অবশেষে সম্রাট সাম্রাজ্যের পতন

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী রাজনীতি সারাদেশ

শিবির নেতার বাসায় আশ্রয় ছিলেন সম্রাট!
সম্রাটের ‘ক্যাসিনো গুরু’ আরমান
সম্রাটের অফিসের সামনে জনতার ভিড়
সম্রাট-আরমানকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার

মহসীন আহমেদ স্বপন : ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে আলোচিত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। রোববার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করা হয়। ক্যাসিনো চালানোর তথ্য প্রকাশের পর আত্মগোপনে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহ সভাপতি এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের গ্রেপ্তারের পর অসামাজিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করেছে যুবলীগ। সম্রাট ও আরমানকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে নেয়া হয়েছে তার কাকরাইল অফিসে। এমন খবরে কাকরাইল এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। সম্রাটের অফিসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করছে।
দুপুর একটা চল্লিশ মিনিটের অফিসের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন র‌্যাব সদস্যরা। এরপর পৌনে দুইটার দিকে সম্রাটকে কার্যালয়ে প্রবেশ করানো হয়। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গণমাধ্যমকর্মীদেরও কার্যালয়ের মূল ফটক থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
এদিকে সম্রাটের অনেক সমর্থককেও সম্রাটের কার্যালয়ের আশপাশে দেখা গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা উপস্থিত জনতাকে কার্যালয়ের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না। ঈসা খাঁ হোটেলের মোড়, সেগুনবাগিচা এলাকায় জনতার ভিড় ঠেকাতে একাধিক ব্যারিকেট দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতার কাউকেই সেই ব্যারিকেড পার হতে দেয়া হচ্ছে না।
শিবির নেতার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সম্রাট! : স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের যে বাড়িতে সম্রাট আশ্রয় নিয়েছিলেন সেটি তার আত্মীয়ের বাসা। চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামটি ফেনী জেলা লাগোয়া।
আলকরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, একসময় বাড়ির মালিক মনির হোসেন চৌধুরী জামায়াত শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। এখন তিনি পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত। এলাকায় বেশি একটা আসেন না। শনিবার সন্ধ্যা থেকে তার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয় র‌্যাব। সেখান থেকে ভোরে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এর আগে এলাকাবাসীদের কেউই সম্রাটকে ঐ বাসায় থাকাকালীন দেখেননি বলে জানান। বাড়িটি রোববার বেলা দুইটার সময়ে তালাবদ্ধ ছিল।
ফেনীর পশুরামপুরে সম্রাটের বাড়ি হওয়ায় আগে থেকেই তিনি এই আশ্রয়স্থলের কথা জানতেন।
সম্রাটের সঙ্গে গ্রেফতার তার সহযোগী আরমানকেও ঢাকায় আনা হয়েছে। ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করেছে র‌্যাব। সম্রাটকে কাকরাইলের তার নিজস্ব কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরু থেকেই নজরদারিতে ছিলেন সম্রাট। এ সময়ের মধ্যে তিনি বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তিনি দেশ ছাড়তে পারেননি।
রাজধানীর ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে জুয়াড়িদের কাছে বেশ পরিচিত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগে এতদিন পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন বলে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসাসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া র‌্যাবের অভিযানে আটক হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ধরা পড়েন আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। এ দু’জনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। এতে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।কিন্তু সম্রাট ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযান শুরুর প্রথম তিন দিন দৃশ্যমান ছিলেন তিনি। ফোনও ধরতেন। কয়েক দিন কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়েও অবস্থান করেন সম্রাট। ভূঁইয়া ম্যানশনের অবস্থানকালে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দিয়ে রাখছিলেন। সেখান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে যান সম্রাট। এরপর তার অবস্থান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত একটি আদেশ দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়। তার ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, সম্রাটের ব্যাংক হিসাবে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, তার হিসাব দিতে।
সম্রাটের ‘ক্যাসিনো গুরু’ আরমান : ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সঙ্গে আটক হয়েছেন তার সহযোগী এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান। তিনি পরিচিত সম্রাটের ‘ক্যাসিনো গুরু’ হিসেবে। বিএনপি থেকে এসে যুবলীগের পদ পান আরমান। ক্যাসিনোকা-ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্রাট ও আরমানকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের মুখপাত্র সারওয়ার-বিন-কাশেম।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *