ভয়াবহ হয়ে উঠছে ডেঙ্গু

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী স্বাস্থ্য

দু’দিনে ভর্তি ৯১ জন

মহসীন আহমেদ স্বপন : বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই লাগামহীন হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। আষাঢ়ের প্রথমে বৃষ্টির পরেই রাজধানীতে মিলছে ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভার উপস্থিতি। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা। জানা গেছে, গত শুক্র-শনিবারের মধ্যেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯১ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নগরবাসীর অসাবধানতা আর অসচেতনতাই এর বড় কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছর বর্ষার আগে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ টি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ টি ওয়ার্ড রয়েছে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। সিটি করপোরেশন বলছে, রিপোর্ট আমলে নিয়েই ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। আর এবারে একই সঙ্গে কাজ করবে দুই সিটি।
রোগ প্রতিরোধেও নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। রাজধানী ও এর আশেপাশে ২৮ টি সরকারি ও ৩৬টি বেসরকারি হাসপাতালের ১ হাজার ৩৫০ জন চিকিৎসক ও ১৫৯ জন সেবিকাকে দেয়া হয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিশেষ প্রশিক্ষণ। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে বিকল্প নেই সচেতনতার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুন-জুলাই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে যায়। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়।
এ বছর জুনের শুরু থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে সাতজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে দুই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সেরোটাইপ-৩-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সেরোটাইপ-৩-এর প্রভাব বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার দেশের সামগ্রিক আবহাওয়া ডেঙ্গুর যথেষ্ট উপযোগী। এ রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সরকারিভাবে সমীক্ষা চালিয়ে ডেঙ্গুর সেরোটাইপ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৭০৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৪, মে-তে ১৩৯ জন ভর্তি হন। শুধু জুন মাসেই এ পর্যন্ত ৪৪০ জন ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ দিনে গড়ে ১৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ ও ২০ জুন ৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে ৫৮৭ জন বাড়ি ফিরে গেছেন। গতবছর এ রোগে ৯ হাজার ২২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ২৪ জনের মৃত্যু ঘটে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, এর আগে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ১ ও ২নং সেরোটাইপের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটলেও, গতবছর ৩নং সেরোটাইপের দেখা পাওয়া যায়। সেরোটাইপ সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারলে রোগীদের চিকিৎসায় এবং মৃত্যুঝুঁকি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
জানা গেছে, এবারও ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সেরোটাইপ-৩-এর প্রভাব বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে রোগীদের নিরাপত্তায় সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
বড় পরিসরে প্রচারণায় শিগগিরই একযোগে মাঠে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, প্রত্যেকটা ডিরেক্টরের কাছে আমরা মেইল ও চিঠি পাঠিয়েছি। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দ্রুত ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণের বিশেষ কিট বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বছরে তিনবার এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩-১২ মার্চ পর্যন্ত চালানো জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেশকিছু এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপে ব্যবহৃত সূচকের মাত্রা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ জরিপের ফল অনুসারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক (বিআই) সর্বোচ্চ ৮০ পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গে-ারিয়াসহ আশপাশের এলাকা এবার বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে বলেও জানান ডা. সানিয়া তাহমিনা। এরপর ঝুঁকিতে আছে যথাক্রমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড, ১৭নং ওয়ার্ড, ৪ ও ৩৯নং ওয়ার্ড, দক্ষিণ মুগদাপাড়া ও বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড ও হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ী ও ৪৮নং ওয়ার্ড।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে তেজগাঁও-এ। সেখানে লার্ভার ঘনত্ব সূচক (বিআই) সর্বোচ্চ ৪০ পাওয়া গেছে। এরপর আছে তুরাগ, মিরপুর, পল্লবী, বনানী, গুলশান, বারিধারা।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ বেড়ে যায়। জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে, তরুণ ও শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরও উপসর্গ দেখা যায় খুবই সামান্য। কখনও বা একেবারেই উপসর্গহীন থাকে। তবে ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিন পর এসব উপসর্গ স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয়।
এ রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হল- বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে ব্যথা, বমিভাব ও বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেয়া, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
এ সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণ করার মাধ্যমে দ্রুত রোগমুক্ত হওয়া যায়।
এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু সচরাচর সেরে যায়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের উপসর্গ হল- শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হওয়া কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া। ত্বক শীতল হয়ে যাওয়া। অবিরাম অস্বস্তি, ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের উপরের অংশে লাল ছোপ সৃষ্টি হওয়া। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচ- পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ ও অবসাদ। এ উপসর্গগুলো চোখে পড়লে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
করণীয় : প্রতিবছর জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। কোন শিশুর ডেঙ্গুজ্বর হলে বাবা-মা স্বভাবতই অস্থির হয়ে যান। অনেকেই শুরু করেন বাচ্চাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে হসপিটালে ছুটোছুটি।
অনেকেরই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভুল ধারণা আছে। ডেঙ্গু হলেই যে তার আলাদা কোন চিকিৎসা শুরু করতে হবে অথবা প্লেটলেট কমে গেলেই রক্ত বা স্যালাইন দিতে হবে, তা নয়। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই শিশুকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
এ বিষয় ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সব ডেঙ্গুজ্বরেই জটিলতা দেখা দেবে তা নয়। দুদিনেই জ্বর ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে জ্বরের পরয়ের ৫ থেকে ৬ দিন সাবধান থাকতে হয়। এরপর আর কোন সমস্যা দেখা দেয় না। শিশু যদি নিজে নিজে প্রচুর পরিমানে পানি (২-৩ লিটার), ফলের রস, ডাবের পানি ও তরল খাবার খেতে পারে ও র‌্যাশ না থাকলে বা প্লেটলেট কাউন্ট ১ লাখের আশেপাশে থাকলেও আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেইনা। বাসাতেই চিকিৎসা দিতে বলি। তবে বাচ্চা মুখে খেতে না পারলে, প্রেসার কম থাকলে, পেটে ব্যথা বা পেটে পানি আসলে, র‌্যাশ বা প্লেটলেট নরমাল থাকলেও বাচ্চাকে অবজারভেশনের জন্য পরিস্থিতি অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
যে কোন ভাইরাল ফিভারেই প্রচন্ড জ্বরয়ের সাথে সারা শরীরে ব্যথা থাকে। সেই সাথে বমি বমি লাগা ও দুর্বলতাও থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলেও এসব লক্ষণ দেখা দেয়। তবে ব্যথার মাত্রা বেশি হতে পারে।
সাধারণত চোখের পিছনে, মাথা ও হাড্ডির ভেতর ব্যথা হচ্ছে এমন মনে হয়। অনেক সময় বাচ্চারা ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতেও পারেনা ব্যথা কোথায় বা কেমন। কিছু বাচ্চার জ্বরের সাথে কাশি বা ডায়রিয়াও হতে পারে। এছাড়া পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, মাথাঘোরা, খিচুনি ও হয়ে অজ্ঞান হওয়ায় মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত দুইদিনের মধ্যেই জ্বর চলে যায়। তবে দেখে দেয় অন্যান্য লক্ষণ। যেমন, সারা শরীর লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, মাড়ি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি।
এটাই মূলত ডেঙ্গুর ক্রিটিকাল পিরিয়ড। এসময়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং কাশি বা বমির সাথে রক্ত যেতে পারে। পেটে পানি জমা বা তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে বাড়তি কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তবে সব ডেঙ্গু জ্বরেই এমন হবে তা নয়। অনেক সময় জ্বর পাঁচ ছয় দিনও থাকে। এবং শিশুর গায়ে জ্বর থাকা অবস্থাতেই গায়ে র‌্যাশ, চুলকানি, তীব্র পেটব্যথা ও রক্তক্ষরণ হতে পারে। অনেক শিশুর খিচুনি দেখা দিতে পারে বা অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে কেউ কেউ।
কোন জটিলতা না থাকলে সাধারণত ডেঙ্গুর আলাদা কোন চিকিৎসা নেই। কাজেই গায়ে র‌্যাশ দেখা দিলেই বা রক্ত পরীক্ষায় প্লেটলেট ১ লাখের নীচে নামলেই ঘাবড়ে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। আসুন দেখে নেই শিশুর ডেঙ্গুজ্বরে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই।
অন্যান্য জ্বরের মতই ডেঙ্গু জ্বর হলে বাচ্চার গা মুছে দেবেন। প্রচুর পানি পান করাবেন। তবে একটু একটু করে। সেই সাথে তরল খাবার যেমন, ডাবের পানি, স্যুপ, শরবত বেশি বেশি করে দেবেন।
বমিভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনে সেভেন আপ বা স্প্রাইট গ্লাসে ঢেলে আগে গ্যাসটুকু বের হয়ে যেতে দেবেন। গ্লাসে বুদবুদ ওঠা বন্ধ হয়ে গেলে ঔষধের মতো করে এক চামচ এক চামচ করে ১০-১৫ মিনিট পর পর খাওয়াবেন। এর ফাঁকে ফাঁকে এক চামচ করে খাবার খাওয়াবেন।
বাচ্চাকে যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে চেষ্টা করবেন। দৌড়ঝাপ না করে ও গায়ে যেন ঘাম বসে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। গা ঠান্ডা রাখতে ও জ্বর কমাতে মাথায় পানিপট্টি দিতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত পানিযুক্ত ভেজা গামছা দিয়ে গা মোছাবেন না। এতে ঠান্ডা লেগে জ্বর আরো বেড়ে যাবে। পানিতে গামছা বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে ভালো করে চেপে পানি ঝরিয়ে সেই কাপড় দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বার বার করে মুছে দেবেন। স্বাভাবিক গোসল বন্ধ করবেন না, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন।
জ্বর যদি ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তাহলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন ছয় ঘন্টা পর পর। তবে অপ্রয়োজনে বা জ্বর না মেপেই ওষুধ খাওয়াবেন না। ভুলেও বা অপ্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা ক্লোফেনাক জাতীয় বা অন্য কোন জাতীয় ব্যথার ঔষধ; আবারও বলছি, ভুলেও খাওয়াবেন না।
এগুলো শরীরের প্লেটলেটের উপর বিরূপ প্রভাব (প্লেটলেট এগ্রিগেশনে বাঁধা দেয়া) ফেলে এবং হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হতে পারে ও কিডনি বিকল করে দিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। তবে ব্যথা বেশি হলে টকজাতীয় খাবার যেমন লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমড়া ইত্যাদি ফল খাওয়ালে উপকার পাবে।
জ্বর অবস্থায় বাচ্চারা এমনিতেও খেতে চায় না। এজন্য খাবার নিয়ে জোরাজুরি না করে যতটা সম্ভব পানি ও তরল খাবার অল্প করে বার বার খাওয়াবেন।
বাচ্চা কিছুই খায় না, এটা একটি জাতীয় সমস্যা। অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, শিশু খেতে চায় না আর খেতে পারে না এই দুটো জিনিস গুলিয়ে ফেলবেন না। মনে রাখবেন, যে শিশু ইচ্ছা করে খাচ্ছে না তাকে বুঝিয়ে খাওয়ানো যায়। কিন্তু যে শিশু খেতে পারছেনা, তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
অনেকে বাচ্চাকে স্যালাইন দেয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাচ্চাকে কতটুকু স্যালাইন দেয়া হবে তার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এগুলো কিছু শারীরিক লক্ষণ ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে।
তাই ডেঙ্গু হলেই অযথা রক্ত পরীক্ষা করা হয় না। অপ্রয়োজনে স্যালাইন দিলে বা প্লেটলেট ট্রান্সফিউজ করলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে উল্টো শিশুর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। অনেকসময় শিশু মারাও যেতে পারে।
কাজেই আতঙ্কিত না হয়ে বরং ডেঙ্গু সিজনে যেন মশা বংশবৃদ্ধি না করতে পারে এ ব্যবস্থা নিন। বাসার ভেতর ও আশেপাশে পরিস্কার পানি জমে এমন কিছু রাখবেন না।
গাছের গোড়া, টব, এসি, বালতির পানি, ডাবের খোসা, ফ্রিজের তলা পরিস্কার বা পানিশূন্য রাখুন। জানালায় নেট, ঘরে মশারী, কয়েল, গায়ে রেপেলেন্ট ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু মশা দিনের বেলা যেন না কামড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
শিশুরা যেহেতু দিনের অধিকাংশ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটায় তাই স্কুল থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মশা নিধনের উদ্যোগ নিতে হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *