সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে ৩২ জেলা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনায় মৃত্যু কমলেও আক্রান্ত বেড়েছে
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শিথিলতায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে: স্বাস্থ্য অধিদফতর


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক: সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেছে। এবার রাজধানীর তুলনায় জেলাগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীতে রয়েছে ৩২ জেলা। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হার এভাবে ঊধ্বমুখী হওয়া আশংকাজনক। দেশের সামগ্রিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে অবশ্যই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৪৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৫৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ১৫ হাজার।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২ জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ১৬৫ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১২ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টার তুলনায় আগের একদিনের তথ্য পর্যালোচনা করে এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৯টি জেলা, ময়মনসিংহের একটি, চট্টগ্রামের ৫টি, রাজশাহীর ৩টি জেলা রয়েছে। সারাদেশে ১৯ হাজার ১৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় মোট দুই হাজার ৩২২ জন রোগী শনাক্ত হয়।
বিভাগওয়ারী দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে নয় হাজার চারটি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৬৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯১ জন, রাজশাহী বিভাগে চার হাজার ১৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭৩ জন, রংপুর বিভাগে ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১১৪ জন, খুলনা বিভাগে এক হাজার ৪৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪৪ জন, বরিশাল বিভাগে ২৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমানে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, গত সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও বর্তমানে সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও ওই সকল জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতকারী মানুষের মধ্যে করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
ড. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, করোনার সংক্রমণরোধে সরকার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন, করোনার নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত এবং বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে আসা যাত্রী ও তাদের স্বজনদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়াসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধপথে যারা আসছেন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের করোনার পরীক্ষায় উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শিথিলতায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পাওে : দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে শিথিলতার পরিচয় দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বুধবার করোনা বিষয়ক ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ আশঙ্কার কথা বলেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
চার জুন থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং সেটা গতকাল পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের বেশি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছে। এটা সবার মঙ্গলের জন্য করা হচ্ছে।
আর এই বিধিনিষেধে জনগণের সহায়তার জন্যই করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনও জায়গায় শিথিলতার পরিচয় দিলে সেটি আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জয়পুরহাটে শতকরা হিসেবে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ শতাংশের বেশি, রাজশাহীতে ২৩ শতাংশের বেশি। এই জায়গাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। এসব জায়গায় লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করায় স্থিতি অবস্থা আছে। এটি যদি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে ঊর্ধ্বগতি থেকে আমরা রেহাই পেতে পারি।’
দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি শিগগির আমরা প্রথম ডোজের টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে পারবো। দ্বিতীয় ডোজের টিকার জন্য যারা অপেক্ষমাণ, তারাও যথা সময়ে টিকা পেয়ে যাবেন।
ফাইজারের টিকা নিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা মহানগরীর নির্দিষ্ট হাসপাতালে এই টিকা দেওয়া হবে।
করোনায় মৃত্যু কমলেও আক্রান্ত বেড়েছে : বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৪৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৫৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ১৫ হাজার।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২ জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ১৬৫ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১২ শতাংশ।
এর আগে, মঙ্গলবার দেশে করোনায় ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া ২ হাজার ৩২২ জনের করোনা শনাক্তের কথাও জানানো হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ১০ হাজার ১৬৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১২৭ জন। আর গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৮৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৯৫। ফলে আক্রান্ত ও মৃত্যু আবারও বেড়ে গেছে।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৫৭০ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭৬২ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ কোটি ৮১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৫ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৫২ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ৯০ লাখ ৮৮ হাজার ১৭৬ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৭ জনের।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ২৬০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩০৭ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৭ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ১৩৭ জন।
এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৩ লাখ ২৩৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ হাজার ৩৪১ জন।
এছাড়া, আক্রান্তের তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, ইতালি অষ্টম, আর্জেন্টিনা নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩২তম, যেখানে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ জনের এবং মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।