লকডাউনে জীবনযাত্রা, গরিবের লকডাউন

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

আজকের দেশ রিপোর্ট : লকডাউন ( Lockdown) মানে তালাবদ্ধ। অর্থাৎ, এক জায়গায় বা এক স্থানে আবদ্ধ করে রাখা, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এমনকি ঘোষণা মোতাবেক নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা।


বিজ্ঞাপন

মূলকথা, জরুরি অবস্থায় নেওয়া একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা যখন কোনো স্থান বা ভবনে প্রবেশ করতে বা ছেড়ে যেতে বাধা দেওয়া; কাউকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আটকিয়ে রাখা বা ঢুকতে না দেওয়া। এটাই হচ্ছে লকডাউন শব্দের সারকথা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লকডাউন বিষয়টি একেবারে নতুন। এমনকি দেশের অধিকাংশ মানুষ এ লকডাউন শব্দের শাব্দিক বিষয়টিকে গ্রহণ করতে প্রথমদিকে খুব বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ক্রমশঃ বিষয়টি ব্যাপক বিশ্লেষণ ও প্রচারণার কারণে এখন সাধারণ মানুষের মগজে যুক্ত হয়েছে।

গতবছর দেশে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটায় কিছুদিনের মধ্যেই সরকার লকডাউন ঘোষণা করেন। সে মোতাবেক গতবছরের মার্চ মাসে লকডাউন প্রথম বাংলাদেশে জারি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ২য় দফা লকডাউন চালু করেন সরকার।

এমনকি সরকার লকডাউন ঘোষণা করার পর এটা যথাযথভাবে পালন করার জন্য প্রশাসনিকভাবে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন। সে অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে লকডাউন বেশ কঠোরভাবে পালন করা হয়। এসময় সকল ধরনের যানবাহন করে দেয়া হয় বন্ধ।

করণা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকার লকডাউন ঘোষণা করেন। ফলে করোনা ঝুঁকি ক্রমশঃ কমতে থাকে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে, বর্তমানে বাংলাদেশে এ অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। এজন্য, জনমনে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে।

তবে লকডাউন চলমান থাকায় দেশের নিম্নবিত্ত মানুষেরা বেশ বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষের কর্ম যখন স্তব্ধ হয়ে গেছে, তখন তার আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে। জীবন ও জীবিকার জন্য হয়ে পড়েছেন তারা নিরুপায়,

এ কারণেই খেটে খাওয়া মানুষেরা লকডাউন চলাকালীন সময়ে সরকারের বিধি-নিষেধ জেনেও জীবন জীবিকা ও বাঁচার তাগিদে রাস্তায় নেমে পড়েন। তাদের কাছে তখন মৃত্যুর ভয় ও বিধিনিষেধ গৌণ হয়ে পড়ে, সংসারে যখন তাদের কেউ না খেয়ে থাকেন। তখন উপরোক্ত বিষয়গুলো তাদের কাছে মূল্যহীন।

এজন্য লকডাউন চলাকালীন সময়ে রাজধানী ঢাকা শহরের রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষের অবর্ণনীয় চিত্র দেখা গেছে, শন্কা ও আশঙ্কাকে ডিঙিয়ে তারা নেমে পড়েছেন জীবনযুদ্ধে, কেউ হয়েছেন আহত কেউবা হারিয়েছেন তার সর্বস্ব কেউবা আবার তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম,

এসব বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের কারণে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই লকডাউনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়। সেই বিষয়টিও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গদের নজর দিতে হবে।

পাশাপাশি, লকডাউনের বিষয়টিকে আরও গভীর পর্যালোচনা করে ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে নিম্নবিত্ত মানুষের কার্যক্রমকে কিভাবে সচল রাখা যায়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা, দেশটা আমাদের সকলের, এখানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত এর বেড়াজালে বিভাজন করা মোটেও ঠিক নয়।

তাদের পর্যবেক্ষণে, লকডাউন চলাকালীন সময়ে রাজধানী ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের বালাই ছিল না বললেই চলে, সে হিসেবে লকডাউনকে কিছুটা দুর্বল করে, মাস্ক বাধ্যতামূলক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করলে করোনা ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে তারা মনে করেন।