মোটা হওয়া ও ক্ষুধাবর্ধক ওষুধের নামে মানুষ সরাসরি বিষ খাচ্ছে

এইমাত্র জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

 

“বাচ্চা কম খাচ্ছে, খিদে হচ্ছে না বাচ্চার, এমন অনুযোগ নিয়ে চেম্বারে হাজির হন বাচ্চার মা। এদের জন্য কোনো ওষুধ না লাগলেও শুধুমাত্র মন রক্ষার জন্য কোনো এপিটাইজার গ্রুপের ঔষধ দিয়ে দিতে হয়। অথবা অনেক সময় ফাইটম। এটা আগে খুব ছিলো বাচ্চাদের ক্ষুধা বাড়ানোর বিষয়টা। এখন বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের মা বাবারা ও যাচ্ছে ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য। ক্ষিদে পাওয়া এমন এক শরীর বৃত্তিক প্রক্রিয়া, যা বাড়াতে কোনও ওষুধ লাগেনা। খিদে বাড়ানোর কোনো ওষুধের কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনও প্রামান বইয়ে নাই । এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক কোন পদ্ধতিতে এমন কোনো মেডিসিন নাই যেটা আপনাকে রাক্ষস বানিয়ে দেবে আর আপনি সব খেয়ে ফেলবেন।
হাতুড়ে ডাক্তার (ডিগ্রী থাক বা না থাক এসব রোগীরা চিন্তা করেনা) এসব হাতুড়ে ডাক্তার বড় বড় বোতল বিক্রি করে, যা খাইলেই প্রথম দিন থেকে ক্ষুধা বেড়ে যায়”


বিজ্ঞাপন

 

 

 

আজকের দেশ রিপোর্ট : বাজারে প্রচলিত ক্ষুধাবর্ধক ওষুধের নামে মানুষ সরাসরি বিষ খাচ্ছে। এসব ওষুধ বেশিরভাগ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক নামের কিছু অখ্যাত কোম্পানি তৈরি করে, যা পাওয়া যায় এলোপ্যাথিক দোকানে ইদানিং টাকার লোভে হোমিও ডাক্তাররাও এসব রাখছে। আর কিছু নাম না জানা মির্ডফোর্ড কেন্দ্রিক এলোপ্যাথিক কোম্পানিরা এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ তৈরি করে। এসব ঔষধের মূল উপাদান হলো সিপ্রোহেপটাডিন এবং কিছু স্ট্রেরায়ডের (যেমনঃ ডেক্সামেথাসন) কম্ভিনেশন এলোপেথিক। ইউনানী, আয়ুর্বেদিক বা হোমিওপ্যাথিক নাম যাই হোক উপাদান একই।

এটা হচ্ছে এদের নিজস্ব গোপন ফর্মূলা। বাংলাদেশ ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ফরমুলায় এসব মহা ঔষধের প্রস্তুত প্রনালীর বর্ননা নেই। এসব বিতর্কিত ভিটামিন ঔষধ সেবন করলে শরীরে পানি জমে যায়, মুখে ব্রন ওঠে, ফুসফুসে পানি জমে, কিডনির নেফ্রন কাজ করেনা, নেফ্রাইটিস হয়, ফলাফল কিডনি নস্ট হয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে জনসাধারণ। বৈধ লাইসেন্স এর ব্যানারে তৈরি হচ্ছে এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল।

ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এসব জানে। তবে তারা নাম মাত্র ব্যবস্থা নিলেও অবস্থা ঘুরে ফিরে একই, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা, কিছু ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত সাময়িক বাতিল ও স্থগিত ও হয়েছে। কিছু ঔষধ নিষিদ্ধও হয়েছে, এরপরেও নিষিদ্ধ হয়নি এমন অনেক কোম্পানির ঔষধ নামের বিষ এখোনো বাজারে আছে। সুনামধন্য অনেক ঔষধ কোম্পানির মালিকরা ও এখন দুই ধরনের ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করছে এর মধ্যে রাজশাহীর এসবি ল্যাবরেটারীজ (আয়ু) এবং এসবি হারবাল এন্ড নিউট্রিসিক্যাল উল্লেখযোগ্য। দোকানদাররা খুব অল্প টাকার কিনে বেশি টাকায় বিক্রি করে। যেমন ৪৫০ মিলি সিরাপের দাম পাইকারি (TP) ৩৫ থেকে ৭০ টাকায় কিনে (কোম্পানি ভেদে দাম আলাদা), আর এদের বিক্রয় রেট (MRP) ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। এখানেই লাভের পরিমাণ দেখলেই বোঝা যায় কোম্পানির মালিকেরা কিভাবে কোটিপতি বনে যায়।

বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত “রয়েল আমলকি প্লাস” সরকার নিষিদ্ধ অথচ এখনো বাজারে রয়েল আমলকী প্লাস সিরাপ (আমলকী রসায়ন) দেদারসে বিক্রি হচ্ছ। আবার একই (আমলকি রসায়ন ও শরবত আমলা) প্রথমটা আয়ুর্বেদিক ঔষধের শাস্ত্রীয় নাম অপরটি ইউনানি ঔষধের শাস্ত্রীয় নাম। অনেক ঔষধ কোম্পানির মালিকেরা এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ নামক ঔষধ তৈরিকালে মাতারিক্ত ডেক্সামিথাসন গ্রুপের কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। ফলে এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ নামক গবাদিপশু মোটাতাজা করন কেমিক্যাল খাচ্ছে জনসাধারণ। এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ সেবনে মানুষ অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে স্থুলাকার ধারণ করছে এসব বিতর্কিত ভিটামিন সিরাপ সেবনে অতিরিক্ত ঘুম এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় ফলে বিতর্কিত এসব ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তা না করেই অসংখ্য অসচেতন মানুষ এসব বিতর্কিত ভিটামিন ঔষধ সেবন করে চলছেন।

আমলা ভিট, আমলকী, বডি প্লাস, বডি বিল্ডার, আমলকী প্লাস আমলা, আমলা প্লাস, রুচিতা, পুদিনা প্লাস, বডি বিল্ডো, এনার্জি প্লাস, এনার্জি সিরাপ, রুচি গোল্ড রুচিভিটা, রুচি ট্যাব, রুচিতাট্যাব নামে, কেউ কেউ আবার ট্যাবলেট ক্যাপসুল ও তৈরি করেছে!

এর মধ্যে শেড ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ুর্বেদিক তৈরি করছে জিও-ভিটা, রুচিট্যাব, গ্লাকটো এবং শেড ফার্মার মালিকানাধীন জি এম ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর ব্যানারে গ্লাকটন নামক ভিটামিন সিরাপ তৈরি ও বাজারজাত করছে। শেড ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর মালিক ডা. এসবি জয় ওরফে সঞ্জয় বাড়ৈর বিরুদ্ধে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত করার অভিযোগ ছাড়াও প্লাস্টিকের বোতল কোম্পানির মালিকের ২৭ লাখ টাকা মেরে দিতে নানাবিধ তালবাহানা করছে। এমন কি তার ম্যানেজার এইচ আর কে দিয়ে ওই প্লাস্টিকের বোতল কোম্পানির ম্যানেজার কে পাওনা টাকা চাওয়ার কারনে গালিগালাজ সহ হুমকি ও দেওয়ায় সঞ্জয়। একারণে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও করে ভুক্তভোগী পাওনাদার। এদিকে মিডফোর্ট এলাকায় কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের ও পাওনা টাকা দিচ্ছে না সঞ্জয়। মিরপুর ইউনানি – আয়ুর্বেদিক কলেজ হাসপাতালের বিশেষ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে। সঞ্জয় তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন অতি শীঘ্রই তিনি কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ যুবলীগের সভাপতি পদ হাতিয়ে নিতে সেখানে তিনি কোটি টাকা খরচ করেছেন। তবে কার কার পেছনে এই টাকা খরচ করেছেন সেটা তিনি বলেন নি। অথচ পাওনাদাররা ফোন করলে ও তিনি তাদের ফোন রিসিভ ও করছেন না। সঞ্জয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ থাকাকালীন শেড ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানায় নকল জিম্যাক্স ৫০০ এমজি তৈরিকালে বিপুল পরিমাণ নকল জিম্যাক্স ৫০০ এমজি ক্যাপ্সুলসহ র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ধরা পড়ে জেল জরিমানা খাটে। এর পূর্বে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়ে জেল খেটে পরে উভয় মামলা থেকে টাকার জোরে অব্যাহতি পায় বলে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র জানায়।