একা হলে হারি, এক হলে পারি, রেকর্ড করি!

বিবিধ

বেলাল হোসেন চৌধুরী : ‘বৃত্তের বাইরে, স্রোতের বিপরীতে কর্মবিলাস’! সাতচল্লিশটি জুম সভার প্রতিপাদ্য। বছরব্যাপী দেড়শ কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রশিক্ষণ


বিজ্ঞাপন

করোনাকে হারানো কঠিন! ভয়কে জয় করে এগুতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদেরও জীবনের ঝুঁকি ছিল। চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের এখনো আছে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার এই সময় কিছু শ্লোগানও ছিল!

বছরের শুরুতে কমিশনারদের রাজস্ব সভায় এনবিআরের মাননীয় চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম ২০২০-২১ অর্থবছরকে রাজস্বের বছর ঘোষণা দেন। মুজিববর্ষ ও মহামারীতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য সবাইকে আহবান জানান এবং বছরব্যাপী সার্বক্ষণিক তদারকি অব্যাহত রাখেন।

কমিশনারেটের দেড়শ ভ্যাট সংগ্রাহক ছয় জেলায় ১৬ সার্কেলে ভাগ হয়ে! মন মনন মেধায় উদ্যমে কাজ করলে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। এগিয়েছে টীম কুমিল্লা কাস্টমস। এগিয়েছে দেশ।

মহামারী মহামন্দার নিদানকালে কর্মঠ কুমিল্লা টীমের বহু অর্জন। সাময়িক আদায়েই (১৬জুলাই চুড়ান্ত হবে) হয়েছে এ যাবতকালের আরো কিছু রেকর্ড: এক বছরের সর্বোচ্চ: এ বছর ৩১৫০ কোটি টাকা (গত বছরে ২৮৮৩ কোটি) এক মাসে সর্বোচ্চ: এ বছর জুনে আদায় ৫১৬ কোটি টাকা (গত জুনে আদায় ছিল ৩১৫ কোটি) এবছর জুনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন: লক্ষ্যমাত্রা ৩৬৯ কোটি টাকা মাসিক প্রবৃদ্ধি : গত জুনের আদায়ের ওপর ৬৪% ও লক্ষ্যমাত্রার ওপর প্রবৃদ্ধি : ৪১% (সারা দেশে সর্বোচ্চ)

টানা দশবার দেশ সেরা : অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায়

মে মাসেও কুমিল্লা ছিল তের শতাংশ পিছিয়ে। অভাবিত এ সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দেড় শতাধিক কর্মকর্তার সাফল্য-বিপ্লবের নানান আনকোরা গল্প। রাজস্ব কর্মকর্তা আবুতাহের জানতে পারেন বকেয়া টাকা দেয়ার মতো ইটভাটা মালিকের সামর্থ্য নেই। তিনি পরিচিত একজনের কাছে পরবর্তী সিজনের ইট ৯লক্ষ টাকা অগ্রিম বিক্রয় করিয়ে দেন। বিক্রিত অর্থ ট্রেজারিতে জমা করান।

আরেক রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ২৭বছরের পুরনো বকেয়া নিয়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে দেখা করেন। তাঁর সন্তানদের বোঝান। মরহুমের রেখে যাওয়া দীর্ঘদিনের পুরনো বকেয়া সাড়ে ৯লক্ষ টাকা আদায় করেন। এআরও সাইফুল দীর্ঘ অপেক্ষা ও অনুমতির পর চাঁদপুর জেলখানার জেলারের সাথে সাক্ষাত করে ৭লক্ষ টাকা বকেয়া আদায় করেন।

এআরও হাবিবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষের সাথে দেখা করতে আধাবেলা অপেক্ষা করেন। পরিচিত একজনকে খুঁজে বের করে শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষকে বুঝিয়ে বকেয়া উৎসে ভ্যাট আদায় করেন। কুমিল্লায় এমন অসংখ্য চমকপ্রদ গল্পের জন্ম গত এক বছরে।

করোনাবর্ষে আগের বছরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই কঠিন। সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬৪%! মে পর্যন্ত টীম সদস্যরা চেষ্টা করেও যেন ফল আসছিল না। সারা বছরের চেষ্টার ফল পেকে ধরা দিল জুন-এ।

ভয়কে জয় করে অর্জনকে এ পর্যায়ে নেয়া সহজ ছিল না। একটি ব্যতিক্রমী পরিশ্রমী কর্মপ্রবণ উদ্যমী দলের পক্ষে এমন অর্জন সম্ভব। অর্থবছরের প্রথম থেকে দেড়শ সদস্যের টীমকে ৪৭টি জুম সভায় প্রশিক্ষিত ও নিবিড় মনিটরিং করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত টীমের সদস্যরা করদাতার দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা দিয়ে রাজস্ব নিশ্চিত করেছে। কমিশনারেটের অধীন ১৬টি সার্কেল ও ০৬টি বিভাগীয় টীমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মাঠে অফিসে থেকে সর্বাত্মক কাজ করেছে।

সার্কেলগুলোর মধ্যে আদায়ের পরিমাণ ও পরিমাপ অনুযায়ী শতাংশের ভিত্তিতে কৃতীদের লাল-হলুদ-সবুজে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকে প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যকে পেছনে ফেলার সুস্থ প্রতিযোগিতা করেছে। গৌরবের অবস্থানে তালিকার ওপরে আসতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। কর্মপ্রবণ এ প্রতিযোগিতা কুমিল্লার অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারণ।

সর্বোপরি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ টীম সদস্যদের পরিশ্রম ও সাফল্যের পিপাসা কুমিল্লা কমিশনারেটকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও অনলাইন রিটার্ন জমায় উপর্যুপরি সাফল্য এনে দিয়েছে।

এ অর্জন টীমের সবার সমন্বিত ঐক্যের! ধন্যবাদ অজেয় জয়ী কুমিল্লা কাস্টমস টীম! কৃতজ্ঞতা বৃহত্তর কুমিল্লা নোয়াখালীর ছয় জেলার সকল করদাতা অংশীজন, গণমাধ্যম সদস্য ও আমার অনুপ্রেরণার অনুসারীরা। সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা, চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও টীম এনবিআর!

নেলসন ম্যান্ডেলা বলতেন ‘It always seems impossible until it’s done’! কুমিল্লায় বছরের শুরুর অসম্ভবতা, শেষ মাসে সম্ভব হয়। আমরা চাইলেই হয়, পাওয়ার মতো করে চাইতে হয়।