গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর প্রাক-অবসর প্রমোদ প্রশিক্ষণ

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা

এম এ স্বপন : আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন। তবে এর মাত্র দুই মাস আগে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভবন সুরক্ষা উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিতে গণপূর্তের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে তুরস্কে। সেই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন অবসরের মুখে থাকা এই প্রধান প্রকৌশলীও। ৯ দিনের এই প্রশিক্ষণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। অবসরের মাত্র দুই মাস আগে প্রধান প্রকৌশলীর এমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ গণপূর্ত অধিদফতরেই।
গণপূর্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়ার পর ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভবন সুরক্ষা উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের সব আয়োজন শেষ করেছেন প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন। এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ থেকে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভবণ সুরক্ষা উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের তুরস্কে প্রশিক্ষণের জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশন চাওয়া হয়। তাদের কোটেশন দাখিলের পর প্রশিক্ষণের জন্য সর্বনি¤œ দরদাতা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রেনিং এন্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার (টিটিটি)কে প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গাইড হিসেবে কাজ দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানই গণপূর্তের দলটিকে নিয়ে যাচ্ছে তুরস্কে। সেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতেই কর্মকর্তাদের জন্য খরচের হিসেব ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫৫ টাকা।
তুরস্কের এই ওই প্রশিক্ষণে ৬ জনের প্রতিনিধি দলে আছেন— গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকার (সঙ্গে যাবেন তার স্ত্রী মিসেস রোকেয়া শহীদ), গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদফতরের ডিজাইন বিভাগ ৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসাইন, গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা বিভাগ ৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এন এম মাজাহারুল ইসলাম ও পরিকল্পনা কমিশনের ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী চিফ মো. সালাহ উদ্দীন (সঙ্গে যাবেন তার স্ত্রী ফারজানা ইসলাম আঁখি)। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত।
সূত্র বলছে, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন প্রশিক্ষণে তার সব অনিয়মের সহচর ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুলকেও সঙ্গে নিয়েছেন।
প্রশিক্ষণ প্রতিনিধি দলটির গত মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি মাসের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ভ্রমণের সময় ছিল ৯ দিন। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তারা নির্ধারিত সময়ে যেতে পারেননি। এখন ভিসা হওয়ায় তারা যেকোনো সময়ে তুরস্কের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়বেন বলে জানা গেছে।
৯ দিনের প্রশিক্ষণের খরচের হিসেবে দেখা গেছে, বিমানে আসা-যাওয়া খরচ ২২ হাজার ১৯৪ ডলার, প্রতিদিনের খরচ ১২ হাজার ৩৫৬ ডলার, অনুষ্ঠান সংক্রান্ত খরচ ২৫ হাজার ৫০ ডলার এবং পুরো প্রশিক্ষণের ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৬৩ ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসেবে মোট প্রশিক্ষণ খরচ ৬৫ হাজার ৮৬৩ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫৫ টাকা।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি মো. খুরশেদ আলমকে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি পিআরএল এ যাওয়ার কথা ছিল তার। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তার পর একই ব্যাচের জয়নুল আবেদীনের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন দিন আগে ৭ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাহাদাতকে।
এর আগে, চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-৪-এ কর্মরত অবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে দরপত্র আহ্বান করায় সতর্ক করা হয়েছিল সাহাদাতকে। নোয়াখালীতে কর্মরত অবস্থায় জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির দায়ে দুদকের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে থাকায় কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।
অন্যদিকে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকারকে একাধিকবার তার ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের জনগণের অর্থ দিয়ে যখন এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্র কতটা সুফল পাবে, সেটাই দেখার বিষয়। যারা প্রশিক্ষণ নেবেন, তাদেরকে কী মাপকাঠিতে নির্বাচন করা হয়েছে, সেটাও প্রশ্ন রাখে। বর্তমানে প্রশিক্ষণকে সুবিধা অর্জনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা প্রকল্প সংষ্কৃতি হিসেবে বিবেচিত। আজকাল প্রশিক্ষণ, তথা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অন্য দেশের থেকে রোল মডেল। সেই জায়গায় এমন দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ অপচয় হচ্ছে কি না— সেটাও খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *