ভয় সৃষ্টি করতেই সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব তলব

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিকদের মনে ভয় সৃষ্টি করতেই সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা বলে মনে করছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। আর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

লিখিত বক্তব্যে ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান বলেন, দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের মনে নানা ধরনের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বিএফআইইউর এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছেন।

ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান আরও বলেন, বিএফআইইউর সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে যে চিঠি দিয়েছে তাতে তথ্য পাওয়ার আগে তথ্য চাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিএফআইইউর দেওয়া চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সমাজের মানুষের কাছে সাংবাদিক নেতা তথা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। কেননা এতে করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে, যা কারও কাম্য নয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের সন্দেহ জাগে এটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না। কারণ, কেউ কিছু বলতে পারে না। তিনি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা বলেছেন কিছুই জানেন না। এ জন্য বিষয়টি উদ্বেগের। তিনি বলেন, আজকের এই বক্তব্য কারও ব্যক্তিগত নয়, এগুলো সংগঠনের কথা।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, চিঠি দেওয়ার পর তথ্য পাওয়ার আগেই ব্যাংক হিসাব তলবের খবর গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতেই এই কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করছি এটি নিশ্চয়ই উদ্দেশ্যমূলক। এটি স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের প্রতি হুমকি। এটি দুরভিসন্ধিমূলক মনে করছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই। পরে তিনি রোববারের সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের একাংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, বিএফইউজের আরেকাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের একাংশের সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউর সভাপতি মোরসালীন নোমানী প্রমুখ।

এর আগে গত কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর শীর্ষ ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব চেয়ে বিভিন্ন তফসলি ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের শাখায় এই ১১ সাংবাদিকের নামে কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব বর্তমানে বা আগে পরিচালিত হয়ে থাকলে সব হিসাবের যাবতীয় তথ্যের সফট কপি (যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাবগুলোর তালিকা), হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, প্রোফাইল ফরম, টিপি ও অনুরূপ দলিল ও হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী ১৩ সেপ্টেম্বর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।

এই তালিকায় থাকা ১১ জন সাংবাদিক নেতা হলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি (আওয়ামী লীগ–সমর্থিত) ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক (বিএনপি–সমর্থিত) ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি (বিএনপি–সমর্থিত) আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী লীগ–সমর্থিত) সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (বিএনপি–সমর্থিত) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।