এখন টেবিলের ওপর দিয়েই ঘুষ লেনদেন চলবে

রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে যখন দুর্নীতির মহামারি চলছে তখন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিয়ে বলছেন ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না’। ফলে টেবিলের ওপর দিয়েই এখন ঘুষের লেনদেন চলবে। রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়। এর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে বলেছিলেন। যখন দেশে প্রশাসনিক স্তরে অতি উচ্চ মাত্রার দুর্নীতির সংস্কৃতি বিরাজমান। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতেও টেবিলের নিচে আর্থিক লেনদেন করতে হয়। তখন মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এ ‘উৎসাহ বার্তা’ দেওয়া হচ্ছে যে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। ফলে টেবিলের ওপর দিয়েই এখন ঘুষের লেনদেন চলবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভোটারবিহীন অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিকে পুরোমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে ফেলেছে। সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে সরকারের ‘টপ টু বটম’ব্যস্ত লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে। চারদিকে চলছে দূর্নীতির উৎসবের আতশবাজী। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। আইনের শাসন ও সুশাসন এখন ইতিহাসের পা-ুলিপিতে অবস্থান করছে। রিজভী বলেন, দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই নির্বাচনটি ‘সরল বিশ্বাসী’ প্রশাসনের ‘সরল’ কর্মকর্তারা ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতেই সেরে দিয়ে দেশের ভোটারদের পরিণত করেছেন ‘সাব-হিউম্যানে’। ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবে সরকারি কর্মকর্তারা, এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যটি অপশাসনেরই একটি বিপজ্জনক বার্তা। দুদক চেয়ারম্যান গত শনিবার নিজেই স্বীকার করেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব-বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা ৭০ ভাগ দুর্নীতির মামলা দিচ্ছেন পুঁটিমাছের বিরুদ্ধে। মুলত দুর্নীতি দমনের নামে মুখোশপরা এই দুদক বিরোধী দল দমনে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় ব্যস্ত। খালেদা জিয়ার জামিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, তাকে বন্দি রেখে লুণ্ঠন-দুঃশাসনে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে জনধিকৃত সরকার। রিজভী বলেন, নির্বিঘেœ নিরাপদে প্রশাসনের সহায়তায় রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের কণ্ঠস্বর, আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী মিথ্যা প্রতিহিংসার মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসার শিকার খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনাই জামিনে বাধা দিচ্ছেন খালেদা জিয়ার। তাকে বন্দি রেখে লুণ্ঠন-দুঃশাসনে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে জনধিকৃত সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে দুর্নীতির রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে দাবি করে রিজভী বলেন, দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক নজরদারী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০১৮ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে ২০১৭-এর তুলনায় বেশী। ২০১৮ সালে ওই সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম- যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭তম স্থানে। ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই’ বলেও অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৭ সালে মারণঘাতি ডেঙ্গু জ¦র আমদানি করেছে। তখন থেকে এই এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। রিজভী বলেন, আপনারা সবসময় দেখবেন উন্নয়ন কিংবা পদক্ষেপ এসব ক্ষমতাসীনদের ঠোঁটের মধ্যে এটা আটকে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো পদক্ষেপ কেউ কখনো দেখেনি। আজকে যানজটে, রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থায় আপনি বলুন, কোন দিক দিয়ে মানুষের স্বস্তি আছে? কোথাও স্বস্তি নাই। আর এই মারণঘাতি ডেঙ্গু জ¦র- এটা আওয়ামী লীগই আমদানি করেছে ১৯৯৭ সালে, তখন থেকে এই এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। এটার জন্য যে ব্যাপক ড্রাইভৃ স্বাস্থ্য দপ্তর, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর- এদের কোনো কর্মকা- নাই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনগুলোর উদ্যোগ কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটার জন্য পর্যাপ্ত যে প্রতিরোধ- এটার যে অ্যান্টি ড্রাগ দরকার মানুষকে বাঁচানোর জন্য, কোনো কিছু নাই।
৩ জুনের পর ছাত্রদলের কোনো কমিটি বৈধ নয়: এদিকে, গতকাল রোববার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ গত ৩ জুন বিলুপ্ত ঘোষণার পর করা কোনো কমিটি বৈধ হবে না। রিজভী জানান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর থেকে ছাত্রদলের বিভিন্ন মহানগর, জেলা, থানা কমিটি ও থানা মর্যাদার ইউনিটসমূহের কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে, গত ৩ জুন ২০১৯ তারিখে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর থেকে ছাত্রদলের মহানগর, জেলা, থানা কমিটি ও থানা মর্যাদার কোনো কমিটি গঠন করে থাকলে তা কার্যকর বলে গণ্য হবে না। উল্লেখ্য, গত ৩ জুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠন করতে পারেনি সংগঠনটি। সেই থেকে ছাত্রদলে চলছে অচলাবস্থা। জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঈদুল আজহার আগেই ছাত্রদলের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে কাজ করছে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরমধ্যে রুহুল কবির রিজভী এমন ঘোষণা দিলেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *