সাবেক মেজর সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ ৭দিনের রিমান্ড

অপরাধ আইন ও আদালত সারাদেশ

আজকের দেশ রিপোর্ট : মেজর সিনহা রাশেদ হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি সহ তিন পুলিশ সদস্যের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত, বাকিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজারের আদালত। বাকি অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং এস আই নন্দলাল রক্ষিতকে সাতদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
বাকি চারজন আসামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আর অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন আত্মসমর্পণ করেননি বলে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহম্মদ মোস্তফা জানিয়েছেন।
শুরুতে অভিযুক্ত ৯ জন পুলিশ সদস্যের সবাই আত্মসমর্পণ করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হলেও পরে জানা গেছে যে অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন আত্মসমর্পণ করেননি।
রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার আগে সন্ধ্যায় আদালত অভিযুক্তদের সবাইকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা সেসময় বলেছিলেন, যেহেতু এটি হত্যা মামলা, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন দেয়ার এখতিয়ার নেই। তাই তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
তবে এর কিছুক্ষণ পর র‍্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দল আদালতে আসে। অভিযুক্তদের
এর আগে দুপুরের দিকে ওসি প্রদীপ কুমার দাস চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের আদালতে নেয়া হয় তাকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এস আই লিয়াকতসহ বাকি আটজন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য। এর আগে বুধবার কক্সবাজারের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপ কুমার দাস এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকতসহ নয়জন পুলিশ সদস্যকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত মেজর (অব.) সিনহা রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়ার।
মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র‍্যাবকে।
এছাড়া ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।


বিজ্ঞাপন

গত ১লা অগাস্ট টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক সেনা কর্তা।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হবার ঘটনায় সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্মে যত আলোচনা হচ্ছে, এর বেশিরভাগই চলছে নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা, টেকনাফ পুলিশকে কেন্দ্র করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায় সেদিকেও অনেকের নজর রয়েছে।
যদিও দুই বাহিনীর প্রধান এরই মধ্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হবার বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এসব আলোচনার ভিড়ে অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে নিহত সিনহা রাশেদের সাথে থাকা তিন শিক্ষার্থীর কথা। সিনহা মো. রাশেদ খানের সাথে কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি তৈরির সময় যে তিনজন সাথে ছিলেন তাদের মুক্তির দাবিতে সহপাঠিরা নানা কর্মসূচী পালন করছে।

তিন শিক্ষার্থীর কী অবস্থা? : এই তিনজন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা হলেন শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। এদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে তাদের অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি দুইজন – শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।
এর মধ্যে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের।

মামলা করলেন গুলিতে নিহত রাশেদের বোন : পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন তখন সেখানে ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সাথে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট এবং গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ। শিপ্রা এবং সিফাতের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচী পালন করেছে তাদের শিক্ষার্থী বন্ধুরা।

অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশী মদ, দেশীয় চোলাই মদ ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন। পুলিশের ভাষ্য মতে, আত্মরক্ষার জন্য মেজর রাশেদ খানকে গুলি করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এরপর সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সে রিসোর্টে গিয়ে একটি কক্ষে শিপ্রা দেবনাথ এবং আরেকটি কক্ষে তাহসিন রিফাত নূরকে পাওয়া যায়।
এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, শিপ্রা দেবনাথের কক্ষ তল্লাশি করে সেখানে বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ এবং গাঁজা পাওয়া যায়।
পরিবার কী বলছে : শিপ্রা দেবনাথের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। তার বাবা-মা সেখানেই বসবাস করেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ।
তার মা পূর্ণিমা দেবনাথ টেলিফোনে জানান, গ্রেফতারের পর থেকে মেয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়নি।