ডাকাতির ৪ মাস আগে ঘর ভাড়া নিয়েছিল চক্রের সদস্যরা

অপরাধ

আজকের দেশ রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৃদ্ধাকে হত্যা করে ডাকাতির ঘটনায় চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঘটনার পরপর এই ডাকাত চক্রের দুই সদস্য এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছিলো সিআইডি।


বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (১৬ মে) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে চক্রের মূলহোতা সুমন ও শিপনকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।

 

এর আগে গত ৮ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার ঝাউচর এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ পেঁচানো ও অচেতন অবস্থায় পরদিন বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন (৭০) ও তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে (৬৪) উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে আজিম উদ্দিনের জ্ঞান ফিরলেও স্ত্রী হোসনে আরা বেগম মারা যান। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, এ ঘটনার পর থেকে ওই বাসার এক ভাড়াটিয়া দম্পতি হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন নিখোঁজ ছিলো। তারা পালিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর চলে যায়।

গত ১২ মে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা দুইজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তিনি বলেন, জবানবন্দিতে হারুন অর রশীদ ও সুলতানা খাতুন দম্পতি স্বীকার করেছেন, তারা একটি ডাকাত চক্রের হয়েও নারায়ণগঞ্জের ওই বৃদ্ধার বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। তাদের চক্রের মূলহোতা ছিলেন শিপন ও সুমন।

যারা ওই বাড়িটি আগেই রেকি করেছিল। তারা নিজেরাই ওই বাড়িতে ভাড়া নেওয়ার জন্য গিয়েছিলো কিন্তু বাড়িওয়ালা আজিম উদ্দিন তাদের ভাড়া দেয়নি। এরপর সুমন ও শিপনের পরামর্শে হত্যাকাণ্ডের চারমাস আগে আজিম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া নেয় হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন।

ঘটনার বিষয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রায়ই চা খাওয়াতেন হারুনের স্ত্রী সুলতানা।

গত ৭ মে রাতে বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রথমে চায়ের সঙ্গে ঘুমেরর ওষুধ খাওয়ান হারুনের স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তবে তিনি অচেতন না হওয়াতে ওই রাতে তারা ডাকাতি করতে পারেনি। পরের দিন ৮ মে ফের চা খাওয়ায় আজিমকে। তিনি অচেতন হয়ে যায়।

রাতে চক্রের মূলহোতা শিপন ও সুমন ওই বাড়িতে যায়। ঘরে ঢুকে বৃদ্ধা নারীর হাত-পা বেঁধে ফেলেন। তার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এরপরও তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে লাইট বন্ধ করে দেয় এবং পুরো মুখ-মণ্ডলে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলেন তারা। ডাকাতির সময় হারুনের স্ত্রী বাইরে পাহারায় ছিল।

ইমাম হোসেন বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী শিপন ও সুমন। টোপ হিসেবে হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুনকে ব্যবহার করেছেন তারা। গ্রেফতারের পর শিপন ও সুমন জানিয়েছেন ডাকাতির ঘটনায় হারুনকে ১১ হাজার টাকা দিয়েছিল তারা। ডাকাতি হওয়া কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও স্বর্ণালংকার তারা বিক্রি করে ফেলেছে, সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে বাড়িটি থেকে কি পরিমাণ স্বর্ণালংকার নিয়েছে, তা নিহতের পরিবারের কেউ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি।

তিনি বলেন, হত্যায় চারজন জড়িত ছিল। চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমরা হত্যার ২০ দিনের মাথায় আসামিকে গ্রেফতার করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা ভয় পাবে, তারা বুঝতে পারে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। ঢাকায় ১০/১২ লাখ বাড়িওয়ালা রয়েছে সবাইকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।