ঈদযাত্রায় ভোগান্তি

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী সারাদেশ

মহসীন আহেমদ স্বপন : ঈদের দুইদিন আগে বাসের সূচি এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় রাজধানী ছাড়তে যাওয়া মানুষজনের ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে চরম ভোগান্তির। অন্যদিকে ঈদের ট্রেনের সূচিতেও বিপর্যয় ঘটেছে। উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের ট্রেনগুলো ৫ থেকে ১২ ঘণ্টা লেটে চলছে বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলগামী ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাওয়া তো দূরে থাক, সঠিক সময়ে কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছাতে পারছে না। রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬ টায় ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় ছিলো। কিন্তু ট্রেনটি কমলাপুরে এসে পৌঁছায় বেলা সোয়া ১০ টারও পরে। ছেড়ে যাওয়ার সম্ভব্য সময় দেয়া হয়েছিলো ১০টা ৪০ মিনিট। তারও ৫ মিনিট পরে ছেড়ে যায় বেলা পৌনে ১১ টায়। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট দেরিতে এ ট্রেনটি ছেড়ে যায়।

চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮ টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে ছাড়া হয় বেলা সাড়ে ১২টার পর।

রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯ টায় ছাড়ার কথা থাকলেও বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেনি। দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস বেশ দেরিতে ছেড়ে গেছে।

নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কোনো ট্রেন আসার সাথে সাথে শুরু হয় ট্রেনে ওঠার যুদ্ধ। ভেতরে তো দূরের কথা ছাদেও জায়গা থাকছে না।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ‘পথে যাত্রী নামতে দেরি হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিটি স্টেশনে উঠানামা করতে ২ মিনিট অপেক্ষা করার কথা সেখানে ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই জন্য ঢাকা আসতেও দেরি হচ্ছে। যে ট্রেনগুলো পৌঁছাতে দেরি করছে, সেই ট্রেনগুলোর ছেড়ে যেতে দেরি হচ্ছে।’

ট্রেনের সময়সূচী বিপর্যয়ের অজুহাত হিসেবে, শুক্রবারের বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব স্টেশনে রেলের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাকে দায়ী করলেন কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শুক্রবার সুন্দরবন এক্সপ্রেসটি বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বে লাইনচ্যুত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেন ছয় থেকে আট ঘণ্টা বিলম্বে আসছে।এছাড়া যাত্রীদের রেলের শিডিউল জেনে স্টেশনে আসার পরামর্শ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে রাজধানীর প্রধান দুটি টার্মিনাল- মহাখালী ও গাবতলীতে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাস যাত্রীদের। এই দুই টার্মিনাল থেকে মূলত উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের গাড়িগুলো চলাচল করে।

বিভিন্ন বাস কোম্পানির কর্মীরা বলছেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো যানজটে পড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতেই কয়েক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। ফলে ফিরতি পথে যানজট না থাকলেও সেসব বাস ঢাকায় আসতে সময় লাগছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্লা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে।

তীব্র যানজটে দীর্ঘ সময় রাস্তায় থেকে ক্লান্ত চালক-হেলপাররাও। অনেকের মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে পথেই। যে কারণে অনেক গাড়ির সঠিক অবস্থানও নিশ্চিত হতে পারছে না কাউন্টারগুলো। শুক্রবার রাতের গাড়ি রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে শনিবার সকালে। সকাল ও দুপুরের গাড়ির শিডিউল পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরেরগুলোর ভাগ্যে কী আছে কেউ বলতে পারছেন না।

সকালে ছেড়ে যাওয়া বাসের টিকিটের গায়ে লেখা ‘নৈশ কোচ’। কাউন্টার থেকেও ঘোষণা আসছে রংপুরের নৈশ কোচের যাত্রীদের আসন নিতে বলা হচ্ছে। একজন তো মজা করে বলে বসলেন, এখন দিনে চলছে নৈশ কোচ!

ভোগান্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন তারা। এমডি হাসান তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘ঈদের আগে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। আজ শনিবার মহাসড়কটিতে যানজট প্রায় ৭০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। যানজটের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভ করছেন যাত্রীরা।’

‘প্রতি বছরই আমাদেরকে একই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার বা কর্তাব্যক্তিরা কি এসব দেখে না? কেউ কি বলতে পারেন, এই ভোগান্তির শেষ কোথায় ?’ – আবু নোমানের প্রশ্ন।

জাহিদুর রহমান লিখেন, ‘ঈদের সময় ট্রেনের ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীদের গলা কাটছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা, তীব্র যানজট; দেশে কি এগুলো দেখার কেউ নেই?’

এদিকে আজ দুপুরে ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহাসড়কে ধীরগতি তবে তীব্র যানজট নেই।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *