একমাত্র নারী কাউন্সিলর ঢাবি শিক্ষার্থী সাহানা

রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে কাউন্সিলর পদে জিতেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সাহানা আক্তার। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মিলিয়ে মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী।
নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সমান তালে লড়াইয়ে এ জয় সাধারণ ও মেহনতি মানুষের জয় বলেই মনে করছেন সাহানা আক্তার। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে কিশোরী ও নারীদের শতভাগ ভোটে তার এ জয় নিশ্চিত হয়েছে বলেও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওয়ার্ডবাসীকে।
নির্বাচনে সাহানার প্রতীক ছিলো রেডিও। তিনি মোট ৩ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাসির আহম্মদ ভুইয়া (টিফিন ক্যারিয়ার মার্কা) পেয়েছেন ২ হাজার ২৫০ ভোট। সাহানা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। এর আগে তিনি ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এলএলএম সম্পন্ন করেছেন। তিনি মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত।
মাত্র সাত বছর বয়স থেকে সাহানা তার বাবা আলহাজ সাইদুর রহমান সহিদকে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছেন। এ এলাকায় ২৫ বছর কমিশনার ছিলেন তার বাবা। দীর্ঘ সময়জুড়ে দায়িত্ব পালনকালে বাবাকে সালিশি বৈঠকের পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত মানুষের সেবায় কাজ করতে দেখেছেন। এমনকি এলাকার অসহায় পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ায় আর্থিক সহায়তা করতেও দেখেছেন। সেই ছোটবেলা থেকেই বাবার এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড অনুপ্রাণিত করেছে তাকে। রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না মোটেও। তবে ধীরে ধীরে মনের মাঝে লালিত স্বপ্ন বিস্তৃতি লাভ করে। এক সময় এলাকার মুরুব্বি ও তরুণদের অনুপ্রেরণায় নির্বাচনের মাঠে নামেন সাহানা। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরেও মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য তার তিন ভাইবোন সাইফুর রহমান, সাজ্জাদুর রহমান ও শিলা আক্তারকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আলহাজ সাইদুর রহমান সহিদ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন।
সাহানা বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম পাস করব। যার কাছেই গিয়েছি, তিনি আমাকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে তরুণ ভোটার ও নারীদের আশ্বাস আমাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এর পরও ভয় ছিল। শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী আমাকে ভোট দিয়ে পাস করানোয় আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা যেমন আমাকে জয়ী করেছেন, তেমনি আমিও তাদের জন্য কাজ করে যাব। প্রথমেই আমার কাজ হবে এলাকাকে মাদকমুক্ত করা। রাস্তার অলিগলিতে মেয়েদের ইভটিজিং প্রতিরোধ করার দায়িত্বও আমার। তাই এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে এ কাজে হাত দেব আমি। আশা করি, সবাই আমাকে সাপোর্ট করবেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য প্রার্থীরা আমার মনোবল হারাতে পোস্টার ছিঁড়েছে। রাতে দেয়ালে স্টিকার লাগিয়েছি; সকালে গিয়েই দেখতাম ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনের আগের রাতেও প্রশাসন দ্বারা আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু এতে আমার মনের শক্তি আরও বেড়েছে।
কাউন্সিলরের কঠিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখাপাড়া চালিয়ে যেতে চান সাহান। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা চালিয়ে যাব। কাউন্সিলর হওয়ার কারণে এখন আমাকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। সেটা মেনে নিয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম, বলছিলেন সাহানা।
নারীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে সাহানা বলেন, নারীরা এখন আর আগের অবস্থানে নেই। দিন দিন উন্নতি করছে তারা। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী। দেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন সফলতার সঙ্গে। এ কারণে ও তার বাবার মতো মানুষের সেবায় বাকিটা জীবন পার করবেন বলে জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন
👁️ 21 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *