হানাদার মুক্ত মানিকগঞ্জ শহরে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

জাতীয় জীবন-যাপন

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম আরজু : ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারফিও জারি করে আমরা ক্যাম্পে ফিরার সিদ্ধান্ত নেই। ফেরার পথে আমরা শহরের পাক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ দালালদের বাড়িতে রেইড দিয়ে চার জনকে আটক করতে সক্ষম হ ই। আটককৃতদের নিয়ে বারাহিরচর নূর মোহাম্মদ মোল্লার বাড়িতে ক্যাম্পে ফিরে আসি। ১৫ ডিসেম্বর পলায়নরত পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বারবারিয়া বাথুলী কালামপুর এলাকায় সারাদিন ব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হ ই। বাথুলীতে আমাদের অনেক প্রিয় ওহাব ভাই পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।


বিজ্ঞাপন

১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের বাহিনী এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বিজয় মিছিল সহকারে ক্যাপ্টেন হালিমের বাসভবনের সামনে সমবেত হয়ে ক্যাপ্টেন হালিম কে সালাম দেই। ক্যাপ্টেন হালিম আমাদের মানিকগঞ্জ সদর থানার দায়িত্ব দিয়ে থানায় অবস্থান করার নির্দেশ দিলে আমরা থানায় অবস্থান নেই এবং থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
মফিজুল ইসলাম খান কামাল বেসামরিক প্রশাসনের ক্ষমতা নিয়ে এসডিওর আসন দখল করে কাজ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজাকার দালাল দুস্কৃতিকারীদের গ্ৰেফতার করে শহরে আনতে শুরু করে। গ্ৰেফতারকৃতদের হাজতে ঢুকানো,হিসাব রাখার জন্য সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরীকে কোর্ট দারোগার দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি আনোয়ার ভাইর সাথে প্রতিদিন অফিসিয়াল কাজে সহযোগিতা করেছি। হাজত ভরে গেলে এবং মুক্তিযোদ্ধারা রাতে হাজত থেকে বন্দী বের করে বিনা বিচারে হত্যা করতে শুরু করায় আটক বন্দীদের ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দিতে সিদ্ধান্ত হয়। আমি তিন কিস্তিতে তালিকা করে গাড়িতে করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী পৌঁছে দিয়েছি। কারাগারে পরবর্তিতে কেউ ডকুমেন্টস নষ্ট না করে থাকলে আটককৃতদের তালিকা জেলখানায় খুঁজে পাওয়া যাবে। তাহলে মানিকগঞ্জ জেলার আটককৃত দালালদের তালিকা সরকার প্রকাশ করতে পারবে। বিজয় মেলা শুরু করার পর অনেক বার এ কথা উচ্চারণ করেছি, কিন্তু প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হয় নি।
ক্যাপ্টেন হালিমের মুক্তি বাহিনী মানিকগঞ্জ মডেল হাইস্কুল, আমরা সূবেদার আঃ হক এর বাহিনী মানিকগঞ্জ থানায়,তোবারক হোসেন লুডুর বাহিনী মানিকগঞ্জ হাইস্কুল এবং কামাল ভাইয়ের মুজীব বাহিনী স্টেডিয়াম সংলগ্ন ডাক বাংলায় ক্যাম্প স্থাপন করে। উত্তেজনায় রাতে বিভিন্ন ক্যাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রাশ ফায়ার চলতো।

👁️ 11 News Views