কমলাপুর-সদরঘাটে মানুষের ঢল

অন্যান্য এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী সারাদেশ

ঈদযাত্রায় বিড়ম্বনায় হিজড়া
উত্তরের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
শিমুলিয়ায় অপেক্ষায় ৪ শতাধিক গাড়ি
সদরঘাটে লঞ্চের রেষারেষিতে দুর্ঘটনায় আহত ৪
ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে তীব্র যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ
যানজট নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে

মহসীন আহমেদ স্বপন : ইট-পাথর আর কংক্রিটের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরে ফেরা মানুষদের। শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ, আসন না পাওয়ার ভোগান্তি মেনে নিয়েই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। গত ৩১ জুলাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যারা ৯ আগস্টের টিকিটি সংগ্রহ করেছিলেন তারাই শুক্রবার কমলাপুর স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছেন।
শুক্রবার কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের কোথাও ফাঁকা নেই, সবদিকে যাত্রী আর যাত্রী। ঈদ উদযাপনে কাক্সিক্ষত ট্রেনে বাড়ি ফিরতে কমলাপুরে এসেছেন তারা। নির্ধারিত সময়ের অনেক ট্রেন এখনও কমলাপুরে পৌঁছায়নি। আর যেসব ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে সেসব ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে পা ফেলানোর জায়গা ছিল না। যাত্রীতে ঠাসাঠাসি বেশিরভাগ ট্রেন। এরমধ্যেই আবার অপেক্ষমান আরও যাত্রীর সর্বোচ্চ চেষ্টা সেই ট্রেনে ওঠার। জানালার স্ট্যান্ডে কেউ পা দিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছেন, কেউবা পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালা দিয়ে ট্রেনের ভিতরে পাঠাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও ট্রেনগুলোর ভেতরে তীল ধারণের ঠাঁই নেই। সব মিলিয়ে ঘরমুখো সব মানুষের জনস্রোত যেন মিলছে এসে কমলাপুরে। একই অবস্থা দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের। তিল ধরনের ঠাই নেই সদরঘাটে। শুক্রবার ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের চাপে টার্মিনালের পন্টুনে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এদিকে শুক্রবার দুপুর ১টায় যাত্রীদের চাপ ও ঘাটে নোঙর ফেলা নিয়ে লঞ্চগুলোর একটি অপরটির সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে লঞ্চ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন চার জন যাত্রী। সদরঘাট টার্মিনালের গ্যাংওয়ে-৩ এ দুর্ঘটনা ঘটে।
লঞ্চ টার্মিনালে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র মোদক বলেন, আহত দুই জনকে গুরুতর অবস্থায় মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনও কারো পরিচয় জানা যায়নি।
অপর আহত দুজনকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বিআইডব্লিউটি’র চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এদিকে ঈদযাত্রায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করেও তুষ্টি নেই লঞ্চ-মালিকদের। তাই ঘরমুখী যাত্রীদের জিম্মি করে কেবিন-ডেক, এমনকি ছাদেও শত শত যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। সদরঘাটে লঞ্চগুলো নোঙর করা নিয়ে রেষারেষির কারণে ঘটছে ছোট বড় নানা দুর্ঘটনা। গুরুতর আহত হচ্ছেন যাত্রীরা, ভাঙছে পন্টুন, সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত লঞ্চযাত্রীরা।
দিনের আলো ফোটার আগে থেকেই দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার পর থেকে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ভোলা, আমতলী, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর ও বরগুনাগামী যাত্রীদের চাপ চোখে পড়ার মতো।
বরগুনায় পরিবার নিয়ে ঈদ করতে যাবেন শামীম রহমান। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুল ও কোচিং ছুটি হয়নি বলে আগে বাড়ি যেতে পারিনি। টার্মিনালে আসতে পথে যানজটে অনেক কষ্ট হলেও ঈদের আগে বাড়ি যেতে যাচ্ছি। তবে লঞ্চগুলো এমন পাল্লাপাল্লি করছে, এতে দুর্ঘটনার সম্ভবনা অনেক।
উত্তরের সব ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় : শুক্রবার ভোর ৬টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও স্টেশনে এসে পৌঁছায় সকাল সোয়া ১০টার পরে। ট্রেনটির সম্ভব্য ছাড়ার সময় দেয়া হয়েছে ১০টা ৪০ মিনিট। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এ ট্রেনটির ছাড়ার সম্ভব্য সময় দেয়া হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টা। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনেই এস পৌঁছায়নি। দিনাজপুর- পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সম্ভব্য ছাড়ার সময় ১১টা ১০ মিনিট দেয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সময় সকাল ৬টার রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১০টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন যাত্রীতে ঠাসাঠাসি হয়ে পড়ে। যেন পা ফেলারও জায়গাটুকুও নেই। ট্রেনটি বিলম্বে আসার কারণে আগে থেকেই প্ল্যাটর্ফমে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে বিলম্বে পৌঁছানোর পরই যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। মানুষের ভিড় ঠেলে তখন সবার ট্রেনে ওঠার চেষ্টা। নিমিষেই ট্রেনটি পূর্ণ হয়ে যায়। কেউবা ভিড় ঠেলে গেট দিয়ে ভেতরে উঠছেন, যারা সেটা পারেননি তাদের কেউবা জানালা দিয়ে প্রথমে ব্যাগ, পরে পরিবারের সদস্যদের ট্রেনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, এরপর নিজেও উঠছেন ওই জানালা দিয়েই। মুহূর্তেই যেন ট্রেনটি যাত্রীতে গাদাগাদি হয়ে যায়। যেন তিল ধরণে ঠাঁই নেই। এত গেল ট্রেনের ভেতরের দৃশ্য, ট্রেনের ছাদও ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেনের ছাদ জুড়ে মানুষ আর মানুষ।
ভোগান্তি-বিড়াম্বনার যাত্রীদের ক্ষোভ : রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী শিহাবুল ইসলাম। টিকিট অনুযায়ী তার ট্রেন সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছেছে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। তাদের সঙ্গে নিয়ে এ ভোগান্তির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শিহাবুল বলেন, প্রতিবছর ঈদে বাড়ি ফিরতে অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। আজকের টিকিটের জন্য নির্দিষ্ট দিনে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম। আজ যখন যাবো তখন আবার ট্রেন বিলম্ব। প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। সোয়া ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন এসে পৌঁছালে সবাই ঠেলাঠেলি করে ট্রেনে উঠছে, ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এত কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ এরপর আবার ট্রেন সাড়ে ৪ ঘণ্টা লেট, এখন ট্রেনে এত্ত ভিড় যে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নির্দিষ্ট আসন পর্যন্ত হয়তবা পৌঁছাতেই পারবো না। প্রতিবছর ঈদের সময় যাত্রীদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এর কোনো সমাধান বের করতে পারে না বিষয়টি আসলেই খুবই দুঃখজনক।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী এরশাদ আলী বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে মানুষ ঘরে ফিরে। সড়কে যানজট, খানাখন্দ, যে কারণে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। টিকিট পাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে কাউন্টারের লাইনে। আর যাত্রা পথে ট্রেনের ভেতরে থাকবে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ। সকাল ৮টায় ট্রেনটি ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছাতে পারেনি।ঈদের সময় মানুষের এত বিড়াম্বিনা ভোগান্তি নিরসনে কোনোবারই সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আর আমাদের মতো অসহায় যাত্রীদের এভাবেই ভোগান্তিকে সঙ্গী করে বাড়ি ফিরতে হয়।
যা বলছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ : স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিনই আমরা ধারণা করেছিলাম ৯ আগস্ট যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় হবে। এরমধ্যেই আমরা চেষ্টা করছি সিডিউল ঠিক রাখতে। তারপরও কয়েকটা ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া আসার সময় প্রতিটি স্টেশনে উঠা নামা করতে যেখানে দুই মিনিট অপেক্ষা করার কথা সেখানে ৫/১০ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে ট্রেনগুলো পৌঁছাতেও কিছুটা দেরি করছে। তবে চেষ্টা করছি যেন সঠিক সময়েই সব ট্রেন ছেড়ে যায়। যে ট্রেনগুলো কমলাপুর পৌঁছাতে দেরি করছে, সেই ট্রেনগুলোই ছেড়ে যেতেও দেরি করছে। ঈদ যাত্রায় আমরা চেষ্টা করছি যেন সব ট্রেনই ঠিকমতো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ ঈদে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। যাত্রী চাপ সামলাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শিমুলিয়ায় অপেক্ষায় ৪শতাধিক গাড়ি : বৈরী আবহাওয়ার পর পদ্মার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে যাত্রী ও ছোট গাড়ি পারাপার হলেও ঘাটের দুই পাড়ে অপেক্ষায় রয়েছে চার শতাধিক গাড়ি। এর মধ্যে আছে শতাধিক মালবাহী ট্রাক। ঘাট পার হতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাড়িফেরা মানুষ।
ঈদের ছুটির কারণে শুক্রবার সকাল থেকেই ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়ছে দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে। সকাল থেকেই যাত্রীবোঝাই অনেক গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় ভিড় করছে ঘাটে।
বিআইডব্লিউটিসি মাওয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে গত দুই দিন স্বাভাবিক ফেরি চলাচল ব্যাহত হলেও শুক্রবার দুপুর ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যে চারটি রো রো, চারটি কে-টাইপ, দুটি মাঝারি, ছয়টি ডাম্প ও একটি ছোট ফেরি চলাচল করছে।
মাওয়া ট্রাফিক ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ঘাটে যানবাহনের চাপ অস্বাভাবিক নয়, আবার স্বাভাবিকও বলা যাচ্ছে না। তবে মোটামুটি ভালো। শুক্রবার সকাল থেকেই যাত্রীবাহী গাড়ি বেশি আসছে। ঘাটে আসা গাড়িগুলো পার্কিং এলাকায় অপেক্ষা করার পর একেএক ফেরিতে উঠানো হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি মাওয়া উপ-মহাব্যবস্থাপক নাছির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চালু রয়েছে। মালবাহী কোনো গাড়ি পার করছি না। শুধু যাত্রী ও যাত্রীবাহী ছোট গাড়ি পারাপার হচ্ছে। ঘাটে চার শতাধিক গাড়ি পারের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গাড়িই পার করা হবে। এদিকে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে পদ্মায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঘরমুখী মানুষ লঞ্চ ও স্পিডবোটযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে।
উত্তরের পথে সীমাহীন দুর্ভোগ : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ছাড়িয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কটি দিয়ে চলাচল করা মানুষ।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি পশুবাহী ট্রাকের চলাচল কয়েকগুণ বেড়ে যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। এর ফলে মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত থেকে গাড়ি আরও বাড়তে থাকায় যানজটের দৈর্ঘ্য আরও বেড়ে যায়। এছাড়া সারারাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় যানজটে পশুবাহী ট্রাক আটকা পড়লে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। শুক্রবার সকাল থেকে মহাসড়কের গোড়াই এলাকায় ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। ওই এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হলেও স্থায়ী নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কোরবানির পশুবাহী অসংখ্য ট্রাক এই পথ দিয়েই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে ঢাকার দিকে আসছে। এরই মধ্যে মাঝে মধ্যেই ট্রাক বিকল হওয়ায় এবং চালকরা লেন না মেনে এলোমেলোভাবে গাড়ি চালানোয় জটিলতা আরও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানান।
যানজটের কারণে ছুটিতে ঘরমুখো যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ যেতে যেখানে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগে সেখানে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।
পরিবার নিয়ে রংপুরে যাওয়ার জন্য গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসে ওঠেন শামছুর রহমান। কিন্তু যমুনা সেতু পর্যন্ত পৌঁছাতেই তাদের সকাল হয়ে গেছে। এই যানজটের মধ্যে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রায়েজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে যানজট থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে মহাসড়কের মির্জাপুরের ২০ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ধীর গতিতে চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় মহাসড়কে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যানজট নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে : মুন্সীগঞ্জ জেলার পূর্বাংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও জেলার পশ্চিমাংশে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কোনও যানজট নেই। ঈদুল আজহার দুইদিন আগে শুক্রবার মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের অংশে এ চিত্র দেখা যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কবির হোসেন খান জানান, মহাসড়ক দিয়ে অনেক যানবাহন পার হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কিন্তু মহাসড়কে কোথাও যানজট নেই। বলা যায় মহাসড়ক একদম ফাঁকা।
অন্যদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর অংশেও ফাঁকা দেখা গেছে। হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোর্শেদ তালুকদার জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আছে। তবে কোনও যানজট নেই। বরং মহাসড়ক কোথাও কোথাও ফাঁকা।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে নদীতে স্রোত ও ওয়ানওয়ে চ্যানেলের কারণে ফেরি পারাপারের সময় লাগছে এবং প্রত্যেক ফেরিকে চ্যানেলের মুখে ১০ মিনিটের মতো সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এই রুটে এখন চারটি রো রো ফেরিসহ ১৭টি ফেরি চলছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী এসব তথ্য জানান। এই কর্মকর্তা জানান, ঘাটে সকাল থেকেই অনেক যান পারাপার করা হয়েছে এবং এখনও প্রায় চারশত ছোটবড় যান ফেরি পারের অপেক্ষায় আছে। এসব যানের মধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার সবচেয়ে বেশি।
ঈদযাত্রায় বিড়ম্বনায় হিজড়া : ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপনে রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছেন অনেকেই। বাড়ির পথ ধরতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। বাস ও ট্রেনের অতিরিক্ত ভাড়া, জ্যাম, মলমপাটি, হকার উপদ্রপের সঙ্গে যোগ হয়েছে হিজড়াদের ঝামেলা। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাসে উঠে ঈদ বোনাসের নামে যাত্রীদের হয়রানি করছে তারা।
রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় কয়েকটি হিজড়াদল লোকাল বাসে ওঠে যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদের বোনাস নেওয়ার নামে নানান অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে টাকা আদায় করছে। আর কেউ টাকা না দিতে চাইলে তার সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে।
দিশারী পরিবহন গাড়ীর যাত্রী মাহবুব আলম জানান, পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার উদ্দেশ্য গুলিস্তান থেকে রওনা দিয়ে ২ বার হিজড়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সকালে সংসদ ভবনের কাছে গাড়ি জ্যাম থাকায় ২ টা হিজড়া ওঠে। এরপর টাকার জন্য জোর করলে বাধ্য হয়ে ১০ টাকা দিয়েছি কিন্তু আবার কল্যাণপুর বাস স্টপে আরেক হিজড়া এসে টাকা চায়। তখন না দিতে চাইলে তারা আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগাল করে। শুধু তাই নয় রাজধানীর প্রায় প্রত্যেকটি বাস স্টপে তাদের এ ঘাঁটি।
তানজিল পরিবহন বাসের ড্রাইভার মঞ্জুরুল জানান, এটা ঢাকার নিত্যদিনের ঘটনা। প্রায় যাত্রীদের হিজড়ারা হয়নি করে। ওদের অনেক বড় সংগঠন রয়েছে কেউ কিছু বলেও পারেনা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা দরকার বলে মনে করি।
এদিকে গাবতলি থেকে রাজশাহী যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত মিলা চৌধুরী জানান, আমি প্রায়ই হিজড়াদের টাকা দেই। আর গুলিস্তান থেকে মিরপুর যাওয়ার জন্য অনেক দিন ২ বারের বেশিও টাকা দিতে হয়। আর ঈদ আসলে অন্যান্য সিন্ডিকেটের মত হিজড়াদেরও উপদ্রপ বেড়ে যায়। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।
টেকনিক্যালে টাকা আদায় করার সময় তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) মৌসুমি রানী জানান, আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদেরও পেট আছে। মানুষে কাজ দেয়না। তাই বাধ্য হয়ে পথে নেমেছি। ঈদ আসলে আমরা একটু বাড়তি টাকা ওঠাই।
তিনি আরও বলেন, সবার সাথে আমরা দুর্ব্যবহার করি না। আমরাও চাইনা কেউ আমাদের দ্বারা কষ্ট পাক। এখানে যা কিছু করি সব পেটের দায়ে করতে হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *