা করা যায়)

আপনার আমার একটু সচেতনতাই পারে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত রাখতে।

তাই আসুন বিয়ের পূর্বেই রক্ত পরীক্ষা করি, থ্যালাসেমিয়ার ঝুকি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।