ত্রিদেশীয় সিরিজে চোখ বাংলাদেশের

এইমাত্র ক্রিকেট খেলাধুলা

স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের পর থেকে সময়টা ভাল যাচ্ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেটের। মাত্র তিনদিন আগেই টেস্ট দল পুঁচকে আফগানিস্তানের কাছে এক ম্যাচের সিরিজে ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এই দুঃস্মৃতি তিনদিনেই ভুলে যাবার কোন সুযোগ নেই। তারপরও ঐ দুঃস্মৃতি নিয়ে আগামীকাল থেকে ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ।


বিজ্ঞাপন

সিরিজের অন্য দু’টি দল আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। টেস্ট হারের দুঃস্মৃতিকে পেছনে ফেলে, নতুন ফরম্যাটে নতুনভাবে পথ চলা শুরু করা বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য। সেই সাথে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপে প্রস্তুতির প্রথম ধাপও এটি বাংলাদেশের। আগামীকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচটি।

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ১১৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে, দুই ম্যাচ খেলার স্বাদ পাওয়া আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞতার ভান্ডারে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু অভিজ্ঞতাই যে, সব সময় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে তা নয়। আবার তারুণ্যনির্ভর দলই যে আগুনের মত জ্বলে উঠবে, তাও কিন্তু নয়। ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে বাঁকে বাঁকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। এতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিকল্পনাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়।

কিন্তু প্রায় ২০ বছর টেস্ট খেলে ‘বুড়ো’ হয়েও, তা রপ্ত করার কৌশলটাই এখনো শিখতে পারেনি বাংলাদেশ। যার ফল আফগানিস্তানের মত দলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন টাইগারদের। আরও সহজভাবে বললে, আফগানিস্তানের ১৯ বছর বয়সী অধিনায়ক রশিদ খানের স্পিন বিষে পুড়ে ছাড়খাড় বাংলাদেশ। এতে মনে পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ সিরিজের কথা।

১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট তিনদিনের একটি ম্যাচের দু’দিনেই অসিদের কাছে ৭ রানে ম্যাচ হারে ইংল্যান্ড। দেশের হারে ইংল্যান্ডের গণমাধ্যম সে সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা বলেছিলো- ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেল। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের অস্তিত্ব এখন শুধুই ‘ছাই’ যার ইংরেজী ‘এ্যাশেজ’। সেই থেকে দুই দলের এ্যাশেজ লড়াই শুরু। কিন্তু অনেক বছর পেরিয়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বড় দল ইংল্যান্ড। আফগানিস্তানের কাছে হারের পর অনেকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ‘মৃত্যু বা ছাই’ দেখছেন। কিন্তু তেমনটা না হলেই ভালো হবে। নতুন কোন টেস্ট সিরিজে নতুন চেহারায় দেখা যাবে বাংলাদেশ। এমনই প্রত্যাশা।

তবে এখন প্রত্যাশা ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখার প্রত্যাশায় ক্রিকেটপ্রেমিরা। কিন্তু এই ফরম্যাটে পরিসংখ্যান ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮-র ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩টি সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলে মাত্র একবার সেরার মুকুট পড়ে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ৩টি ড্র’ও আছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ টি-২০ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারে টাইগাররা। অবশ্য আগের সিরিজেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স ছিলো বাংলাদেশের। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। এটিই ছিলো ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮র ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি সিরিজ জয়।

তবে এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট সিরিজ হারের পর ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন সাকিব, ‘যত দ্রুত সম্ভব এই টেস্ট আমাদের ভুলে যাওয়া প্রয়োজন। সামনেই টি-২০ ম্যাচ। তাই ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। টি-২০ ফরম্যাটে আফগানিস্তান খুবই ভালো দল। আগামী বছরই টি-২০ বিশ্বকাপ। তাই টি-২০ ফরম্যাটে এখন থেকেই আমাদের ভালোভাবে নজর দেওয়া জরুরি।’

ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। টি-২০ ফরম্যাটে ভালো সাফল্য নেই তাদের। ২০১০ সালে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছিলো তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাটিতে এক ম্যাচের সিরিজ জিতেছিলো জিম্বাবুয়ে। আর সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ এ বছর দু’টি টি-২০ সিরিজ খেলে জিম্বাবুয়ে। দুই ম্যাচের সিরিজে নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ডসের বিপক্ষে দু’টি সিরিজই ড্র করে জিম্বাবুয়ে।

তবে হতাশা নিয়েই বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে এসেছে জিম্বাবুয়ে। গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে বরখাস্ত করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তাই সবধরনের ক্রিকেটে খেলাটা বন্ধ হয়ে যায় তাদের। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহায়তায় শেষ পর্যন্ত এই সিরিজটি খেলার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে।

তাই বিসিবি’র কাছে কৃতজ্ঞ জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের অনেক সমর্থন দিয়েছে। আবারো ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা আবারো মাঠে ফিরতে যাচ্ছি এবং আবার খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’

হতাশা থাকলেও ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে চনমনে আছে জিম্বাবুয়ে। কারণ গতকাল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে নিজেদের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একাদশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, শেখ মেহেদি হাসান, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও ইয়াসিন আরাফাত মিশু।

জিম্বাবুয়ে দল: হ্যামিলটন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), রেগিস চাকাভা, রিচমন্ড মুতুম্বামি, সিন উইলিয়ামস, নেভিল মাদজিভা, টিনোটেন্ডা মুতোমবদজি, টনি মুনিওয়াঙ্গা, কাইল জার্ভিস, তেন্ডাই চাতারা, কিস্টোফার এমপোফু, ক্রেইগ আরভিন, বেন্ডন টেইলর, আইনস্লে এনডিলোভু, টিমিচেন মারুমা ও রায়ার্ন বার্ল।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *