জয় দিয়েই সিরিজ শুরু করতে চায় বাংলাদেশ

অন্যান্য এইমাত্র ক্রিকেট খেলাধুলা

স্পোর্টস ডেস্ক : দ্বাদশ বিশ্বকাপে দশ দলের মধ্যে অষ্টম স্থানে থেকে আসর শেষ করতে হয় বাংলাদেশকে। নিজেদের সপ্তম ম্যাচ পর্যন্ত সেমিফাইনালে খেলার দৌঁড়ে টিকে ছিলো টাইগাররা। কিন্তু অষ্টম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় মাশরাফির দলের। তাই দ্বাদশ বিশ্বকাপ এখন বাংলাদেশের দুঃস্মৃতি। সেই দুঃস্মৃতি ভুলতে আগামীকাল থেকে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে মাশরাফি-সাকিববিহীন বাংলাদেশ দল। জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।


বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত কোয়ার্টারফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। এতে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল টগবগে হয়ে উঠে। ঐ বিশ্বকাপ শেষে দেশের মাটিতে টানা তিন সিরিজে ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিধ্বস্ত করে মাশরাফির দল। এরপর থেকে সাফল্যে রঙ্গীন হতে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেটি আরও বেশি ঝলকানি দেয় ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মত দলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে টাইগাররা। লিপিবদ্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সাফল্য।

যে কারণে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলতে পারায় ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে বড় ধরনের স্বপ্নই দেখে বাংলাদেশ। স্বপ্ন ছিলো অন্তত সেমিফাইনাল খেলার। সেভাবেই শুরু হয়েছিলো যাত্রাটা। ইংল্যান্ডের ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার মত বিশ্বসেরা দলকে হারিয়ে চমক দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় মাশরাফির দলের।

তবে পরের দু’ম্যাচে হার (নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড) ও একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত (শ্রীলংকা) হওয়ায় নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে চিন্তা থেকে মুক্ত হতে খুব বেশি সময়ক্ষেপন করেনি টাইগাররা। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচেই চোখ জুড়ানো জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। টনটনে সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন দাসের অপরাজিত ৯৪ রানের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুঁড়ে দেয়া ৩২২ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। তাই আবারো সেমিফাইনালে খেলার পথ খুঁজে পায় টাইগাররা।

তবে পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে টিকিয়ে রেখেছিলো। তবে বার্মিংহামে ভারতের কাছে ২৮ রানে হার বাংলাদেশকে স্বপ্নকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। সেমিফাইনালে যাবার সব পথ বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের। আর লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বাংলাদেশ। ফলে ৯ খেলায় ৩ জয়, ৫টি হার ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপ টেবিলের অষ্টম স্থান পায় বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে না পারার ব্যর্থতার সাথে দশ দলের মধ্যে অষ্টম হওয়ায় ক্ষত-বিক্ষত হয় বাংলাদেশ। সেই আঘাত সহজেই মুছে ফেলার কোন উপায় নেই বললেই চলে। তারপরও ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুনভাবে, নতুন পরিকল্পনায় পথচলা শুরু করছে বাংলাদেশ।

নিজেদের বিশ্বকাপ শেষ করার ২১তম দিনেই মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তবে দলের দুই সেরা খেলোয়াড় নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা-অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছাড়া। ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েন মাশরাফি। শ্রীলংকা সফরে রওনা দেয়ার আগের দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ম্যাশ। সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুশীলনে নামেন তিনি। শ্রীলংকায় তিনটি ওয়ানডে দিবা-রাত্রিতে হওয়াতে ঐদিন বাংলাদেশের শেষ অনুশীলন পর্ব ছিলো ফ্লাড লাইটের নীচে। ঐ অনুশীলনে বোলিং করতে গিয়ে হ্যামষ্ট্রিং-এ চোট পান। এই চোট নিয়ে বিশ্বকাপে বেশক’টি ম্যাচও খেলেছিলেন ম্যাশ। তারপরও দলের প্রয়োজনে নিজেকে বিশ্রামে রাখেননি মাশরাফি। বিশ্বকাপে নিজেকে বিশ্রামে না রাখলেও, শ্রীলংকা সফর থেকে বাধ্য হলেন ছিটকে যেতে।

আর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরমেন্স করা সাকিব ব্যক্তিগত কারণে ওয়ানডে সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। বিশ্বকাপের ধকল কাটিয়ে উঠতে বিশ্রামে আছেন সাকিব। বেশি করে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

তাই মাশরাফি-সাকিব না থাকায় দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। এর আগে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কারণ ঐ সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাই দ্বিতীয় টেস্টে নেতৃত্ব দিতে হয় তামিমকে। আড়াই বছর পর আবারো দলের ভার সামলাতে প্রস্তুত তামিম। এবারও সেই পুরনো চিত্র। মাশরাফির ইনজুরি ও সাকিবের অনুপস্থিতি সুযোগ করে দিলো তামিমকে অধিনায়কত্ব করার। অধিনায়কত্বের এই দায়িত্বকে অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন তামিম। তিনি বলেন, ‘ইনজুরির কারণে দলে অনেক অপরিহার্য খেলোয়াড় নেই। তাই আমার কাছে মনে হয়, এই সিরিজটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।’

বিশ্বকাপ দলে না থাকা এনামুল হক বিজয়, তাইজুল ইসলাম, ফরহাদ রেজা, তাসকিন আহমেদ ও শফিউল ইসলাম শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের দলে আছেন। এই সিরিজে তাদের প্রমাণের বড় সুযোগ বলেও মনে করেন তামিম, ‘যারা দলে এসেছেন, তাদের জন্য এটি অনেক বড় সুযোগ। নিজেদের প্রমাণের জন্য সেরাটা দিতেই হবে তাদের। এতে দলও উপকৃত হবে। শ্রীলংকার বিপক্ষে ভালো ফল সম্ভব হবে। নিজেদের কন্ডিশনে শ্রীলংকা শক্তিশালী দল।’

আজ সংবাদ সম্মেলনে নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে তামিম বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমার অভিষেক হচ্ছে। তবে আমি অধিনায়ত্ব নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। দল ভালো পারফরমেন্স করলেই অধিনায়কত্ব উপভোগ্য হবে। সিরিজ নিয়ে আমি বেশি ভাবছি। কালকের ম্যাচ নিয়ে ভাবনাটা বেশি। আমি বিশ্বাস করি, আমার দায়িত্ব পুরোপুরি ভালোমতো পালন করতে পারলেই আমি খুশি।’

অন্য দিকে নিজেদের কন্ডিশনে খেলা হলেও বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না শ্রীলংকার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। আজ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলছে। বিশ্বকাপেও তারা ভালো করেছে। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেতে হলে আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। কোনো ম্যাচই হালকাভাবে নেয়ার উপায় নেই। এই দল নিয়েও বাংলাদেশ ভয়ংকর। অনুশীলন ম্যাচে ভালো জয় তুলে নিয়েছে তারা।’

বাংলাদেশের অনুশীলন ম্যাচের কথা বললেন শ্রীলংকার অধিনায়ক করুনারতেœ। ঐ ম্যাচে শ্রীলংকা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের মুখোমুখি হয়েছিলো বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৮২ রান করে শ্রীলংকা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ। জবাবে মোহাম্মদ মিঠুনের ৯১ ও মুশফিকুর রহিমের ৫০ রানের সুবাদে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয়।

ম্যাচে সেরা পারফরমার মিঠুন ম্যাচ শেষে বলেন, ‘দল হিসেবে একটি জয় সবসময় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে আমরা অবশ্যই ভালো অবস্থানে থাকবো। তবে আবারো যদি আমাদের ম্যাচ জিততে হয়, তবে ২৬ জুলাই যেই ম্যাচটি আছে ঐদিন আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে।’ বিশ্বকাপের দুঃস্মৃতি ভুলে শ্রীলংকার সিরিজ দিয়ে নতুনভাবে শুরুর ইচ্ছা পোষণ করলেন মিঠুন, ‘আমার মনে হয়, যদি বিশ্বকাপে স্মৃতি ভুলে শ্রীলংকা সিরিজ নিয়ে নতুনভাবে ফোকাস করি এবং ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করি তবেই সাফল্য পাবো আমরা।’

বাংলাদেশের মত শ্রীলংকা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের উপরে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করতে পারে লংকানরা। ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচই শ্রীলংকাকে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে দেয়। ৯ খেলায় ৩ জয়, ৪ হার ও ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থান পায় শ্রীলংকা। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবারো নতুনভাবে পথচলা শুরু লংকানদের।

বাংলাদেশ দল:

তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, ফরহাদ রেজা এবং এনামুল হক বিজয়।

শ্রীলংকা দল:

দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), কুশাল পেরেরা, আবিষ্কা ফার্নান্দো, কুশাল মেন্ডিস, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, লাহিরু থিরিমান্নে, শেহান জয়সুরিয়া, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকা (২য় ও ৩য় ওয়ানডে), বানিন্দু হাসারাঙ্গা, আকিলা ধনঞ্জয়া, আমিলা আপোনসো, লাসিথ মালিঙ্গা (১ম ওয়ানডে), নুয়ান প্রদীপ, কাসুন রাজিথা, লাহিরু কুমারা, থিসারা পেরেরা, ইসুরু উদানা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *