ঢাকার নিম্ন আদালত নিরাপত্তা শঙ্কায়

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

হকারদের অবাধ বিচরণ

বিশেষ প্রতিবেদক : হকারের আনাগোনা, দর্শনার্থীদের বাধাহীন প্রবেশ, আদালত অঙ্গনে চায়ের দোকান আর বিচারপ্রার্থীদের চেকিং ছাড়া প্রবেশের কারণে ঢাকার নিম্ন আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
আদালত প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, ইদুর মারা বিষ বিক্রি থেকে জুতা পলিশের হকাররা এখানে কেনাবেচা করেন। এছাড়া রয়েছে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা, বিড়ি সিগারেট বিক্রেতাসহ শতাধিক হকার। এরা ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত ও ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে অবাধে বিচরণ করেন।
এসব হকারের জন্য কোনো চেকিংয়ের ব্যবস্থা নেই, মালামাল প্রবেশেও নেই কোনো চেকিং, যে কারও প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল প্রবেশ করছে কোনো ধরনের চেকিং ছাড়া। এছাড়া আইনজীবীদের পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানো বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হয় না।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, বিশেষ জজ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের শতাধিক আদালতে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, আসামি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার সময়ে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আদালতের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহাতায় দেশের প্রত্যেক আদালত প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকের বাসভবন, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) আদালতসহ দেশের সাড়ে চারশ’ স্পটে প্রায় পাঁচশ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় দুইজন নিহত ও দুইশতাধিক মানুষ আহত হন। ঢাকার আদালতসমূহ ও প্রেসক্লাবসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩৪টি স্পটে হামলা চালায় জেএমবি।
গত ১৬ জুলাই কুমিল্লায় আদালত কক্ষে বিচারক উপস্থিতিতে হত্যা মামলার শুনানি চলাকালে এক আসামি অপর আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লার আদালতে খুন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বাদী-বিবাদীর হাতাহাতির ঘটনার পর সারাদেশের আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে বুধবার (১৭ জুলাই) উদ্বেগ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
দেখা গেছে, ছোট পরিসরে যত্রতত্র দোকান, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মানুষ, ও হকারের আনাগোনা। এর মাঝেই প্রিজন ভ্যান থেকে নামানো হয় চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি, বিভিন্ন জঙ্গিহামলা মামলার আসামি, ভিআইপি আসামি। এ পথেই যাতায়াত করে বিচারকদের গাড়ি। তবে কোথাও শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না।
ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি কাজী নজিবউল্লাহ হিরু বলেন, খুন হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগী মিলনের হত্যাকারীরা বেশ কিছুদিন আগে আদালত চত্বরে হকারের ছদ্দবেশেই ছিল। কিছুদিন আগে এক আইনজীবীর ছেলেকে আদালত চত্বরে হত্যা করা হয়েছে। ওই খুনিরাও আদালতে হকারের বেশেই ছিলেন। তাই আদালত চত্বরের হকার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে সন্ত্রাসীরা সে সুযোগটি নিতে পারে। তিনি বলেন, প্রয়োজন হয়ে বলে হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
ঢাকা বারের সাবেক কার্যকরী পরিষদের সদস্য আল আমিন সরকার বলেন, নি¤œ আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীর যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সিএমএম আদালত ছাড়া কোনো আদালতের প্রবেশপথে আর্চওয়ে নেই। আর সিএমএম আদালতে আর্চওয়ে থাকলেও তদারকি নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
আদালতে কর্মরত পুলিশের ডিসি (প্রসিকিউশন) আমিনুর রহমান বলেন, এজলাসে বিচারক ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদর দায়িত্ব। এজলাসের বাইরে কোনো বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। ঢাকার আদালতসমূহে ৩২টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে কাজ করে। নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই।
ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু বলেন, আইনজীবী ভবনের নিরাপত্তায় ভবণের গেটে সার্বক্ষণিক তিনজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকেন। এছাড়া সমিতির নিরাপত্তাকর্মীও আছে। ১৩টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুরো ভবন মনিটরিং করা হয়। এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।
নিরাপত্তা বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, কুমিল্লায় আদালত কক্ষে বিচারক উপস্থিতিতে যে ঘটনা সেই ধরনের ঘটনা আর যেন নি¤œ আদালতে না ঘটে। আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আমাদের কোনো ঘাটতি নেই।
ওসি আরও বলেন, আদালতে ঢুকতে চাইলে তল্লাশি পার হয়ে যেতে হবে। কিছুদিনের মধ্যে আমরা এই ব্যবস্থা নেব। এছাড়া বিচারকের এজলাস থেকে শুরু করে আসামি ওঠানো নামানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *