হাইব্রিড ধরন শনাক্ত

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

অবৈধ যাতায়াতে সীমান্তে সংক্রমণ
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে
দেশে ২৩ জনের দেহে ভারতীয় ধরন শনাক্ত

 

বিশেষ প্রতিবেদক : ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন (ভেরিয়েন্ট) শনাক্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এটি করোনার ভারত ও যুক্তরাজ্যের ধরণের সংমিশ্রণ। করোনার হাইব্রিড এ ধরন বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।
ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন থানহ লং শনিবার করোনার এই মিউটেশনকে ‘খুবই বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তিত হয়ে নিজের নতুন নতুন ধরন তৈরি করে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের হাজারো মিউটেশন চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে একটি সরকারি বৈঠকে কথা বলেন ভিয়েতনামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নগুয়েন। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম করোনার একটি নতুন ধরন শনাক্ত করেছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার দুটি বিদ্যমান ধরণের একটি মিশ্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে ভিয়েতনামে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনটিতে।
নগুয়েন বলেন, আগে শনাক্ত হওয়া করোনার সংস্করণগুলোর চেয়ে নতুন এই হাইব্রিড ধরন বেশি সংক্রামক, বিশেষ করে বাতাসে।
এসময় ভিয়েতনামে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে করোনার এ ধরন পাওয়া গেছে বলেও জানান নগুয়েন। তিনি জানান, নতুন শনাক্ত ধরনের জেনেটিক কোড শিগগির প্রকাশ করা হবে।
উল্লেখ্য, করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনামের সফলতার ইতিহাস আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভিয়েতনামে করোনার সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত করোনায় ৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৪৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ভিয়েতনামে টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
অবৈধ যাতায়াতে সীমান্তে সংক্রমণ বেড়েছে : সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে ভারতে মানুষের অবৈধ যাতায়াতই এর অন্যতম কারণ।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ কথা জানান।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ার কারণ কী প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে যাতায়াত হচ্ছে, তাদেরকে খুব ভালোভাবে স্ক্রিনিংসহ কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে করোনা শনাক্ত হলে তাদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব এলাকায় বৈধ ছাড়াও অবৈধভাবে অনেকে ভারতে যাতায়াত করেন।’
আমাদের চারদিকেই ভারত। তাদের সঙ্গে আমাদের যাতায়াত বা যোগাযোগ অনেকভাবেই বিদ্যমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় কেবলমাত্র নৌকায় করেও যাতায়াত হয়।’
অবৈধভাবে যাতায়াতের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঈদের সময় অনেকেই গ্রামে গিয়েছেন এবং তারা আবার ঢাকামুখী হয়েছেন। তাদের মাধ্যমেও এটা ছড়িয়ে যেতে পারে। আর এসব কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে বলে মনে করি।’
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে সরকার। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রোববার দুপুরে নিজ দফতরে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে আবারও পর্যালোচনা করা হবে।’
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে : বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৪৪৪ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন।
রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। এদিন মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৭ জনের।
এর আগে শনিবার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় ৩৮ জন মারা যান এবং ১ হাজার ৪৩ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানায় অধিদপ্তর।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ১০ হাজার ৮১০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৯ জন। এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৩১ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৪২১ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭২ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৮ জনের।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৪২ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ৯ হাজার ৩৫৮ জন।
এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৭১ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, ইতালি অষ্টম, জার্মানি নবম এবং স্পেন দশম স্থানে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন

দেশে ২৩ জনের দেহে ভারতীয় ধরন শনাক্ত : দেশে করোনায় আক্রান্ত ২৩ জনের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা গেছে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সের মধ্যে ২৭টি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট, ২৩টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ৫টি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্টসহ ৮৫টি অন্য দেশের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভারত থেকে আগত ব্যক্তি এবং তাদের সংস্পর্শে আসা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে পাওয়া গেছে।
তাহমিনা জানান, করোনার ভ্যারিয়েন্ট কোনো নতুন বিষয় নয়। যত জিনোম সিকোয়েন্স করা হবে, তত ধরণের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হবে। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব হবে। ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতটুক সম্ভব ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে হবে। ঘরের বাইরে বের হলে সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। ভ্যাকসিন নেয়ার সময় আসলে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।