ভয়ঙ্কর বিষয়

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী স্বাস্থ্য

একই সঙ্গে করোনা-ডেঙ্গু আক্রান্ত


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে বর্তমানে একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রচুর রোগী পাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এটা একটা ভয়ঙ্কর বিষয়। একজন রোগী একই সাথে করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কারণ ডেঙ্গু ও করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থায় পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার ঘটনাও ঘটতে পারে।
অন্যদিকে দেশে গত চার মাসে করোনা রোগীদের মধ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্টেই বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যত করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার ৯০ শতাংশেরই বেশি ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে। তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে অসতর্ক থাকার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে দেরি করা, গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষায় অনীহা ও সময়মতো হাসপাতালে না আসায় এসব মৃত্যু দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ হাজার ২৫৫ জনে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার (২৮ জুলাই) করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২৩৭ জন এবং শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ২৩০ জন।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১৮১ জন। এ নিয়ে চলতি বছরে সারাদেশে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিলো, ২৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ২৮ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫০ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩ জন। আর বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৫৬৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫৭ জন এবং রাজধানীর বাইরে ১১ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডেঙ্গু ও করোনা দুটিতেই আক্রান্ত রোগী এখন অনেক পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর হলেই প্রথমে করোনা ও পরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও ঘামখেয়ালিপনা করলে মৃত্যুর আশংকা রয়েছে।
তিনি বলেন, এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এডিস মশা দিনে কামড়ায়। শীত না আসা পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকতে পারে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। জমে থাকার বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় একই। তবে কিছু পার্থক্য আছে। দুইটার ক্ষেত্রেই জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি এবং স্বাদ না থাকা হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের সাথে নাকে ঘ্রাণ পায় না এবং কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়। এছাড়া করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে, যেটি ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে হয় না। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন পরে শরীরে লাল অ্যালার্জির মতো র‌্যাশ হতে পারে। তখন রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী দুই হাজার ৯৮ জন, যার মধ্যে এক হাজার ৫২৬ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। এখন হাসপাতালে আছে ৫৬৮ জন, যাদের মধ্যে ৫৫৭ জন ঢাকায় এবং ১১ জন ঢাকার বাইরে। চলতি জুলাই মাসে গতকাল পর্যন্ত ২৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৭২৬ জন, জুন মাসে যা ছিল ২৭২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সব হাসপাতালে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্ট করতে বলা হয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অ্যান্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। জ্বরের উপসর্গ থাকলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্ট করাও জরুরি।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র বুধবারও কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীর সহযোগিতা চান। দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগস্ট মাসটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে নগরবাসীকে তা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে হবে। আর উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন, যে ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে কম থাকবে সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে পুরস্কৃত করা হবে। একই সঙ্গে লার্ভা থাকা বিভিন্ন স্থাপনার ছবি যে স্বেচ্ছাসেবক সবচেয়ে বেশি তুলে দেবেন তাঁকেও পুরস্কৃত করা হবে।