একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টর

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের যুদ্ধে ২৭ মে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। পাকিস্তানি আর্মি ও মুক্তিবাহিনী উভয় পক্ষের জন্যই ভৌগোলিক কারণে কুড়িগ্রাম ছিল গুরুত্বপূর্ণ।


বিজ্ঞাপন

১৪ এপ্রিল বেলগাছা গণহত্যার পর কুড়িগ্রাম শহর থমথমে হয়ে পড়ে। ২০ এপ্রিলের পর পাকিস্তানি বাহিনী স্থায়ীভাবে কুড়িগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। পাকিস্তানি সৈন্যরা কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থান নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে তারা ধরলা নদী অতিক্রম করে নদীর অপরপ্রান্তের তিনটি থানা নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ীর দখল নিতে পারেনি। এ তিনটি থানার বিশাল এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সামরিক প্রশিক্ষণ ও রসদ নিয়ে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করতেন। ফলে থানা তিনটি দখলে নেওয়া পাকিস্তানিদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তারা মরিয়া হয় থানা তিনটি দখলের জন্য।

পাকিস্তানি বাহিনী বহুবার চেষ্টা করেও ধরলা নদী কোনোভাবেই পাড়ি দিতে পারেনি। ধরলার পূর্ব ও উত্তর প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক প্রতিরোধের কারণে বারবার পিছিয়ে পড়ে অবশেষে পাকিস্তানি বাহিনী দীর্ঘ ব্যর্থতার পর ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২৬ মে ধরলা নদীর পশ্চিম প্রান্তে ব্যাপক শক্তির সমাবেশ করে। তারা ওই দিন রাত থেকেই কার্যত নদী অতিক্রম করার উদ্যোগ নেয়।

পরদিন ২৭ মে ভোর থেকে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানিদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সুবেদার আরব আলী ও সুবেদার বোরহানের নেতৃত্বে সেদিন ব্যাপক লড়াই হয়। লড়াইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ভারী অস্ত্রের ব্যাপক হামলায় মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

অপরদিকে ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দিনের নির্দেশে মোজাহিদ ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সাপোর্ট টিম ধরলা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভূরুঙ্গামারী থেকে ধরলা অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী যে ধরলা নদী অতিক্রম করে নাগেশ্বরী অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল সেটি জানতে পারেনি তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে অগ্রসরমান সাপোর্ট টিমটি। তারা যখন নাগেশ্বরী পার হয়ে হাসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণে চণ্ডীপুর অতিক্রম করছিলেন, তখনই পাকবাহিনীর অ্যামবুশের শিকার হন।

এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিন, সিপাহি আবুল কালাম আজাদ, ড্রাইভার রব্বানী, ড্রাইভার আফজাল হোসেন, বাবুর্চি আতিকুর রহমান, আবদুল বারী, মোজাম্মেল হক, আসাদ আলী, আবুল ড্রাইভার, খয়বর আলী, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল ওহাব প্রধান, রইচ উদ্দিন, আবদুল জব্বার, আবুল কাশেম, সেকেন্দার আলী, আবদুল আলী, এম আবুল কাশেম, আনছার আলীসহ ১৮ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। পরে স্থানীয় জনতা তাদের ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়কের পাশেই সমাহিত করেন। ২৭ শে মে দিনটি হাসনাবাদ-চণ্ডীপুর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়।