বুয়েট শিক্ষার্থীদের তিন শর্ত

এইমাত্র জাতীয় রাজনীতি শিক্ষাঙ্গন

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত মাসে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একাডেমিক অসহযোগে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের স্থায়ী বহিষ্কারসহ তিনটি শর্ত পূরণ হলে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে রাজি বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।


বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার পুলিশ আদালতে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ গাঙ্গুলি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে তিনি তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে আসন্ন টার্ম পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানান। তাদের দাবিগুলো হলো:

১) চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা।

২) আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলের র‌্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া।

৩) সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি এবং র‌্যাগের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা করা। পরে ওই নীতিমালাগুলো বুয়েট একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন করে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরবর্তী ধাপগুলোতে পাঠানো।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে তারা আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার অংশগ্রহণ করবেন। টার্ম পরীক্ষার অন্তত সাত দিন আগে তৃতীয় দাবি পূরণ করলে তারা পরীক্ষা দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ২ নভেম্বরের সেই সভায় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানিয়েছিল। বলা হয়েছিল, আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র‌্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে পরবর্তী সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের ওপর বিশ্বাস রেখে আমরা অপেক্ষা করলেও দুই সপ্তাহেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি করার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তার অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’

আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। আসামি ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

তদন্ত শেষে পুলিশ বলেছে, আবরারকে হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১১ জন। তারাই আবরারকে কয়েক দফায় মারপিট করেন। বাকি ১৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *