শাহেদ, হেলেনা, পাপিয়ার প্রেতাত্মারা ভর করেছে ছাত্রলীগে!

বিবিধ

নাসির উদ্দিন শিকদার : পদ বাণিজ্য থেকে বেরুতে পারছে না আওয়ামীলীগ ও তাঁর সহযোগী সংগঠন। জানি না কী করবেন জননেত্রী, বাংলাদেশের উন্নয়নের রাজনীতির একমাত্র আশার বাতিঘর শেখ হাসিনা।


বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংগঠনটির সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্লিন ইমেজের আদর্শিক ছাত্রনেতা বানানোর নির্দেশনা দিলেও, নানা কারণে অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারছেন না।

আজকের পত্রিকার খবরে জানা গেছে যে, ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীদের ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে বসানোর জন্য সুপারিশ করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী।

সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ দুইজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে। তাদের দুজন হলেন হোসা্ইন মোহাম্মদ আফজাল এবং ওয়াহিদুল রহমান সবুজ। তারা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী।

সদ্য ঘোষিত ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছাত্রদলের এক নেতার জায়গা হয়েছিল, পরে মিডিয়ার চাপে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত রায়হান রনি নামের ওই নেতা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থেকেই উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন।

গত ৭ জানুয়ারি পত্রিকার খবরে জানা যায়, পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আটটি ইউনিয়ন শাখা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ আছে, একইদিন টাকার বিনিময়ে নতুন পকেট কমিটিও ঘোষণা করে গজারিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। এসব কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই ছাত্রদলকর্মী। আছে ধর্ষণ ও মাদক মামলার আসামির মতো বিতর্কিতরা। এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা; তোপের মুখে গা ঢাকা দিয়েছেন কমিটি অনুমোদনকারী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোলায়মান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ রুবেল। এসব কমিটি করার পেছনে ‘পদ বাণিজ্যের’ অভিযোগ তুলেছে খোদ জেলা ছাত্রলীগ।

মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা জানিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলকর্মীদের কাছে পদ বিক্রি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণও পেয়েছেন তারা।

২০১৯ সালে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল যে, আওয়ামী লীগের ঘাটে ঘাটে দীর্ঘদিন থেকেই রয়েছে মনোনয়ন, নিয়োগ বাণিজ্য, বিভিন্ন কমিটির পদ বিক্রি, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ।

সে সময় যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের পদ পেতে হলে নেতাদের গুনতে হয়েছে ৫০ লাখ থেকে দেড় কোটি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা, সম্পাদকীয় পদে ২০ থেকে ৩০ লাখ। আবার মোবাইলে এসএমএসে বানানো হয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এ জন্যও পিয়ন থেকে দফতর সম্পাদক কাজী আনিসকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা সে কাহিনী এখন পুরাতন হয়ে গেছে।

পদ-পদবি বিক্রিতে পিছিয়ে নেই জেলা নেতারাও।

চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে যুবলীগের র্যাবের হাতে আটক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি ২০১৫ সালে এই পদ পান। শামীম এক সময়ে যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন।

অবৈধভাবে ক্যানিসো চালু, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এক সময় ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন। কোনো দিন আওয়ামী লীগ না করা ড. আহমেদ আল কবীর রূপালি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন ২০০৯ সালে দল ক্ষমতায় এলে। তারপর যুবলীগের প্রেসিডিয়াম পদ কিনে নেন চড়া দামে।

একই অবস্থা ছিল ছাত্রলীগেও। শোভন-রাব্বানী দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তারা কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের চেয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন উপজেলা কমিটি নিয়ে। এ ছাড়াও টাঙ্গাইলের সখিপুরে ২৮ লাখ, খুলনার কয়রায় ২৩ লাখ টাকায় কমিটি দেওয়া হয়। নিয়ম না থাকলেও জেলাকে পাশ কাটিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি উপজেলা কমিটি গঠনে তৎপর ছিলেন। পরে চাঁদাবাজি ও মাদক সেবনের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণ করা হয়।

একই অবস্থা ছিল কৃষক লীগেও। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমানতালে কমিটির পদ বিক্রি করেন। টাকা হলেই মেলে সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক এবং সদস্যের পদ।

পিছিয়ে ছিল না স্বেচ্ছাসেবক লীগও। কেন্দ্রে নেতা বানানো কিংবা জেলা সম্মেলনের চেয়ে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছারের আগ্রহ ছিল বিদেশ কমিটি নিয়ে। মোল্লা কাওছার বছরের বেশির ভাগ সময় বিদেশেই থাকতেন। সম্প্রতি ক্যাসিনো বাণিজ্যের চিত্র অভিযানে বের হয়ে এলে দেখা যায় তিনিও একটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ পদ-পদবি বিক্রি ছাড়াও নানা অভিযোগ আছে এখনো। পিছিয়ে নেই জেলা পর্যায়ের নেতারাও। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ।

১০ বছরের ক্ষমতায় নব্য আওয়ামী লীগারদের অনেকের অর্থ-বিত্ত, সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি হয়ে গেছে আলাদীনের চেরাগের মতো।
শাহেদ, হেলেনা, পাপিয়ার প্রেতাত্মারা ভর করেছে ছাত্রলীগে!