করোনা মহামারী ও লকডাউনের সুযোগে ভেজাল-নিম্নমানের ঔষধ তৈরির মহােৎসব

এইমাত্র জাতীয় সারাদেশ স্বাস্থ্য

“বিতর্কিত ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ঔষধ কোম্পানির মালিকেরা দেশের করোনা মহামারী ও লকডাউনের সুযোগে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তি ভিত্তিক ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরি করে নাম মাত্র মূল্যে বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি রাজশাহীর আনিসুর এসবি ল্যাবরেটরীজের পাওয়ার-৩০ সহ নামীদামী ঔষধ কোম্পানির ঔষধ ও ঔষধ তৈরির কাঁচামালসহ পুলিশের অভিযান পরিচালনা কালে ধরা পড়ে। উপস্থিত থানাপুলিশ ও আমজনতার সামনেই বলে যে, এসবি ল্যাবরেটারীজের (আয়ু) এর কর্তৃপক্ষের সাথে সিনডেনাফিল সাইট্রেড যুক্ত পাওয়ার-৩০ তৈরি করে সরবরাহের চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে আসছিল। এরপর পাবনার প্রত্যন্ত এক গ্রামের একটি বাড়িতে যৌন উত্তেজক কেমিক্যাল (সিনড্রেনাফিল সাইট্রেড) সহ ভেজাল জিনসিন সিরাপ ও সিরাপ তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ইমরুল কায়েস নামে সিরাজগঞ্জের এক লোককে পাবনার ডিবি পুলিশ কর্মকর্তারা ঔষধ তৈরির সময় হাতেনাতে আটক করে। ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়া ইমরুল কায়েসও বলে যে, পাবনার বেশ কিছু ঔষধ কোম্পানির মালিকের সাথে তার এসব যৌন উত্তেজক কেমিক্যাল দিয়ে সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল তৈরি ও সরবরাহের চুক্তি ছিল। এ দুটি ঘটনাই প্রমাণ করে বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে কিভাবে অবৈধ ঔষধের ব্যবসা চলছে”

 

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ তৈরির কারখানা কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় এসব ঔষধ কোম্পানিতে ভেজাল ওষুধ ও নেশার সিরাপ তৈরি করা হচ্ছে। আর মাদক দ্রব্যর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশের মাদক সেবনকারীরা কাশির সিরাপকে নেশার বস্তুু হিসেবে বেছে নিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকার কথিত হারবাল ল্যাবরেটরিতে এসব নেশা ও ভেজাল সিরাপ উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব সিরাপ বা ওষুধ খেয়ে একের পর এক শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব সিরাপ সেবন করা হলে মানব দেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এসব কোম্পানী গুলো লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তাই এসব ক্ষতিকারক ঔষধ বাজারে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসব কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে অসাধু ফার্মেসী ব্যবসায়ী, হাকিম ও ডাক্তাররা প্রতিনিয়তই প্রেসক্রিপশন করে যাচ্ছেন। এসব ঔষধ খাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ক্ষতিকারক প্রভাব যেমন শরীরে জন্ডিস, কিডনি সমস্যা ব্রন চর্মরোগ সহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশি। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ইউনানী ও আয়ুবেদীক এর ঔষধ সামগ্রী এতো কম দামে কী করে বিক্রি হয়! কিন্তু এসব ঔষধ গুলো ৩৫০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৩০/৪০/৫ টাকায়।
কিন্তু ইবনেসিনা (ইউনানী) কোম্পানির ভাল মানের ভিটামিন সিরাপ ভিনসিনা বাজার মূল্য ১৫০টাকা ও হামদর্দ সিনকারা বাজার মূল্য ১৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
গত বছর ৩ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নবীন ল্যাবরেটারীজ (ইউনানি) এর ভিটামিন সিরাপ মেরী গোল্ড সিরাপ খেয়ে কুষ্টিয়ার গাবতলিতে শিশুসহ মৃত্যু সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঢাকাসহ সারাদেশে ভেজাল হারবাল ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ এখন বাজারে সহজলভ্য। কতিপয় কোম্পানি লোভনীয় পুরস্কারের অফার এর মাধ্যমে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কোম্পানির লোকদের দিয়ে এসব ওষুধ বাজারজাত করছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সারা দেশে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ৬শত।
কোম্পানির লাইসেন্স থাকলে ও অনেক কোম্পানির কাগজপত্র আপগ্রেড করা নাই, এমনকি কাগজ কলমে ঠিকানা এক জায়গা কিন্তু বাস্তবে গিয়ে ওই ঠিকানায় কোম্পানির হদিস পাওয়া যায় না। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে এই সব কোম্পানির হদিস পাওয়া যায়। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কতৃক অভিযানে মডার্ন হারবাল ৭৫ লাখ, অনিবার্ণ মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিস (আয়ু) ৩০ লাখ, নেচার ল্যাবরেটরিজ (ইউনানী) ২০ লাখ, ইকো র্ফামাসিউটিক্যাল ৮ লাখ, ভারটেক্স হোমিও ৮ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং শেড আয়ুর্বেদিকে একাধিক বার সহ শতাধিক ঔষধ কোম্পানীকে জরিমানা করা হয়। এদিকে নেচার ল্যাবরেটরিজ (ইউনানি) দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে ওষুধের লেবেল কার্টনের অনুমোদন ছাড়াই শরবত মুছাফফি, এন- ছাফী (তরল)), শরবত বেলগিরী, (ডাইসিড (তরল)), জিংগো বিলোবা এন-জিংগো (ক্যাপসুল)), শরবত হায়াতীন মুরাক্কাব (এন-ভিট-বি)), হাব্বে মুনিশ (এন-মুনিশ ক্যাপসুল)) ,হাব্বে তাবাশীব (এন-সিড (ক্যাপসুল)), (হাব্বে সূরঞ্জান) এন-মুভ (ক্যাপসুল), পুদিনা এস,সহ একই ডি, এ,আর, নাম্বার ব্যবহার করে একাধিক ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৭.০২.২০২০ তারিখে ঔষধ প্রশাসনে বানিজ্যিক নামের জন্য আবেদন করেন। উক্ত কোম্পানি দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রকার ভেজাল ঔষধ উৎপাদন আসছে বলে বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমে জানা যায়।
রাজধানীর মিরপুর-১১ পলাশ নগর এক মেজরের বাড়ীর নিচতলায়, নেচার ল্যাবরেটারিজ (ইউনানী) এর কারখানায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে এবং আদালত ফ্যাক্টরী সিলগালা না করার শর্তে যে, নিদেশনা দিয়েছিলো সেগুলো না মেনে অগের থেকে আরও বেপরোয়া ভাবে ভেজাল ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা পরিশোধের পর ঔষধ প্রশাষনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে খুশি করে তার ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সুরমা ল্যাবরেটরিজ (ইউনানী) কোম্পানীর সেব-এস ৪৫০মিলি, পুদিনা ৪৫০মিলি, সিরাপে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয় তা ঔষধ প্রশাসন যানে না জানলে ওই কোম্পানির এ দুটি সিরাপ অনকে আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। দিহান ফার্মাসিউটিক্যাল (আয়ু) বলারিস্ট সিরাপ ও দি-টন সিরাপ একই ডি,এ,আর নাম্বার ব্যবহার করছে। শেড ফার্মাসিউটিক্যাল (আয়ু) এর মালিক নকল জিম্যাক্স, তৈরি করতে গিয়ে র‍্যাবের হাতে আটক হয় ২০১৫ সালে। উক্ত কোম্পানি জিও ভিটা, গ্লাক্টো, গ্লাকটন, হাইপিক, জিন-কিং সিরাপ, রুচিভিটা, ফুলভিটা নামক ক্যাপসুল ও ট্যাবলেটে নিম্নমানের কেমিক্যাল দিয়ে এসব ঔষধ প্রস্তুত ও বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। শেড আয়ুর্বেদিক এর মালিক ডা. সঞ্জয় বাড়ৈ একজন অস্ত্র মামলার আসামি ও ছিলেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে উক্ত অস্ত্র মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন বলে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ থাকা অবস্থায় রাতের আধারে শেড আয়ুর্বেদিকের কারখানায় নকল জিম্যাক্স ৫০০ এমজি তৈরিকালে র‍্যাবের হাতে আটক হয়। এবং তার বিরুদ্ধে ড্রাগ কোর্টে মামলা হয় উক্ত মামলা থেকে ও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে অব্যহতি পেয়েছেন বলে তিনি তার ঘনিষ্ঠজনের কাছে বলে বেড়ান। ওই ঘটনার পরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পদটি হারান।