দুর্নীতিবাজদের পালাবার পথ নেই

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

ফুটপাথ বাণিজ্যে যুবলীগ ছাত্রলীগ
কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিবেদক : হকার উচ্ছেদে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁদাবাজ চক্র। দুই মেয়রের ‘ফুটপাথ-রাস্তা দখল মুক্ত’ করার সব অভিযান বারবার ব্যর্থ করে দিচ্ছে তারা। ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও পুলিশের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এ সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। শুধু গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথ-রাস্তা থেকেই এ চক্র প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার ফুটপাথ-হকার মিলিয়ে মাসে অন্তত কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। মোটা অঙ্কের এই চাঁদাবাজি বহাল রাখতে প্রভাবশালী চক্রটি উচ্ছেদকারীদের ওপর হামলা-মামলা ও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে। তাদের অপততপরতার কারণে হকার উচ্ছেদ দুই মেয়রের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হকার উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন সোচ্চার হলেও পুলিশ ও রাজনৈতিক বলয়ের চাপে তা সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশন এখন গুলিস্তান উচ্ছেদ নিয়ে বিপাকে।
এদিকে দলের চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে কথা বলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা ছিল বেশি লক্ষণীয়। এরই মধ্যে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদকেও অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আতঙ্কে রয়েছে দলীয় চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও সন্ত্রাসীরা।
অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মহিলা নেত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অভিনয় জগতের মানুষ সবার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনোতে কেউ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে এসে বের হতো খালি হাতে আবার কেউ অল্প টাকা নিয়ে ক্যাসিনো খেলে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বের হতো। এছাড়া মদ, মেয়ে মানুষ নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠত উপরে বর্ণিত দেশের নামীদামি ব্যক্তিরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের ফুটপাথ থেকে ৫ শতাধিক ব্যক্তি নিয়মিত চাঁদার টাকা তুলছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী-ফিটিংপার্টিসহ অর্ধশত ব্যক্তি। প্রতিটি এলাকায়ই পুলিশের নামেও তোলা হচ্ছে বখরা। ফুটপাথে আগে থেকে ব্যবসা করে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চাঁদাবাজদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজিতে। ফলে যথাযথ আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা াকা সত্ত্বেও ফুটপা দখলমুক্ত করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদাবাজরা এলাকাভেদে ২ থেকে ৩শ’ দোকানের একটি অংশকে নাম দিয়েছে ‘ফুট’। চক্রাকারে ফুটের হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদার টাকা নিচ্ছে চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত লাইনম্যানরা। তাদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছেন প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মনোনীত সর্দার। লাইনম্যানের উত্তোলিত টাকার সিংহভাগই যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মস্তান বাহিনীর পকেটে। আর সর্দারদের কাছে পৌঁছানো টাকার ৭৫ শতাংশ পাচ্ছেন অসাধু ওই পুলিশ-আনসার সদস্যরা। দোকানগুলোয় অবৈধভাবে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত বিদ্যুত বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটেও যাচ্ছে লাইনম্যান ও সর্দারের উত্তোলিত টাকার একটি অংশ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইনম্যানদের দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা পরিশোধ করে দোকান চালাতে হয়। চাঁদার রেট কম হলেই উচ্ছেদসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। ভেঙ্গে দেয়া হয় দোকানপাট।
জানা গেছে, শুধু ফুটপাথের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে এমন গডফাদার গুলিস্তানে ৪, মতিঝিলে ৩, সদরঘাটে ৩, নিউ মার্কেটে ৫, ফার্মগেটে ৩, মিরপুর-১ নম্বরে ২, মিরপুর-১০ নম্বরে ২, উত্তরায় ২, বাড্ডায় ২, কুড়িলে ২, কামরাঙ্গীরচরে ১৯, লালবাগ বেড়িবাঁধে ৭, বংশাল-কোতোয়ালিতে ৬ জন রয়েছে। অন্যরা রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন ফুটপাথ থেকে চাঁদা তুলছে ৭০টি চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত ৫ শতাধিক লাইনম্যান।
গুলিস্তান হকার্স, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, খিলগাঁও তালতলা, মিরপুর শাহ আলী, ১ নম্বর, গুলশান-১ ও ২, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার, মুক্তবাংলা, উত্তরা ও পুরান ঢাকার ফুটপাথ ব্যবসায়ীরাও একই রকম তথ্য জানান ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা। এদিকে লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধে মঙ্গলবার হলিডে মার্কেটের অন্তত ২ হাজার ফুট দোকান থেকে দোকানপ্রতি গড়ে আড়াই শ’ টাকা করে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন শাসক দলের নেতা পরিচয়দানকারী হাফেজ সুমন, জাকির, শাহীন ওরফে অটোশাহীন, বারেক, সেলিম, বিপ্লব ও মোকলেস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কয়েক ব্যবসায়ী জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের জিসান, মিরপুরের শাহাদাত ও লিটু, কাওরানবাজারের আশিক, কল্যাণপুরের বিকাশ-প্রকাশ, বাড্ডার মেহেদী, মগবাজারের রনি, আদাবরের নবী, মোহাম্মদপুরের কালা মনির, শাহ আলীর গাজী সুমন, পল্লবীর মোক্তার, কাফরুলের শাহীন সিকদার, যাত্রাবাড়ীতে ইটালি নাসির, জুরাইনের কচির নাম ব্যবহার করছে চাঁদাবাজ চক্র। বাড্ডা এলাকায় ডালিম, রবিন, ভাগ্নে ফারুক, আরিফ, মান্নান, রমজান, দুলাল, মানিক, শিপলু, রায়হান, রুবেল, রিয়াদ, রামপুরায় কালা পলাশ ও মুরাদ, গুলশান-বনানীতে টিপু, মহাখালীতে অপু, মিলন ও জামাই মুকুল, সাততলা বস্তিতে মনির ও লম্বু সেলিম, খিলগাঁওয়ে খালেদ ও মানিক, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদে জাহাঙ্গীর ও সায়েম আলী, হাজারীবাগে বুলু, লিংকন, তপু, জনি, রফিক, বিল্লু ও মুন্না, কলাবাগানে নাজিম বাবু ও ইমন, মোহাম্মদপুরে গালকাটা মোশারফ, লম্বা মোশারফ, চিকা জসিম, আহম্মদ, সাজ্জাদ, মোহন, পাভেল, লোটন, চায়নিজ তানভীর, রবিন, আদিত, মীম, খলিল ও হাজী আক্কাস এবং শাহ আলীতে বল্টু রাসেল, মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরে কালাচান ও কিলার বুলবুল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররম জিপিও লিংক রোডে হলিডে মার্কেটে খোকন মজুমদার, আবুল হাসেম, মজিবর, পোটল, নসু, হারুন অর রশীদ ও তার সহযোগীরা, উত্তরগেট এলাকায় দুম্বা রহিম, সাজু চাঁদা তুলছে। শাপলা চত্বরে আরিফ চৌধুরী, পল্টনে দুলাল মিয়া ও তার সহযোগী, গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্স ও রাস্তায় আমিন মিয়া, সাহিদ ও লম্বা হারুন, জুতাপট্টিতে সালেক, গোলাপশাহ মাজারের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে ঘাউড়া বাবুল ও শাহীন টাকা তুলছে।
ওসমানী উদ্যানের পূর্ব ও উত্তর অংশে লম্বা শাজাহান, গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটের পশ্চিমে কাদের ও উত্তরে হান্নান, পূর্বে সালাম, আক্তার ও জাহাঙ্গীর, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় লাইনম্যান সর্দার বাবুল, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের উত্তর পাশের রাস্তায় জজ মিয়া, পূর্ব পাশের রাস্তায় সেলিম মিয়া, মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মো. আলী, আবদুল গফুর ও বাবুল ভুঁইয়া, শাহবাগে ফজর আলী, আকাশ, কালাম ও নুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ীতে সোনামিয়া, তোরাব আলী, মান্নান টাকা তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। জুরাইন-পোস্তগোলায় খায়রুল, সিরাজ তালুকদার ও গরু হানিফ, লালবাগে আবদুস সামাদ, চাঁনমিয়া ও ফিরোজ, মিরপুরে-১-এ ছোট জুয়েল, আলী, বাদশা ও মিজান, মিরপর-১১ এ আবদুল ওয়াদুদ, শফিক ও হানিফ, গুলশানে হাকিম আলী, কুড়িলে আবদুর রহীম ও নুরুল আমিন, এয়ারপোর্টে আকতার, মনির, ইব্রাহিম, জামাল ও বাবুল, উত্তরায় টিপু, নাসির ও হামিদ।
গুলিস্তানের লাইনম্যান জজমিয়া জানান, এক হাজার টাকা তুললে তাকে দেয়া হয় ২শ’ টাকা। পুলিশ নেয় ৫শ’, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পান ৩শ’ টাকা। প্রতিরাতে থানার ক্যাশিয়ার এসে ভাগের টাকা নিয়ে যায়। আর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে যারা চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন তাদের কোন নেতাকর্মীর নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের তথ্যমতে, রাজধানীতে ১ লাখ ১০ হাজারের মতো হকার রয়েছে। ফুটপাথের দোকানের পজেশন ও পরিধি বুঝে প্রতিদিন দোকান প্রতি ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। চাহিদার টাকা বুঝে পেয়ে চাঁদাবাজরা নানা কৌশলে প্রতিদিনই তাদের মনমতো মৌসুমি হকারও বসাচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধে বিপত্তি। রাস্তা দখল করে ফুটপাথ বসিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে বহুবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। মামলাও করা হয়েছে। কাজ হয়নি। উল্টো অভিযোগের বিষয় ফাঁস হলেই লাইনম্যানরা সন্ত্রাসী দিয়ে তাদের হকার উচ্ছেদ বা মালামাল লুট করত। বাধা দিলে মারধরের শিকারও হতে হয়। ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন চাইলে প্রকৃত হকারদের কাছে ফুটপাথ ইজারা দিতে পারে।
আর নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে হকারদের বসানো যায়। কিন্তু নাগরিকদের চলাচলের জন্য ফুটপাথ খোলা রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অভিযানের কিছুক্ষণ পরই ফুটপাথে হকারদের বসিয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। এর বিনিময়ে প্রতিদিন হকারদের কাছ থেকে তারা তুলে নিচ্ছেন চাঁদা। সেই চাঁদার ভাগ যাচ্ছে পুলিশের পকেটেও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ফুটপাথগুলোর দখল এখন নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে। ঢাকার অন্তত ২২ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গুলিস্তানের ফুটপাথের ৩০টি ফুটপাথে দোকান রয়েছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। দোকান ও পজিশন-হারে প্রতি দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় হচ্ছে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর এ টাকা লাইনম্যানদের হাত হয়ে চলে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা ও মাস্তানদের পকেটে। ফলে এখানকার লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা ক্ষমতার দাপটে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা চাঁদা আদায়ে এতই বেপরোয়া যে নির্ধারিত চাঁদা দিতে দেরি হলে হকারদের মালামাল তছনছ করে রাস্তায় ফেলে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হকারদের মারধরও করে। লাইনম্যান চাঁদাবাজদের সর্দার হিসেবে রয়েছে দুজন। প্রথমজন বাবুল সর্দার— তিনি রাজনৈতিক নেতা ও পেশাদার মাস্তানদের কাছে চাঁদার অংশ পৌঁছে দেন। দ্বিতীয়জন সর্দার আমিন— তিনি চাঁদাবাজির প্রাপ্য অংশের টাকা পৌঁছে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এ দুই চাঁদাবাজ-সর্দারই রাজধানীতে বাড়ি-গাড়ির মালিক বনেছেন। প্লট-ফ্ল্যাট, ব্যাংক ব্যালেন্সেরও কমতি নেই তাদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিতই ফুটপাথ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির অভাবে আবারও ফুটপাথ দখল হয়ে যায়। অভিযানের পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি আইন প্রয়োগ করত, তাহলে এ অবস্থা হতো না।’
লাইনম্যান যারা : বায়তুল মোকাররম ১ নম্বর গেটে চটপটি কাদির, ভোলা ও কানা সিরাজ; ভাসানী স্টেডিয়াম আলী মিয়া, লম্বা হারুন ও দেলোয়ার; নাট্যমঞ্চ খোরশেদ ও কবির হোসেন; ট্রেড সেন্টারের আশপাশ নাছির, রাহাত ও লুৎফর; সিটি সেন্টার স্বপন; বঙ্গবন্ধু স্কয়ার চিংড়ি বাবুল, লিপু ও হিন্দু বাবুল; বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হাঁপানি রব, রুহুল মিয়া ও সুলতান; আওয়ামী লীগ অফিস গলি আখতার, মোচ জাহাঙ্গীর ও সর্দার সালাম; জিপিওর আশপাশ কোটন ও ঘাউরা বাবুল। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন মার্কেট সিটি সেন্টার পুরোটাই দখল করে রেখেছেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনু মিয়া। তার প্রভাবে ভবনটির নির্মাণকাজ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন সম্পন্ন করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
দখল-উচ্ছেদ-পুনর্দখল : হকার সমিতিগুলোর হিসাবে, ঢাকায় প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার হকার আছেন। এর মধ্যে দেড় লাখ হকার ফুটপাথে বসে। ২৫ হাজার রাস্তায় দোকানদারি করে। আর ২৫ হাজার মৌসুমি হকার। এরা রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় আসেন। বাকি হকাররা গণপরিবহন, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নানা পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এসব হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন স্থানভেদে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। ঈদ কিংবা উৎসবে এ চাঁদার হার আরও বেড়ে যায়। বছরে এর পরিমাণ ৯০০ কোটি টাকার বেশি। রমরমা এ চাঁদাবাজির কারণেই সকালে হকার উচ্ছেদ করলে বিকালে পুনরায় বসে যায়। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায় হকার নামধারী এসব চাঁদাবাজরা। এরপরও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক দিন পরই চাঁদাবাজদের নেতৃত্বে আবারও ফুটপাথ দখল হয়ে যায়।
পালাবার পথ নেই : সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মহিলা নেত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অভিনয় জগতের মানুষ সবার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনোতে কেউ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে এসে বের হতো খালি হাতে আবার কেউ অল্প টাকা নিয়ে ক্যাসিনো খেলে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বের হতো। এছাড়া মদ, মেয়ে মানুষ নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠত উপরে বর্ণিত দেশের নামীদামি ব্যক্তিরা।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের অভ্যন্তরীণ এসব চিত্র ভিডিওসহ বিস্তারিত প্রমাণাদি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছে। এসব দেখে প্রধানমন্ত্রী অভিযান চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এসব অপকর্মকারীরা যে দলেরই হোক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও বলে গেছেন, তিনি দেশে না থাকলেও অভিযান যেন চলতে থাকে। এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নালিশ করে কোনো কাজ হবে না। ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি, একে একে সব ধরবো। ফলে চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে এসব অপকর্মকারীদের পালানোর কোনো পথ নেই এবং অস্বীকার করে কিংবা নালিশ বা তদবির করেও বাঁচার সুযোগ থাকছে না।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে তারা ক্লাবগুলো নজরদারি করেছেন। এসবের কর্মকান্ডের বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন। এরপর ক্লাবের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ এবং তাদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছেন। এসব দেখে প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন এবং এসবের মূল উৎপাটন করতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, যাদের নেতৃত্বে দেশ ও সমাজ পরিচালিত হয় তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি রাতদিন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন করছেন, অথচ দলের নাম ভাঙিয়ে দলের বদনাম করে কিছু লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যাপ্ত বেতন বাড়িয়েছেন সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে, অথচ তারা নিজেরা আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে। সবাই মিলে কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে পুরো সমাজকে নষ্ট করছে এবং এ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে দেশ ও সমাজ নষ্টের এই উপকরণ ক্লাবের ক্যাসিনো, জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বলেছেন এবং কারো কোনো কথা না শুনতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে বলে গেছেন, যে অভিযান তিনি শুরু করেছেন তা যেন চলতে থাকে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, ক্লাবে যাদের যাতায়াত ছিল, ক্যাসিনো খেলতো তাদের বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়া হবে।
গোয়েন্দারা জানান, ক্লাব ও ক্যাসিনোতে বর্তমান ও সাবেক এমপিদের অনেকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ক্যাসিনোতে এমপিদের সরাসরি প্ররোচনা ছিল। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা, মহিলা নেত্রী, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্যাসিনো খেলতেন। বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ক্যাসিনো খেলতেন। ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ধনীদের সন্তান কেউই ক্যাসিনো খেলা বাদ রাখেননি। অনেকে ব্যাগভর্তি টাকা এনে শূন্য হাতে ফিরতেন। আবার অনেকে জুয়ায় জিতে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে যেতেন বলে ভিডিও রয়েছে।
গোয়েন্দারা আরো বলেন, ক্লাবের যেসব নেতা বলছেন তারা ক্লাব পরিচালনা করলেও ক্যাসিনোর বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানতেন না, ভিডিও দৃশ্যে তা মিথ্যা প্রমাণিত। যারা ক্যাসিনোতে জড়িত তারা বেশির ভাগই গা-ঢাকা দিয়েছে। অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছে। তবে ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ থাকায় তাদের ধরতে কোনো সমস্যা হবে না এবং একে একে সবাইকে ধরা হবে বলে জানান গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি ফকিরের পুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবসহ রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালানোর মাধ্যমে মদ, জুয়া আর ক্যাসিনোতে কোটি কোটি টাকা উড়ানোর খবর বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসে ক্লাবের অন্তরালে খেলার উন্নয়নের নাম করে ক্যাসিনোর খবর।
এসব পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে উঠে আসে যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের নাম। অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ফকিরেরপুরে ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ। এ অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি কাকরাইলের অফিসে অবস্থান করলেও গত রোববার থেকে তিনি সেখানে নেই এবং তার মোবাইল বন্ধ। নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এদিকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি ও কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ অভিযানের কারণে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরছেন না।
এদিকে ক্লাবের গডফাদার হিসেবে নাম বেরিয়ে আসছে আরো অনেকের। যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইকবাল সান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের চৌধুরীর নাম।
গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা যায়, ক্যাসিনোর আসরে শুধু জুয়াই খেলা হতো না, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে কোন ঠিকাদার কাজ পাবে, কমিশন কে কত পাবে সে বিষয়ে দেনদরবার হতো। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বিভিন্ন প্রজেক্টের পরিচালক হওয়ার আলাপ-আলোচনার জন্য নিরাপদ স্থান ছিল ক্যাসিনো। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব তথ্য যাওয়ায় শঙ্কায় দলের অনেক নেতা। ভেতরে ভেতরে চলমান শুদ্ধি অভিযানের সমালোচনাও করছেন অনেকে। এ অভিযানে দল দুর্বল হচ্ছে বলেও মতামত দেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। এছাড়া অনেকেই নানাভাবে এ অভিযানকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন।
কঠোর আওয়ামী লীগ : দলের চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে কথা বলার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা ছিল বেশি লক্ষণীয়। এরই মধ্যে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদকেও অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আতঙ্কে রয়েছে দলীয় চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও সন্ত্রাসীরা।
সূত্রে জানা যায়, দলের ভেতর থেকে যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও জুয়ার আসন পরিচালনা করেন তাদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে রয়েছে। এছাড়া নেতাকর্মীর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন কমিটিসহ নানাভাবে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এগুলো থেকে বেছে বেছে নাম নিয়ে তালিকা তৈরি হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিষ্কার। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি আমরা অনুসরণ করছি। উনি যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবে আমরা কাজ করছি।
জুয়ার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা কোনো ধরনের ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। এসবের নেপথ্যে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র‌্যাব অভিযান শুরু করেছে, পুলিশও অভিযান শুরু করবে।
এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা দেখছেন ‘কড়া বার্তা’ হিসেবে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের আইন আদালতের ঊর্ধ্বে মনে করছেন উল্লেখ করে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আশা, দলীয় প্রধানের (শেখ হাসিনা) কঠোর অবস্থান ওই সব নেতার ‘কাজে’ লাগাম টানবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের যত বড় নেতাই হোক না কেন, অপকর্ম করলে কেউ ছাড় পাবে না।
তিনি বলেন, যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, তারা কেউই ছাড় পাবে না। তবে সবার বিরুদ্ধেই দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না, অনেকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেতাকর্মীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব সেল রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই দলের নেতাকর্মীদের অপকর্মে জড়িয়ে পড়াকে অপছন্দ করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো তার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকে না।
কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে কী ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই নেতা বলেন, দল নেতাকর্মীদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে। দলের বিরুদ্ধে বা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা যাচ্ছেন, তাদের ইতোমধ্যে শো’কজ করা হচ্ছে। ব্যবস্থাও নেয়া হবে। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে আছেন, এমন নেতাদের কর্মকা-ও খুঁজে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ কোন স্তরের আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে গেলে বা তার কাজে বিরক্ত-ক্ষুব্ধ হলে সেটা তো দলের বিরুদ্ধেই যায়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *