নুসরাতের মামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রক্রিয়া চলছে

অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকিদের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হবে। ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলাকে যাতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা না যায়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের প্রক্রিয়া চলছে। নুসরাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ওসি মোয়াজ্জেম কর্তৃক ভিডিও ধারণ প্রক্রিয়াটি ছিল বিধি বহির্ভূত। তবে গ্রেফতারের সময় হাতকড়া না পরানোতেও কোন আইনগত ব্যত্যয় ঘটে নি। নারীরা আজ আপনজনদের কাছেও নিরাপদ নয়। এমনকি বান্ধবীরাও এখন তাদের বান্ধবীদের নিজ পুরুষ-বন্ধু ধর্ষকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত নারী নিপীড়ন কমাতে মূল্যবোধের চর্চা নিয়ে এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় সিদ্ধেশ^রী গার্লস কলেজকে হারিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বিজয়ী হয়। ‘সাহসিক নুসরাত, তুমিই যুক্তি তুমিই প্রতিবাদ’ এই স্লোগানে প্রতিযোগিতাটি রাজধানীর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বনজ কুমার মজুমদার আরো বলেন, বাংলাদেশে আইন আছে, শাস্তি আছে, প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। তারপরেও কোথাও যেন একটু ত্রুটি রয়েছে- তা উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশে কোন না কোন আদালতে গড়ে প্রতিদিন একজন লোকের ফাঁসির রায় হচ্ছে। তারপরও সকল অপরাধের বিচার দ্রুততম সময়ে করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মত একটি দেশে হাজার হাজার আসামি ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য অপেক্ষা করছে। পৃথিবীতে এমন নজির নেই যেখানে এত লোক ফাসির জন্য অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার সংস্কৃতি আছে। বিচার পেতে আট থেকে দশ বছর লেগে যায়। এ ব্যবস্থা মেনে নিয়েই আমাদেরকে কাজ করতে হয়। মিডিয়ায় যা আসে তার থেকেও আরো বেশি কিছু ঘটে। তাহলে দেশের অবস্থা বুঝেন। সত্য উদঘাটনের জন্য সেগুলোও আমরা বিচারের আওতায় নিয়ে আসি। সেক্ষেত্রে আমাদেরও ব্যর্থতা আছে, তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিকল্প কিছু না বের হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটাকেই মেনে নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নির্যাতিত নারীরা যদি সঠিক সময় উপযুক্ত বিচার পেত তাহলে হয়তো আমাদের তনু থেকে রূপা, রূপা থেকে শাহনুর, শাহনুর থেকে নুসরাত কিংবা সিলভারডেল স্কুলের শিশু সায়মার ধর্ষণ পরবর্তী হত্যাকান্ডের ঘটনা দেখতে হতো না। নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমরা দেখেছি থানা-পুলিশ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সমাজের প্রত্যেকটি স্থরের ব্যার্থতা। নিপীড়িত নুসরাতের পাশে আমরা ওসি, ডিসি, এসপি কাওকে দাড়াতে দেখতে পাইনি। ফলে নির্যাতন কারীরা নুসরাতকে আগুন দিয়ে পুরিয়ে মারতে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেনি। অথচ আমরা দেখলাম সেদিন ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষের আইনজীবি আদালতে তার জেরায় বারবার বলছেন ওসি সাহেব যেহেতু কানে কম শুনেন সেকারনে নুসরাতের বক্তব্য মোবাইলে ধারন করার সময় বারবার একই প্রশ্ন করেছেন। আমার জানতে ইচ্ছা করে কানে শুনেনা এমন একজন ব্যাক্তি কিভাবে থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেন। তাই প্রশ্ন উঠে এই ধরনের নারী নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যাকান্ড কেন বারবার ঘটছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি কিংবা এইসব ঘটনার দৃশ্যমান বিচার না হওয়াই কি এর জন্য দায়ী ? নাকি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়েগেছে, বিবেকের বাতিঘর নিভে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার দেখেছি নিপীড়নের শিকার নারীরা ধুকে ধুকে কাঁদছে। আর নিপীড়ন কারীরা বীরদর্পে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে মাথা উঁচুকরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনি ব্যাবস্থার দূর্বলতার কারনে এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। তাই অন্যায় করে পার হওয়ার মানসিকতা দূর করতে অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক রোবায়াত ফেরদৌস, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ তুহিন এবং ড. এস এম মোর্শেদ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *