সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ : প্রধানমন্ত্রী

এইমাত্র চট্টগ্রাম জাতীয় সারাদেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বঙ্গোপসাগর যে অপার সম্পদের উৎস, সে কথা তুলে ধরে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে নৌবাহিনীকে সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসার ফলে সমুদ্রের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রচুর মৎস্য ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তারা শেষ করছেন, তা উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র।
সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ণ করে এবং তার বাস্তবায়ন শুরু করে।
সেই থেকে টানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে আমাদের সরকারের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজিত হয়েছে। আমরা নৌবাহিনীর দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড এবং নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা এভিয়েশন উইং সৃষ্টি করেছি।
২০১৭ সালে আমরা নৌবহরে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করি। এর ফলে আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সমর্থ হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে নৌবাহিনী যাতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সেজন্য সরকার এ বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি করে যাচ্ছে।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড পাঁচটি পেট্রল ক্রাফট ও দুটি লার্জ পেট্রল ক্রাফট নির্মাণের মাধ্যমে দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘মাইলফলক’ স্থাপন করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে আরও পাঁচটি পেট্রল ক্রাফট নির্মাণের কাজ চলছে।
এছাড়া নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে ছয়টি আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত বড় আকারের ফ্রিগেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনী তিন বাহিনীর জন্য আইএফএফ (আইডেন্টিফিকেশন অব ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফো) সিস্টেমও প্রস্তুত করছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী পর্যায়ক্রমে সামরিক নৌযানের বাণিজ্যিক নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর ফলে দেশীয় প্রযুক্তি বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৬১ জন মিডশিপম্যান এবং ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ নবীন অফিসার এ অনুষ্ঠানে কমিশন লাভ করেন। তাদের মধ্যে ৭ জন নারী এবং মালদ্বীপের দুইজন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সদ্য কমিশন প্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশিপম্যান হিসাবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌ প্রধান স্বর্ণ পদক এবং সাব লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক পান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *